কমিটির মেয়াদ শেষ: ঝিমিয়ে পড়েছে ‘ভ্যানগার্ড’ ছাত্রদল:নতুন কমিটিতে পদ পেতে লবিং

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৬

satrodolsm20161016180851১৮ অক্টোবর ২০১৬: মঙ্গলবার: ঝিমিয়ে পড়েছে রাজপথে বিএনপির আন্দোলনের ভ্যানগার্ড খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অতীতের জৌলুস ফিরিয়ে আনা তো দূরের কথা এর ধারে কাছেও যেতে পারছে না তারা। ফলে নিজেদের ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি করছে সংগঠনটি।

এর পেছনে দ্বন্দ্ব-কোন্দল, সাংগঠনিক দুর্বলতা, আন্তরিকতার অভাব, সারাদেশের নেতাকর্মী থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নতা এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে বর্তমান রাজিব-আকরাম কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত শুক্রবার।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নয়পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে।  এমনকি ছাত্রদলের অফিসে অগ্নসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এই বিক্ষোভের মেয়াদ হয় দুই মাস। যা ছাত্রদলের ইতিহাস হয়ে আছে। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি। এরপর চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। তখন বিক্ষোভকারী অনেককেই সেখানে স্থান দেয়া হয়।

আলাপকালে নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান কমিটির সফলতার চাইতে ব্যর্থতার পাল্লাটাই ভারি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে মন রক্ষায় ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হলেও ব্যর্থতার তকমা থেকে বের হতে পারেনি ছাত্রদল। এই কমিটি ২ শতাধিক নেতার পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুরু থেকেই। কিভাবে এরা পদ পেলো এর সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। অপরদিকে  ২০১৫ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির  মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ জন ছাত্রনেতা সক্রিয় ছিলেন। এর বাইরে পদ-পদবীহীন অনেক ছাত্রনেতার ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

নেতাকর্মীরা আরও জানান, বর্তমান কমিটি তাদের মেয়াদকালে কোনো টিম ওয়ার্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে। সারাদেশের নেতাকর্মীদের সাথে কোনো সমন্বয় নেই, নেই কোনো মনিটরিং। গত এক বছর ছাত্রদল অফিসে আসেননি সাধারণ সম্পাদক। আর সাংগঠনিক সম্পাদক মেয়াদকালে এসেছেন মাত্র দুদিন।

নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বিগত দিনের কমিটি অপেক্ষায় বর্তমান কমিটিকে কিছুটা সফল মনে করা হলেও প্রকৃত পক্ষে ছাত্রদলের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ব্যর্থ কমিটি। শত ব্যর্থতার মাঝেও বিগত দিনে জুয়েল- হাবিব ১৩টি জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। অথচ বর্তমান কমিটি তাদের মেয়াদকালে ঢাকার বাইরে কোনো জেলা-থানা কমিটি দিতে পারেনি। হাতে গোনা কয়েকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অনুমোদন দিয়েছে, তাও আবার আংশিক। (মেয়াদ শেষের দিন শুক্রবার ২০টি ইউনিটের কমিটি দেয়া হয়, তাও আংশিক)। কমিটি গঠনে কোনো সমন্বয় মিটিং না করেই সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক তাদের পছন্দের কমিটি চূড়ান্ত করেছেন, এমন অভিযোগও আছে।

কোনো সাধারণ সভা, কর্মীসভা করতে পারেনি এ কমিটি। এতো বড় কমিটি হওয়ার পরও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে পারেনি। শুধু তাই নয় বর্তমান কমিটির দেড়শ’ জন ব্যতীত কেউ ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। ৩০/৩৫ জন রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় দশ বছর হবে। এ ছাড়া কমিটির ৩শ থেকে ৪শ অপরিচিত মুখ যাদের কেউ কোনো থানা, জেলা, বিভাগীয় এমনকি কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। কমিটিতে অনেকেই রয়েছেন যারা মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ সম্পন্ন করেননি। পদায়নের ক্ষেত্রে অতীতের রেকর্ড ও পদের বিবেচনা করা হয়নি। বিগত কমিটির কেন্দ্রীয় পদে থাকা নেতাদের নাম এসেছে জেলা ও মহানগর নেতাদের পরে। বিবেচনায় নেয়া হয়নি জ্যেষ্ঠতার বিচার।

তারা আরও বলেন, কোথাও না থাকলেও ভাইবারে আছেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক আর সাংগঠনিক সম্পাদক। এদের সাথে যোগাযোগের কোনো সহজ সুযোগ না থাকায় হাজার হাজার নেতাকর্মী সারাদেশ থেকে ঢাকা এসে দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়।

ছাত্রদলের সফলতা ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক সাবেক ছাত্রদল নেতা নিউজবাংলাদেশকে বলেন, পাকিস্তান পরবর্তী সময়ে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। আর বিরোধী দলে থাকাকালে ছাত্রসংগঠনগুলোর আন্দোলন এবং উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ বেশি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদলের ভুমিকা ছিল, তারা নির্যাতিত হয়েছে নানাভাবে। তারপরও তারা সরকার পতনের আন্দোলনে সরকারকে যতটা কোণঠাসা করার কথা ছিল তা পারে নাই। তারা ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে এটা ইতিহাসের চাহিদা। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে যারা যুক্ত ছিল তাদের দায়ভার নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্রদল কতুটুকু সফল আর কতুটুকু ব্যর্থ আত্নসমালোচনায় আয়নার সামনে তাদেরকে দাঁড়াতে হবে।”

দলটির দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী নিউজবাংলাদেশকে  বলেন, “কয়েকটি দিকে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। প্রথমত আমরা অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারি নাই। আমাদের যারা গুম-খুন হয়েছে, আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় জেলে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য সুবিচার আদায় করে দিতে পারিনি।”

তিনি বলেন, “বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের মধ্যে একমাত্র ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বিগত আন্দোলনকে টেনে নিয়ে গেছে। অবশ্য এর জন্য চরম মূল্যও দিতে হয়েছে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী নিহত, আহত কিংবা পুঙ্গগুত্ব বরণ করতে হয়েছে। সেই সাথে গুমের শিকার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। আন্দোলনের ওই ধাক্কার কারণে সংগঠন গোছানোর সময়ও তেমন পাননি, ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পার্টি অফিসে সরকার বসতে দেয়নি।”

“তবে এই সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি, হল কমিটি, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, মহানগর কমিটি এবং জেলা মর্যাদা সম্পন্ন ৩৮ দিতে পেরেছি।  আরো কিছু কমিটি অচিরেই দেয়া হবে।সরকার কমিটি করতে  প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করছে। তারপরও আমারা যতটুকু পেরেছি করেছি।”

নতুন কমিটিতে পদ পেতে লবিং

ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংগঠনের অনেকেই পদ-পদবি পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কাঙ্খিত পদ পেতে ছাত্রদলের কেউ কেউ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

নতুন নেতৃত্বে আসার তালিকায় রয়েছেন- সহসভাপতি মামুনুর রশিদ, আজমল হোসেন পাইলট, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, মাসুম বিল্লাহ। যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মিয়া মো. রাসেল, আবদুর রহিম হাওলাদার সেতু, মিজানুর রহমান সোহাগ, শরীফ উদ্দিন জুয়েল, আবুল হাসান, মফিজুল ইসলাম আশিক, নুরুল হুদা বাবু, বায়েজিদ আরেফিন, মেহবুব মাসুম শান্ত, মামুনুর রশিদ ভুইয়া, হাসানুল করিম বান্না, মির্জা ইয়াসিন আলি, আব্দুল করিম সরকার, সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া প্রমুখ। এছাড়া আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সোহাগও নেতৃত্বে আসতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সংগঠন গোছানো অজুহাতে নতুন কমিটি গঠন বিলম্বিত করতে বর্তামান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব লবিং করছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রদলের সার্বিক বিষয়ে আলাপ করার জন্য বেশ কয়েকদিন ভাইবারে যোগাযোগ করা হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরে সময় দিবেন বলে জানান। এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল