১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৬
ছেলে জঙ্গি হলেও তাদের ব্যাপারে মাথা ব্যাথা নেই পুলিশ-গোয়েন্দাদের সরকারী দলের লোক বলে কথা! সরকারী দলের লোক বলে কথা! তাই পার পেয়ে যাচ্ছেন। পুত্র জঙ্গি হলেও পুলিশ বা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হতে হয় না। এমনটাই ঘটেছে গুলশানে নিহত বন্দুকধারী রোহান ইমতিয়াজের পিতা ইমতিয়াজ বাবুলের বেলায়।
নিহত বাকি জঙ্গিদের বাবা-মা, ভাই-বোনসহ আত্মীয় স্বজন জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হলেও বাবুলকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। গত ১ জুলাই গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান বেকারী ও চিকেন রেষ্টুরেন্টে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বিদেশী নাগরিকসহ নিহত হয় ২৩ জন। হামলাকারী বন্দুকধারী নিহত হয় ৫ জন। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে মারা যায় সন্দেহভাজন একজন। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ জনে। নিহত হামলাকারীদের পাঁচজনের পরিচয়ই শনাক্ত হয়। এরা হলেন, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল।
আইএস’র নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাক এবং সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটএ এই পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছিলো। হাসপাতালে নিহত সন্দেহভাজন যুবকের নাম শাওন। সে ওই রেস্তোরাঁরই বাবুর্চি সহকারী ছিলো বলে জানা যায়। নিহতদের মধ্যে একজন হলো খায়রুল। খায়রুলের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ব্রিকুষ্টিয়া গ্রামে। তিনি ডিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে আলিম (এইচএসসি সমমান) পাস করে ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হন।
একই সঙ্গে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হয়েছিলেন বলে তার ভাই দাবি করেন। খায়রুলের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে স্থানীয় পুলিশ খায়রুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এমনকি ডিএনএ টেষ্টের জন্য খায়রুলের বাবা আবুল হোসেনকে ঢাকায় আনা হয়েছিলো বলে জানা যায়। নিহত অপর এক হামলাকারী হলো শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ।
শফিকুলের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডার বাড়ি ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ি গ্রামে। পরিবারের দাবি, শফিকুল ছয় মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের জন্য ‘তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বিদায় দেন। শফিকুলের বাবা বদিউজ্জামান (৫৫) ও বড় ভাই আসাদুল ইসলাম (৩২) দুজনই কৃষিশ্রমিক। ভাই আসাদুল ইসলাম বলেন, তার ভাই শফিকুল ধুনটের গোঁসাইবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও গোসাইবাড়ি ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন।
পরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদারী মাতব্বর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা তার চাকরি নেন। সর্বশেষ ডিসেম্বরে শফিকুল বাড়িতে আসেন। বেশ কিছুদিনের জন্য তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বিদায় নেন।
এরপর শফিকুল আর বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তার পরিচয় নিশ্চত হওয়ার পরে পুলিশ তার বাবা বদিউজ্জামানকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নিহত অপর একজন হলো, মীর সামিহ মোবাশ্বের। স্কলাসটিকা থেকে ও লেভেল পাস করেছে মীর সামিহ মোবাশ্বের। মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের ।শিক্ষক বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুবাশ্বের ‘এ’ লেভেল পরীার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হন বলে থানায় জিডি করা হয়। সে সময় সংবাদপত্রেও সেই খবর আসে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন মোবাশ্বেরের বাবা-মা।
কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে কয়েকজনের বেলায়। এরমধ্যে একজন রোহান ইমতিয়াজের বাবা বাবুল ইমতিয়াজ। রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইকিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি।
তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে পুলিশ তাকে কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ২০ বছর বয়সী রোহান স্কলাসটিকায় পড়ালেখা শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। তার মাও নামি ওই স্কুলের । পরিবারের অভিযোগ, জানুয়ারি থেকে রোহান নিখোঁজ, থানায় জিডিও হয়েছে। অপর একজন নিব্রাস ইসলাম। নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তিনি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্য ছিলেন।
ধনী পরিবারের সন্তান নিবরাস ইসলাম পড়েছেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। খরচের কারণে যেখানে পড়ার সুযোগ সব শ্রেণীর হয় না। মোনাশে ভালো না লাগায় দেশে ফিরে নিব্রাস ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়ারী আর উত্তরায় বাড়ি আছে তার ব্যবসায়ী বাবার। নিব্রাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপসচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী বলে জানা গেছে। ওই পরিবারের কাউকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানা যায়নি। এদিকে, গুলশান হামলার পরে আইএস-এর এক ভিডিওতে তিনজনকে দেখা যায় হুমকি দিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে এক জঙ্গির নাম হচ্ছে তাহমিদ রহমান শাফি।
তার বাবা শফিউর রহমান। তিনি সচিব, জনতার মঞ্চের নেতা ও নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। ৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের জন্য প্রশাসনের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জনতার মঞ্চ। জনতার মঞ্চের নেতৃত্বে সচিব শফিউর রহমানও ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি ওই সময় পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগ মতায় এসে তাকে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পরে সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) সচিব করেছিলো। চাকরির বয়স শেষে শফিউর রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনারও করেছিলো। যেহেতু এটি সাংবিধানিক পদ তাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট মতায় এসেও তাকে সরাতে পারেনি। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে আইএস’র নতুন ভিডিও বার্তা প্রকাশিত হলে তাহমিদের পরিচয় সনাক্ত করে তার পরিচিতজনরা।
জানা গেছে, তাহমিদ জনপ্রিয় রিয়েলিটি-শো ক্লোজআপ-ওয়ানের প্রতিযোগী ছিল। হুমকীদাতাদের মধ্যে আরেকজন সিটি ডেন্টাল কলেজের নাইন ব্যাচের ছাত্র আরাফাত বলে নিশ্চিত করেন পরিচিতজনেরা। তবে ফেসবুকেই আরাফাতকে কেউ কেউ তাওসিফ বলেও দাবি করেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকা বারিধারায় থাকেন সাফির পরিবার।
সাফি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করে একটি মোবাইল কোম্পানীতে চাকরী করতেন তিনি। সাফির পরিবারেরও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D