২৭শে মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
২৪ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার: ৮ অক্টোবর সারাদিন নানা গুঞ্জন আর অজানা এক অস্থিরতায় কাটছে আমাদের সময়। প্রায় দুবছর পর বাবা আত্মসমর্পন করবেন নিম্ন আদালতে।সবার মাঝে এক রকম গোপনীয়তা ফিসফিস ও চুপ চুপ ভাব,বাসার পরিবেশটা গোমট ভারী হয়ে আছে।মার কাছে ঘন ঘন ফোন আসছে, মা কেমন বিচলিত অস্থির।আমি আর আমার ছোট বোন মাটি মার পেছন পেছন চার্লির মাতো ঘুরে বেরাচ্ছি। সাহস হচ্ছে না কোন প্রশ্ন করার। মার বেডরুমের জানালার পাশে অনেকগুলো নীল অপরাজিতা ফুল ফুটে আছে।মা ফুলের গায়ে হাত বুলিয়ে ছোট ছোট করে কি সব বলে যাচ্ছে। যদিও আমরা মার ফুল,গাছ,পাখি,তারার সাথে কথা বলা দেখে অভ্যস্ত। হঠাৎ করেই মা আমাকে আর মাটিকে ডাকলেন দেখ কি সুন্দর অর্কিড ফুটেছে!আমরা তো মার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।যাক্ বাবা একটা সুযোগ পেলাম মার সাথে কথা বলার।মাটি তো ফুলাতে ওস্তাদ সে বলে উঠলো- ওয়া ও মা কি সুন্দর অর্কিড আমাদের বারান্দায়। আমিও অর্কিড নিয়ে,মার গাছ প্রেম নিয়ে নানা কথা শুরু করে দিলাম যেন এই প্রথম আমাদের বারান্দায় অর্কিড। আমরা দু বোন প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মার ভেতরের অস্থিরতাকে শান্ত করতে,কিন্তু মা কেমন যেন নির্লিপ্ত, এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে, ফোনে কথা বলছে বাবার জেলের ব্যাগ গুছাচ্ছে। ২০০র অধিক মামলা বাবাকে জামীন দিবেনা আমরা নিশ্চিত ।অতএব জেলখানায় লম্বা সময় থাকতে হবে।সমস্যাটা অন্যখানে বাবাকে নিয়ে নানান জনের নানান মত,জেলে টর্চার করা হতে পারে বাবাকে,কেউ বলছে লম্বা সময় জামীন না পেয়ে জেলেই থাকতে হবে,আবার কেউ বলছে দলের কিছু নেতাই সরকারের সাথে আতাঁত করে বাবাকে বাইরে আসতে দেবেনা।কেউবা তাদের নামও জোর দিয়ে উচচারন করছেন। উনারা নাকি নিজ দলের বিভীষন।। মাটি তো রীতিমতো চেচামেচী শুরু করলো নিজের দলের লোকেরাই বাবার বিরুদ্ধচারী।আমি খালেদা জিয়া দাদুমনির কাছে বিচার দিব।মা মাটির দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তুু নীর্লিপ্ত তার দৃষ্টি।অন্য সময় হলে মা মাটিকে একটা চড় মেরে বসতো। আমি বুঝলাম মা আজ এই সচেতনতার জায়গাই নাই। আমি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলাম —আজ আমার অনেক বড় দায়িত্ব,মাটিকে মাকে এবং পুরো পরিস্থিতিকে আমাকেই সমলাতে হবে।এখানে বলে রাখা দরকার মা সীমার মাঝে অসীম।প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী,অথচ আজ আমি তাকে চিনতে পারছিনা।একটা ভয় ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। উওেজনার অস্হিরতা ভালো,বুঝা যায় প্রতিকারের চেষ্টা করা যায়।কিন্তু নীর্লিপ্ত অস্থিরতার প্রতিকারের উপায় কি?মার আজ তাই হয়েছে। প্রিয় মানুষের দীর্ঘদিনের অদর্শন এবং আগামীর অনিশ্চয়তা মাকে পাথর করে দিয়েছে।সারাটা দিন এভাবেই কাটলো,সন্ধ্যায় এলো মেজ চাচচু, ছোট চাচচু,চাচী,মামারা,বাবার কিছু বন্ধু,সুহাদ ও বাচ্চু আংকেল। সবার প্রশ্ন একটাই বাবা কাল আত্মসমর্পণ করবেন কি না।আমরা জানতাম ব্যাপারটা খুব গোপন কিন্তু আসলে তা ছিল খুব ওপেন।কেউ ই শিউর না আমরাও ধাঁধাঁর মধ্যে আছি।সারেন্ডার করবে জানি কাল,পরশু,তরসু,বা যে কোন দিন।
রাত ঠিক সাড়ে বারোটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠল দ্রুতগতিতে অনেকক্ষণ ! মা চিৎকার করে উঠলো “দরজা খোল তোমার বাবার বেল। আমি মাটি সুমন আংকেল,শিপন আংকেল সহ অনেকেই ছুটে গেলাম দরজা খুলতে।আর বাকিদের চলছে স্হির অপেক্ষা,কারো মুখে কোন কথা নেই, এ যেন পিনপতন নীরবতা। মা তো জায়গাতেই বসে দরজার দিকে তাকিয়ে।আমার মার একটা অসুস্থতা আছে,প্রচণ্ড অস্থিরতার সময় মার হাত পা শক্ত হয়ে যায়,মা চলাফেরা করতে পারেনা,আজও তাই হলো।বাবা সবার সাথে দেখা করতে করতে ঘরে ঢুকলেন।মা ধীর স্হির তাকিয়ে আছে।বাবার মাথায় ক্যাপ,চুল কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠের উপর ঝুলছে।আমার তো বেশ মজাই লাগছে দেখতে ঠিক যেন ম্যাইকেল জ্যাকসনের মতো।নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম তুমি তো ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো মহান পূরুষ। বাবা হেসে বললেন একথাগুলো আমাকে নিয়ে লেখা।এরপর মার দিকে তাকিয়ে বললেন কি খবর কামরুন নাহার?খুব ভয় পাচ্ছো আমাকে দেখে? মা শান্ত ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো,তারপর হঠাৎই বাবাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো,কেটে গেল কয়েক মুহুর্ত।মনে হলো যেন মা এই কয়েক মুহুর্তেই বাবার সাথে দীর্ঘ দিনের অদেখা মুহুর্তগুলো পার করে দিচ্ছিল। আমার দেখা পৃথিবীর সরচেয়ে সুন্দর প্রেমময় দৃশ্য।। আমি হৃদয়ের ক্যানভাসে রংতুলি দিয়ে এঁকে দিলাম এ বিরল দৃশ্য।বাবাও আবেগআপ্লুত কিনতু কেউ-ই কাঁদছেনা।তবে কান্না যেন থেমে নেই।বাবা স্বাভাবিক হবার জন্যই বললেন খুব খিদে পেয়েছে কিছু খাব।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ।বাবা এবার পরীক্ষা করতে বসলেন তার জেলের জন্য গোছানো ব্যাগ লাগেজ।আমি কাগজ কলম নিয়ে বসলাম,বাবা একটা একটা করে আইটেম বলছেন আর আমি লিষ্ট তৈরি করছি, এটা জেল গেটে লাগবে।বাবা প্রচুর পড়াশুনা করেন, তিনি নিজেই বই গুছাচ্ছেন।বেশ কিছু কবিতার বই ব্যাগে ভরলেন।বাবা রবিন্দ্রসংগীত ভালবাসেন,কবিতা আবৃত্তি করেন,অনেক জগৎখ্যাত বইয়ের সমৃদ্ধি বাবার কাছে।আমি বললাম বাবা রবিন্দ্রসংগীত,কবিতা,রাজনীতি কি একই সাথে যায়?বাবা উচ্চ স্বরে ভরাট গলায় আবৃত্তি করলেন —-“মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য”
কবি নজরুলের কবিতা বৃথা হতে দেবো না। হা- হা- হা।এভাবেই হাসিঠাট্টার মধ্যেই আমাদের কাজ চলছে।যখন আমাদের ব্যাগ লাগেজ সহ সকল কাজ সমাপ্ত,তখন রাত প্রায় শেষ,আর ভোর খুব কাছে।মাটি বারবার বাবাকে ডাকছে -বাবা আসো তোমার বুকে শোব।আমাদের দুজনার খাটে চারজন – মা বাবা আমি আর মাটি আড়াআড়ি করে শুয়ে পড়লাম।ছোট মামা,মিতু চাচচু ও সুমন আংকেল কেউ মেঝেতে কেউ সোফাতে বসে আমরা সবাই আগামী দিনগুলো নিয়ে পরীকল্পনা করছি। বাবাকে পেঁচিয়ে ধরে মাটি বাবার বুকে ঘুমিয়ে পড়লো যেনো বাবা ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে। মা বাবার একটি হাত চেপে ধরে আছে যেনো একটু আলগা হলেই হারিয়ে যাবে।আমি একটি গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তুু গানে কারো আগ্রহ নেই দেখে হতাশ হলাম।বাবা চোখ বন্ধ করে পুরো গানটা শুনলেন। গান শেষে বললেন খুব ভাল।ভাল করে রেওয়াজ করো তুমি একদিন অনেক বড় গায়িকা হবে।খুব ভাল লাগলো বাবার কমেন্ট শুনে মনে হলো-“এটাই শ্রেষ্ঠ সত্য”।সকাল সাড়ে সাতটা বাবা প্রস্তুত বাবার ব্যাগ গাড়িতে তোলা হচ্ছে।যারা কোর্টে যাবেন তারা সবাই নিচে নেমে গেছেন গাড়িতে উঠছেন।বাবা বের হবার সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমি মাটি আর মা দোয়া পড়ে বাবার গায়ে ফু দিয়ে দিচ্ছি।বাবা বললেন সবাই ভাল থেকো চিন্তা করোনা,আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।মা বাবার হাত ধরে বলল-তুই ভাল থাকিস,আমাদের জন্য ভাবিসনা।তোর কাছে আমার কোনো চাওয়া নেই শুধু একটাই চাওয়া- তোর ভাল থাকা।আর কথা দিচ্ছি যেদিন তুই ফিরে আসবি সেদিন আল্লাহর রহমতে তোর আজকের এই সংসারই তোকে আমি ফিরিয়ে দেব।বাবা ও-কে বলে সিড়িঁ দিয়ে দ্রুত নেমে গেলেন।আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে ———
আগামীর অপেক্ষায়—————-।।
সূচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D