২৯শে জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২০
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার
অদম্য মেধাবী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের চা শ্রমিক গোপাল মান্দ্রাজী স্বপ্ন দেখে মেডিক্যালে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা দিতে। কিন্তু মাতৃহীন হতদরিদ্র চা শ্রমিক পিতা যা আয় করেন, তাতে সংসারের চাকা সচল রাখাই কঠিন, সেখানে গোপাল মান্দ্রাজীর চিকিৎমক হওয়ার এই ইচ্ছা পূরণের সুযোগ কোথায়? ৩ ভাই এক বোন এর মধ্যে ৩ নং। ৩য়, ৫ম, (২ ব্ছর আগে মা মারা যান)
কমলগঞ্জ উপজেলার ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে গোপাল। চা শ্রমিক সন্তানের এ সাফল্যে পাত্রখোলা চা বাগানের লোকজনও খুব খুশি। পাত্রখোলা চা বাগানের চা শ্রমিক আপলসামী মান্দ্রাজীর তিন ছেলে ও এক মেয়ের গোপাল মান্দ্রাজী ৩য় সন্তান। গোপালের বড় ভাই একই বাগানে কাজ করে। ছোট দুই ভাই ৫ম ও ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বোন এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি। প্রায় ২ বছর পূর্বে গোপালের মা সেতামা মান্দ্রাজী দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে আক্রান্ত সুচিকিৎসার অভাবে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর গোপাল মান্দ্রাজী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করতে।
পরিবারে মা না থাকায় ছোটো এক ভাই ও এক বোনকে নিয়ে সকালের নাস্তা আর রাত্রের খাবারসহ সংসারের যাবতীয় কাজ করতে হতো নিজেদেরই। সে জন্য প্রতিদিনই স্কুলে পৌছাতে দেরি হতো ভাই বোনের। শত ব্যস্ততা আর দরিদ্রতা তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে বাধা হতে পারেনি। ছোট্টো একটা ঘরেই থাকে তারা সবাই। এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে গোপাল মান্দ্রাজী মেডিক্যালে লেখাপড়া করে সাধারণ মানুষের সেবা করতে চিকিৎসক হতে চায়। চা শ্রমিক পিতা তাকে আর বেশী দূর পড়াতে চাচ্ছেন না দারিদ্রতার কারণে। তবে গোপালের অদম্য মনোবল মানুষের সহায়তা ও টিউশনী করে নিজের লেখাপড়ার খরচ বের করতে পারবে বলে রয়েছে তার আত্মবিশ্বাস।
শুক্রবার বিকেলে পাত্রখোলা চা বাগানের বাসায় কথা হয় অদম্য মেধাবী গোপাল মান্দ্রাজীর সাথে। সে জানায়, নিজের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা আর পরামর্শে পড়াশুনা করে সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুচিকিৎসার অভাবে মায়ের মৃত্যুর পর সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে পেশা হিসেবে ডাক্তার হবে। উচ্চ মাধ্যমিকেও সে ভালো ফলাফল করে পরবর্তীতে মেডিক্যাল বিষয়ে পড়াশুনা করে তার লক্ষ্য একজন চিকিৎসক হওয়ার। এতে দেশ ও দশের সেবা করতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। চিকিৎসক হওয়ার পথে একমাত্র দারিদ্র্যই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার পরিবারটির পাশাপাশি চা বাগানের মানুষ ও শিক্ষকরাও মনে করেন, গোপালের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে এবং স্বপ্ন পূরণে সরকারি বেসরকারিভাবে সহায়তা দরকার।
গোপালের বাবা আপলসামী মান্দ্রাজী বলেন, তিনি ও তার এক ছেলে পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছেন। খেয়ে না খেয়ে কোনরকম ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছি। এখন গোপালের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে তিনি চিন্তিত। তবে ছেলে নিজেই অদম্য বলে সে পরবর্তী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কেউ মানবিক বিবেচনায় সহযোগিতার হাত বাড়ালে হয়তো বা তার ছেলের এ ইচ্ছে পূরণে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
ভান্ডারীগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশেদ আলম বলেন, গোপাল মান্দ্রাজী অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে চা শ্রমিক সন্তান গোপাল মান্দ্রাজী পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। গোপালের এ ফলাফলে এ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা খুশি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D