আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ: জন্মদিনে প্রশ্ন কতটা বদলেছে আওয়ামী লীগ?

প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৬

আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ: জন্মদিনে প্রশ্ন কতটা বদলেছে আওয়ামী লীগ?

pirউপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩শে জুন বৃহস্পতিবার। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে দলটির জন্ম। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন টাঈাইলের শামসুল হক। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শোষণনীতির বিরুদ্ধে অগ্রসর রাজনৈতিক মনস্ক দূরদর্শী চিন্তাশীল নেতৃত্বের হাত ধরে এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। কারা নির্যাতন আর ব্যক্তিগত বেদনায় তাড়িত টাঈাইল উপনির্বাচনে বিজয়ী শামসুল হক নির্বাসিত হয়ে নিঃসঙ্গ করুণ মৃত্যুবরণ করেন। আর ৫৭ সালে কাগমাই সম্মেলনে মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটা দিলে গণতন্ত্রের মানসপুত্র  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কার্যত এই দলটির হাল ধরেন। মওলানা আব্দুল রশিদ তর্কবাগীশের সঙ্গে প্রথমে দলটির সাধারণ সম্পাদক হলেও পরবর্তীতে তিনিই হন সভাপতি। আর তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ। পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার আদায় ও পশ্চিমা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে  শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন পূর্ব বাংলার অভিসংবাদিত নেতা। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের স্টিম রোলার ও কারানির্যাতনের ভেতর দিয়ে  আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে নানা ভাঙাগড়া ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তুলতে থাকেন। ’৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অবিস্মরণীয় বিজয়, মুসলিম লীগের  শোচনীয় পরাজয় পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকেই পূর্ব বাংলার জনগণের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন মহান নেতা হিসেবে কালের যাত্রাপথে আবির্ভূত করে। জন্মলগ্ন  থেকে দলটির মুখপাত্র দৈনিক ইত্তেফাক ও তার সাহসী সম্পাদক  তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সাহসী ভূমিকা ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখে। ’৬৩ সালে বৈরুতের হোটেলে  সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু ও সামরিক শাসনের চেহারা কালো দৈত্যের মতো এগিয়ে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উত্থান-পতন আর কারাজীবনের ভেতর আওয়ামী লীগ নতুন করে যেমন সংগঠিত হতে থাকে  তেমনি তার হাত ধরে ’৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ওপর ভর করে ৬ দফার সূচনা ঘটে। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে হাঁটতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটাতে ইত্তেফাকের ভূমিকা ও তার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সাহসী লেখনী অনন্য সাধারণ ভূমিকা রাখে। আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ফাঁসিতে  ঝোলাতে গিয়ে বাঙালি জাতিকে একদিকে সংগ্রামমুখর ঐক্যের কাফেলায় মিলিত করে, অন্যদিকে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গগণচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ’৬৯ সালের মানিক মিয়ার আকস্মিক মৃত্যু হতাশার কালো ছায়া এনে দিলেও ততদিনে পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিকল্প জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন জনগণের একক  নেতা। ’৭০ সালের  এক ব্যক্তি এক  ভোট নীতিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ জয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাংবিধানিকভাবে ব্যালট বিপ্লবে অভিষিক্ত নেতা হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেনি, তার আওয়ামী লীগকেও নৌকার বিশাল বিজয় এনে  দেয় রাষ্ট্র পরিচালনার স্বীকৃতি। এ  দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সুমহান মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার নেতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে। এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পরতে পরতে আওয়ামী লীগ নামের দলটির নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জীবন- যৌবন আত্মাহুতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসই নয়, রাজনৈতিক ইতিহাসও লতা-পাতায় জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে রাষ্ট্র পরিচালনায়  নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের মানুষের ঘরে খাবার ছিল না, পরনে কাপড় ছিল না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো সবকিছু ছিল ধ্বংসপ্রায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে একদিকে ছিল মানুষের নিরাপদ জীবনের লড়াই অন্যদিকে ছিল সরকারি দলের একাংশের ক্ষমতার দম্ভ, উন্নাসিকতা অন্যদিকে ছিল সরকার উৎখাতের উগ্র হঠকারী রাজনীতি, কোথাও বা ছিল শ্রেণিশত্রু খতমের নামে মানুষ হত্যা ও নাশকতার অন্ধকার পথ। সদ্য স্বাধীন  দেশে অস্থির অশান্ত সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ছিল গভীর। দুই সুপার পাওয়ারের ঠাণ্ডা লড়াইয়ে বিশ্বায়নের সেই রাজনীতির যাত্রাপথে মস্কোর প্রেসক্রিপশনে তাদের অনুসারী বামপন্থিদের সঙ্গে নিয়ে আজীবন সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে লড়াই সংগ্রাম করে  আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে একদলীয় বাকশাল গঠন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি  ঘোষণা করেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পথ নেন।  ততদিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এতটাই ঘনীভূত যে ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাতে জাতির ইতিহাসের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িটিতে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। পরিবার পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খুনি  মোশ্‌তাক চক্রের সঙ্গে ভয়ে নির্ভয়ে যে কারণেই হোক একদল যোগ দেন। খুনি মোশ্‌তাক থেকে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার স্টিম  রোলার চলে আওয়ামী লীগ নামক দলটির ওপর। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে ১৭ হাজার কর্মী যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের নেতৃত্বে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারা নির্যাতন ভোগ করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দলের প্রথম সারির যে পাঁচ  নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তাদের একজন খোন্দকার মোশ্‌তাক আহমেদ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকতার পথ নিয়ে খুনি চক্রের সঙ্গে বঙ্গভবনে রক্তের ওপর দিয়ে রাষ্ট্রপতির আসন নেন। কালো মুজিব  কোটের জায়গায় মোশ্‌তাক টুপি চালানোর চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর লাশটি পর্যন্ত খুনি চক্র কঠোর প্রহরায় টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে দাফন করে। আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাকি চার  নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবন দেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জীবন দেন মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি। বাকি দুই প্রধান ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক যথাক্রমে আব্দুর রাজ্জাক,  তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী কারা নির্যাতনের শিকার হন।  সেই সময় খুনিরা চোখ বেঁধে  তোফায়েল আহমেদকে শারীরিকভাবে অকথ্য নির্যাতন করেছিল। সারা দেশের কারাগার ছিল আওয়ামী লীগ  নেতাকর্মীদের ঠিকানা। যারা বাইরে ছিলেন, তারা ছিলেন পলাতক। এ  দেশের রাজনীতির ইতিহাসে যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নামের দলটি তৃণমূল বিস্তৃৃত গণসংগঠনেই পরিণত হয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল, সেই সংগঠন জাতির মহান নেতার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে প্রতিরোধের ডাক দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। দলটির জন্য এটি বেদনার ও ব্যর্থতার বাস্তবতামাত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের  পরবর্তী সেই দুঃসময়ে  সৈয়দা জোহুরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে আওয়ামী লীগ নতুন যাত্রার সূচনা করেছিল। ’৭৮ সালের কারামুক্তির পর আব্দুর রাজ্জাক বের হয়ে এলে তিনি হয়ে ওঠেন দলের মধ্যমণি। দু-দুবার কাউন্সিলে নির্বাচিত  দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীরা আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির পথে আদর্শিক সংগ্রামের শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিজয় পতাকা ওড়ে। ’৮১ সালের কাউন্সিলে দলীয়  নেতৃত্বের কোন্দলে ভাঙনের মুখে পতিত আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নির্বাচিত হন ভারতে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে দলের হাল ধরে গণতন্ত্রের সংগ্রামের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর পর তিনিই দ্বিতীয় দফা আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন। জীবনে ২১ বারের ওপর মৃত্যুর মুখোমুখি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে তিন দফা ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। প্রথমবার ’৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার দিয়ে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিলেও দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে সমাবেশে তাকে বর্বরোচিত  গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আইভি রহমানসহ দলের ২২ জন নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মী আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন। বিএনপির একতরফা, একগুঁয়ে সংঘাতের নির্বাচনের পথে জনসমর্থন নিয়ে আসা ওয়ান ইলেভেন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস, দেশ থেকে বিদায় অবশেষে কারাগারে নিলেও বাস্তবতা হচ্ছে দলের কর্মীরা তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য দেখালেও নেতাদের একাংশ যেমন তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছেন তেমনি আরেকাংশ প্রতিবাদ প্রতিরোধ কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীলগ্নে দলটির দিকে তাকালে নিশ্চিত হওয়া যায় দলে শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজনীতি ও শাসন পরিচালনায় এতটাই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সঞ্চয় করেছেন যে নিজ  যোগ্যতায় একক ক্যারিশমায় দলকে ও  জোটকে ক্ষমতায় ফিরে আনেননি সর্বত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আত্ম-প্রত্যয়ী হয়ে ছুটছেন যে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে-ময়দানে দাঁড়াতেই পারছে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারই করেননি অনেক সুপার পাওয়ারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি দেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের  দেশেই পরিণত করেননি বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড  চলছে  দেশজুড়ে। সমুদ্র বিজয় থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের ঘটনাই  ঘটাননি, বিশ্ব নেতৃত্বে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করেছেন। নিজের আসন এখন বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝখানে  রয়েছে। একটি অন্ধকার শক্তির ষড়যন্ত্রের বুলেট শেখ হাসিনাকে তাড়া করলেও তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃঢ়তা নিয়ে ছুটে চলছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ হাসিনাই  সেই সফল নেত্রী যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায়।  শেখ হাসিনাই সেই সফল নেতা যিনি ৩৬ বছর ধরে দলের সভাপতি আছেন।
যে নেত্রী ও দলের এত সাফল্য সেই দলের কাছে ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লগ্নে কিছু প্রশ্ন রাখতেই হয়। যে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্ব আজীবন মানুষকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে ডেকেছে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো,  ভোটের অধিকারের জন্য আত্মদানের মহিমায় অমরত্ব শিখিয়েছে সেই দল তার অভ্যন্তরে ও দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার বর্তমানে কতটা দিয়েছে? যে আওয়ামী লীগ আজীবন কার্যকর সংসদ ও শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা শুনিয়েছে সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়  থেকে আজ সংসদকে কতটা কার্যকর করেছে? কতটাই বা শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব বা কর্মকাণ্ড  রাখার সুযোগ দিয়েছে? যে আওয়ামী লীগ  আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে ক্ষমতায় থেকে তারা আজ কতটা দুর্নীতির লাগাম টেনেছে? ব্যাংকিং সেক্টরে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ার বাজারে রিক্ত নিঃস্ব হয়েছে। এই লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার নজির কতটা দেখিয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেছেন- ২০১৩ সাল থেকে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কারা পাচার করেছে, কিভাবে করেছে, এরা কারা তার তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ তার সরকার কতটা করেছে? দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ তবু কেন ২১শের গ্রেনেড হামলা থেকে কিবরিয়া হত্যার মতো বহুল আলোচিত ঘটনাগুলোর বিচার শেষ হয় না? দেশে উন্নয়ন চলছে তাই বলে সুশাসন কি এসেছে? নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি তদবির, সন্ত্রাস থেকে দলকে কতটা দূরে রেখেছে? মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষমতা আসার পর অর্থ-সম্পদ কতটা বেড়েছে তার হিসাব কি নিতে পেরেছে? যে আওয়ামী লীগ আজীবন ত্যাগী পোড় খাওয়া নেতাকর্মীর দল  বলে গৌরবের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করতো সেই দল ইউপি নির্বাচনের মতো তৃণমূল  ভোটকে কিভাবে মনোনয়ন বাণিজ্যের পথে রক্তাক্ত করে? ৬৮তম জন্মদিনে  দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে এই প্রশ্ন  রাখাই যায়, মূল্যবোধ ও আদর্শের রাজনীতির ঐতিহ্য আজ কতটা ধরে  রেখেছে দলটি? ভোট ও গণতন্ত্রের অধিকারই বা কতটা রয়েছে দেশে? প্রশাসন দলীয় প্রভাবমুক্ত রেখে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কতটাই বা করছে রাষ্ট্র শাসন? বঙ্গবন্ধু তার শাসনামলে মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- আপনারা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ুন। সামাজিকভাবে বয়কট করুন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। প্রশ্ন থেকেই যায় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করতে আওয়ামী লীগ কতটা পেরেছে? যে আওয়ামী লীগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য, শোষণমুক্ত সমাজের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি তা দিতে পেরেছে? জন্মদিনে প্রশ্ন উঠতেই পারে আজকের আওয়ামী লীগ কি বদলে গেছে? গণমানুষের রাজনীতি গণমুখী চরিত্র কি হারিয়ে ফেলেছে? প্রশ্ন তোলাই যায় আজকের আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতি থেকে দূরে সরেছে না  সেখানেই আছে? আজকের আওয়ামী লীগে হাইব্রিড সুবিধাবাদীদের কদর বাড়ছে কেন? ’৭৫-এর পর আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনে ব্যর্থ হয়েছে। কাল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো শক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে বিরোধী দলের রাজনীতিতে ত্যাগের পথ কতটা পাড়ি দিতে পারবে? পারবে তো?
লেখক, প্রধান সম্পাদক: পূর্বপশ্চিমবিডি.কম

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল