এখনও পৌঁছেনি এক-তৃতীয়াংশ বই

প্রকাশিত: ২:১৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬

এখনও পৌঁছেনি এক-তৃতীয়াংশ বই

বই উৎসবের আর মাত্র তিনদিন বাকি থাকলেও বুধবার পর্যন্ত দেশের সব জেলায় শত ভাগ বই পৌঁছেনি। কোথাও ৪০, কোথাও ৩০ ভাগ বই সরবরাহ এখনও বাকি রয়েছে। ফলে ১ জানুয়ারি নতুন বই ছাড়াই অধিকাংশ স্থানে পালিত হবে বই উৎসব।

তবে ছাপার দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)  কর্মকর্তাদের দাবি ৯৮ ভাগ বই সরবরাহ শেষ। বাকি দুই ভাগ আপদকালীন সংরক্ষণের জন্য সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।

বিগত বছরের মতো আগামী রোববার ইংরেজি বছরের প্রথম দিন সারাদেশে বই উৎসব পালিত হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক রতন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের বিরতণের জন্য শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু আপদকালীন সময়ের জন্য সংরক্ষিত দুই ভাগ বই ছাপাখানার মালিকরা দিতে পারেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতে ছাপানো সব বই মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশে পৌঁছেছে। একই দিন চীনে ছাপানো শিক্ষক নির্দেশিকা বহনকারী জাহাজ  চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে এসব নির্দেশিকা পৌঁছে দেয়া হবে।

তবে এনসিটিবির এ কর্মকর্তার তথ্যের সঙ্গে মাঠের চিত্র উল্টো। বুধবার বিকেলে ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, তৃতীয়, চতুর্থ ও প্রাক-প্রাথমিকের আংশিক বই পেয়েছি। মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ বই এখনও বাকি।সরবরাহ না হওয়া শিক্ষকরা ফিরে যাচ্ছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অর্ধেক বই এখনও পাইনি। ৪০ শতাংশ বই এখন আসেনি। উৎসবের দিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বই দেয়া সম্ভব হবে না। বাকি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২-৩টা বই দিতে হবে।

জানা গেছে, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ অনেক জেলায় বুধবার পর্যন্ত সব শ্রেণির শত ভাগ বই পৌঁছেনি।

এনসিটিবি জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩৫ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৭টি বই ছাপার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের জন্য এক কোটি এক লাখ ৫ হাজার ৮৩২ কপি, প্রাথমিকের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ১০ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৭ কপি, মাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং এসএসসি ভোকেশনালের ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৮টি। এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের (ট্রেড বই) ৯ লাখ ২১ হাজার ১১০টি। ইবতেদায়ী ও দাখিলের ৫ কোটি ৭১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৫টি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ৯ হাজার ৭০৩ টি ব্রেইল, নৃগোষ্ঠির ২৫ হাজার ৫ শত বই। এছাড়া প্রাথমিকের ৬০ লাখ ১ হাজার ৭২৪টি শিক্ষক নির্দেশিকা। প্রাক-প্রাথমিকের ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০টি টিচিং ম্যাটারিয়াল। মাধ্যমিকের শিক্ষক শিক্ষাক্রম নির্দেশিকা ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৪টি।

গত ২৩ জুলাই মাধ্যমিকের বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। প্রাথমিকের ৯৮ লটের মধ্যে ১৬ লটে ১ কোটি ৮০ লাখ বই ছাপার কাজ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। বাকি কাজ পায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান। আর প্রাথমিকের শিক্ষক নির্দেশিকা ছাপার কাজ পায় চীনা প্রতিষ্ঠান।

দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের নানা ঝামেলা উপেক্ষা করে এনসিটিবি প্রথম বারেরমতো পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই ছাপিয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিকের শিক্ষক নির্দেশিকা গাইডও এবার নতুন করে ছাপানো হয়েছে।  এবারের পাঠ্যপুস্তকের এটাই বিশেষ আকর্ষণ বলে এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল