১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০১৬
বারান্দাজুড়ে লোহার বেষ্টনী। প্রবেশপথ লোহার বেড়ায় বাঁশ ও কাটা গাছের ডালপালা দিয়ে বন্ধ। এরপরও দেখা গেল বারান্দায় গরু, ছাগলের অবাধ বিচরণ। কক্ষগুলোর দরজায় তালা। কিন্তু কিছু জানালা খোলা, কোনোটির কাচ ভাঙা। কক্ষের ভেতরে কী আছে না আছে, জানালার ভাঙা অংশ দিয়ে এক নজরে সবই দেখা যায়। আসবাবপত্রগুলো সবই নতুন, ব্যবহার না হওয়ায় সেখানে মাকড়সার জাল বিস্তার করেছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের পুনর্নির্মাণ করা ছাত্রাবাসের এ অবস্থা। উদ্বোধনের প্রায় ২০ মাস পরও চালু না হওয়ায় নতুন ছাত্রাবাসকে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ বলে অভিহিত করছিলেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে সেই ছাত্রাবাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে গত শনিবার ছাত্রাবাসটি গ্রহণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ চন্দ্র গত রোববার জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রাবাসে আবাসিক শিক্ষার্থী নিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আর ঈদের পরপরই ছাত্রাবাস চালু করা হবে।
সিলেট নগরের টিলাগড়ে টিলাঘেরা এলাকায় এমসি কলেজের অবস্থান। শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র রায়ের পিতামহ মুরারিচাঁদের (এমসি) নামানুসারে ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এমসি কলেজ। ১৯২১ সালে কলেজের পাশে নির্মিত হয় ছাত্রাবাস। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যশৈলীর ‘সেমিপাকা আসাম’ কাঠামোয় টিন, কাঠ আর আধা পাকা দেয়ালে নির্মিত ছাত্রাবাস ভবনগুলো ছিল দর্শনীয়। ২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে আগুনে পোড়ানো হয় ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ।
এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। চার দিন পর ১২ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি ছাত্র থাকাকালে ১৯৬২ সালে ওই ছাত্রাবাসের প্রথম ব্লকের একটি কক্ষে থাকতেন। পরিদর্শনের সময় তিনি ওই কক্ষে ছুটে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের পক্ষ থেকে তখন দাবি উঠেছিল আগের কাঠামোয় পুনর্নির্মাণের।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আগুনে পোড়া তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। ১৪ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রাবাস উদ্বোধন করেছিলেন।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের সব কটি কক্ষ বন্ধ থাকায় ভেতরে আসবাবপত্রে মাকড়সার জাল বিস্তার করেছে। কক্ষগুলোর দরজা ও জানালার অন্তত ১৩টি স্থানে ছিল ঢিল ছোড়ার চিহ্ন। রাতে মাদকসেবীদের আনাগোনা চলে সেখানে।
অব্যবহৃত থাকায় এমন অবস্থা হয়েছিল জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, ছাত্রাবাসটি উদ্বোধন করা হলেও বসবাসের উপযোগী করার কিছু কাজ বাকি ছিল। ঈদের পরপরই নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষ করে আবাসিক শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। ছাত্রাবাসের ছয়টি ব্লকে মোট ২৪৪ জন ছাত্রকে আবাসনের সুযোগ দেওয়া হবে।
প্রায় ২০ মাস অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণ সম্পর্কে ছাত্রাবাস নির্মাণ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম বলেন, গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসটি চালু করতে পারছিল না কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গ্যাস বিল পরিশোধ করায় এটি চালু হচ্ছে।
আগুনে ভস্মীভূত হওয়া এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল। ছাত্রাবাসের দখল নিতে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে শিবিরকে ছাত্রাবাস ছাড়া করতেই ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়া হয়। ছাত্রাবাস যখন পুড়ছিল, তখন পাশেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিবির খেদাও দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। এ রকম একটি ছবি ২০১২ সালের ১৫ জুলাই স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যেমে ছাপা হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীরাই ছাত্রাবাসে আগুন দিয়েছে,এমন অভিযোগ উঠলে এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রায় দেড় মাস তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৯ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রাবাসের আগুন দেওয়ার জন্য ‘ছাত্রলীগের বহিরাগতরা দায়ী’ বলে উল্লেখ করা হয়। তখন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির ভাষ্য ছিল, যেহেতু এরা বহিরাগত, তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
ছাত্রাবাস পুনর্নির্মাণ শেষে উদ্বোধনের দিন এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এবার বহিরাগতরা যাতে ছাত্রাবাসে স্থান না পায়, সে লক্ষ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছু নিয়মকানুন চালু করবে। পাশাপাশি মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D