১লা জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৬
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে সিলেটে চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলা জমে ওঠার আগে মেলা নিয়েই ম্যালা অভিযোগ জমেছে। অভিযোগ আছে মেলার বৈধতা নিয়ে, অভিযোগ আছে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজার নিয়ে, অভিযোগ আছে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটানোরও। এতো অভিযোগ পাশে রেখে মেলা চলছে পুরোদমেই। এরই মাঝে হাইকোর্টের নির্দেশনা এসেছে মেলার কার্যক্রম স্থগিতের।
সিলেট শহরতলির বালুচরে শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত মাঠটি স্থানীয় জালালাবাদ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা দেয়া হয় ২০০৯ সালের প্রথমদিকে। অবশ্য ঐ বছরেরই ৩রা আগস্ট স্বাক্ষরিত এক স্মারকে ইজারা বাতিল করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ইজারা বাতিলের সে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে জালালাবাদ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আফসর উদ্দিন হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন (নং: ৭৮৬২)। ২০০৯ সালের ১৭ই নভেম্বর বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চে রিট শুনানি শেষে ইজারা বাতিলের আদেশের কার্যকারিতায় ৩ মাসের ন্থগিতাদেশ প্রদান করেন। ২০১০ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মামতাজ উদ্দিন আহমদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের বেঞ্চ স্থগিতাদেশ আরও ৬ মাসের জন্য বর্ধিত করেন। একই বছরের ৪ঠা আগস্ট বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহান রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেন।
রুলের নিষ্পত্তি না হলেও ২০১৬ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি মাঠটি নিজেদের উল্লেখ করে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারকে বাণিজ্যমেলার জন্য বরাদ্দ প্রদান করে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ। যদিও এর আগে মাঠটি বাণিজ্যমেলার জন্য বরাদ্দ দিয়ে আদালত অবমাননা না করার জন্য লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনতাসির মাহমুদ রহমান। সদর উপজেলার অনুমতি পেয়ে মেলা আয়োজনে তোড়জোড় শুরু করে মেট্রোপলিটন চেম্বার। মেলা শুরুর তারিখ নির্ধারণ হয় ১৪ই মার্চ। অবশ্য এর আগের দিন হাইকোর্টের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মেলা স্থগিত করে মেট্রোপলিটন চেম্বার। কিন্তু ১২ দিন পর ২৫শে মার্চ আইনি জটিলতা কাটানোর দাবি করে মেলার উদ্বোধন করে মেট্রোপলিটন চেম্বার। অবশ্য ইতিমধ্যে টনক নড়ে উপজেলা পরিষদের। মেলা শুরুর দিনই মাঠের বরাদ্দ বাতিল করে উপজেলা পরিষদ। কিন্তু এরপরও মেলা চালিয়ে যেতে থাকে মেট্রোপলিটন চেম্বার।
আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওঠার দাবি করে ২৫শে মার্চ থেকে শহরতলির বালুচরে শুরু হয় মেট্রো চেম্বারের আয়োজনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এ পর্যায়ে আরও একটি অভিযোগের তীর প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে মেলার আয়োজনকে। মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিটির নাম দেখে চোখ কপালে উঠে সিলেটের বাণিজ্যসংশ্লিষ্টদের। অতীতে সিলেটের অনেক মেলায় সংশ্লিষ্ট থাকা এ ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সিলেট মেট্রো চেম্বার তার উপরই ভরসা রাখে। সিলেটের বাণিজ্যপাড়ায় ‘কালো তালিকাভুক্ত’ এমএ মঈন খান বাবলুকেই দেয়া হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব।
টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালে মঈন খান বাবলুর বিরুদ্ধে দু’ দুটো মামলা করেছিলো (নং: ১৫৮, ১৫৯) সিলেটের ব্যবসায়ীদের বুনিয়াদি সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এর মধ্যে প্রথম মামলায় আদালত মঈন খান বাবলু এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। পাশাপাশি তাকে জরিমানাসহ ১০ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। এ দুই মামলার বাইরে মজুমদারীর জনৈক জাহিদ হোসেন খানের দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের আরও একটি মামলায় সাজাও হয় তার। ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের বিপরীতে আদালত তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড ও ৭০ লাখ টাকা প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে আপস হলেও এ মামলায় অবশ্য এক মাস জেল খাটতে হয় মঈন খান বাবলুকে। এছাড়া, ইস্টার্ন ব্যাংক চৌহাট্টা ব্যাংক শাখার দায়ের করা ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের একটি মামলাও রয়েছে মঈন খান বাবলুর নামে। কিন্তু এরপরও তাকেই ভরসা করে সিলেট মেট্রো চেম্বার। সে সূত্রে উদ্বোধনসহ পুরো মেলাতেই দাপট দেখাচ্ছেন মঈন খান বাবলু।
এত কিছুর পরও বালুচরের মাঠে মেলা চলতে থাকায় আবারো উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয় জালালাবাদ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মেলা না চালানোর আদেশ দিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে চেয়ারম্যান আফসর উদ্দিন উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। পাশাপাশি রিটে মেলার কারণে স্কুলে পাঠদানের বিঘ্ন ঘটারও অভিযোগ করা হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ৩১শে মার্চ বিরোধপূর্ণ স্থানে মেলার কার্যক্রম পরিচালনায় ৩ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিন আহমদ বলেন, যথাযথ অনুমতি নিয়েই তারা মেলার আয়োজন করেছেন। তিনি জানান, মেলার মাঠের বরাদ্দ বাতিলের কোনো চিঠি তারা পাননি। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদই আমাদের বরাদ্দ দিয়েছিলো। এখন হয়তো তারা নিজেদের বাঁচাতে বরাদ্দ বাতিলের কথা বলছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D