আখাউড়া-সিলেট রেলপথ: লাউয়াছড়ার পাহাড়ি এলাকায় ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৬

আখাউড়া-সিলেট রেলপথ: লাউয়াছড়ার পাহাড়ি এলাকায় ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

sylhet akura ralpotআখাউড়া-সিলেট রেলপথের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি পথে গাছ পড়ে থাকায় এবং ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধস ও রেলসেতু দেবে ট্রেন চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া উদ্যান এলাকার টিলার কারণেও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টিতে ওই পথ পিচ্ছিল থাকায় ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে।
মৌলভীবাজারের শমশেরনগর স্টেশনমাস্টার আবদুল আজিজ বলেন, ভানুগাছ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মাঝামাঝি লাউয়াছড়া উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় চারটি স্থানের টিলা বেশ উঁচু। এসব টিলা অতিক্রম করতে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের বেশ সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে টিলা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রেনগুলো পাহাড়ে আটকা পড়ে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় হলে ভূমিধস ও গাছ পড়েও রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির দিনে উদ্যানের পাহাড়ি এলাকার রেলপথে ট্রেন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ওই পথে প্রতিদিন সকালে সিলেট থেকে ঢাকার পথে দুটি, বিকেলে একটি, ঢাকা থেকে সিলেটের পথে দুপুরে একটি, সন্ধ্যায় একটি ও রাতে একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। প্রতি রাতে ঢাকা-সিলেট পথে দুই দিক থেকে দুটি আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন চট্টগ্রামের পথে দুপুরে একটি ও রাতে একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। আবার ফিরতি পথে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের পথে দিনে একটি ও রাতে একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া প্রতি রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে একটি করে মেইল ট্রেন চলাচল করে। তা ছাড়া আখাউড়া থেকে সিলেটের পথে একটি ডেমু ও একটি মেইল ট্রেন চলে। এই ১৬টি ট্রেনে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ হাজার যাত্রী চলাচল করেন।
কমলগঞ্জের শমশেরনগর ও ভানুগাছ স্টেশন এবং রেলওয়ের শ্রীমঙ্গল গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল রাতে ঝড়ে উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় কয়েকটি স্থানে রেলপথের ওপর বড় গাছ ভেঙে পড়লে রাতে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন সারা রাত পাহাড়ে আটকে থাকে। পরদিন গাছ কেটে সরিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এর দুই দিন আগে ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে উদ্যানের প্রবেশপথে জানকিছড়া রেলসেতুর পিলার দেবে গিয়ে ট্রেন চলাচল ১৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
গত ১২ মার্চ রাত ১১টায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সার বহনকারী একটি ট্রেন দিনাজপুরের শিবপুর যাওয়ার পথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকার টিলা উঠতে না পেরে আটকা পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা পর আবারও ট্রেনটিকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে এনে দ্রুতগতিতে উঠে টিলা অতিক্রম করে। পরদিন ১৩ মার্চ রোববার চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী ট্যাংকার নিয়ে একটি ট্রেন সিলেট যাওয়ার পথে পাহাড়ি এলাকার টিলা অতিক্রম করতে না পেরে পেছনে ফিরে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর লাইনের ওপর বালু ছিটিয়ে পেছন থেকে দ্রুত গতিতে এসে ট্রেনটি টিলা অতিক্রম করে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা থেকে সার বহনকারী গাইবান্ধাগামী একটি ট্রেনকে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া ও হবিগঞ্জের রশিদপুর পাহাড়ি এলাকার টিলা পারাপারে সাহায্য করার পর কুশিয়ারা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছিল।
শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ের গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আজম বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকার পথ পিচ্ছিল থাকায় ও ইঞ্জিন পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সার ও তেলের ট্যাংকারবাহী ট্রেন পাহাড়ে মাঝে মাঝে আটকা পড়ে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যানের চারটি টিলা কাটার বিষয়ে রেলের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথের একেবারে কাছে থাকা বড় গাছগুলো কাটার ব্যাপারে বন বিভাগের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অংশে গাছ কাটাও হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল