সিলেট ২রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৯
আহমদ মারুফ
সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় সিলেটে ডিজেল সংকট দেখা দিয়েছে। রেলওয়ে ও ডিপো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সিলেট চলাচলকারী প্রায় সব তেলবাহী ট্রেন ও লরি থেকে প্রকাশ্যে তেল চুরির ঘটনাও ঘটছে। ট্রেনের কতিপয় চালক, রেলওয়ে পুলিশ ও রেল শ্রমিকলীগের নেতার যোগসাজশে এই তেল চুরি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু চলন্ত ট্রেন থেকেই প্রতিবছর কোটি টাকার ডিজেল চুরি হচ্ছে। পরে এসব ডিজেল বিক্রি হচ্ছে রেলস্টেনের আশপাশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। ডিজেল সংকটের কারণে পরিবহনসহ কৃষিখাতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সহসাই এ সংকট দূর করা না হলে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বলেছে, ‘শুষ্ক মৌসুমকে সামনে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় কর্মকর্তারা ডিপো জ্বালানি শূন্য করে সিলেটবাসীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। একইভাবে তারা সরকারকেও বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত।’ পক্ষান্তরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’র ৩টি বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোং, পদ্মা অয়েল কোং এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সিলেটস্থ ডিপোর ডিএমও-রা অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এবং গত ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশনে রেল দুর্ঘটনাকে দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, এর ফলে রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে জ্বালানি ভর্তি ওয়াগন আখাউড়া রলস্টেশনে আটকা রয়েছে। এজন্যই সিলেটের ডিপোগুলো জ্বালানিশূন্য হয়ে পড়েছে। তবে আজকালের মধ্যেই রেলওয়ের ইঞ্জিন সমস্যা কেটে গেলে সিলেটে ডিজেল সংকট থাকবে না।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ইরি-বোরো ও শুষ্ক মৌসুমে জ্বালানি পণ্য বিশেষ করে ডিজেলের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ফলে ডিপো কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ফিলিং স্টেশন বা পেট্রোল পাম্পে রেশনিং ব্যবস্থায় জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। তবে প্রতি বছর এ অবস্থার সূত্রপাত হয়, সাধারণত মধ্য ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু চলতি বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই ডিজেল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আর এর মুখ্য কারণ হচ্ছে রেলওয়ে ইঞ্জিনের অপ্রতুলতা। কারণ বিপিসি সিলেটে জ্বালানি বিপণন ব্যবস্থায় পুরোপুরি রেলওয়ের উপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় রেল কর্তৃপক্ষ যদি জ্বালানি পরিবহনে খামখেয়ালিপনা করে, তা হলে সিলেট অঞ্চলে চরম জ্বালানি সংকট দেখা দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যা গত ১১ নভেম্বরের রেল দুর্ঘটনার পর আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটারস, এজেন্টস্ এন্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় শাখার সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘শুস্ক মৌসুমে সিলেটে ডিজেল সংকট পুরোনো সমস্যা। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নেন না। ফলে ডিলার এজেন্টরা ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। পাশাপাশি সরকারের সেবামূলক এ খাতে বিপর্যয় দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘সিলেটে জ্বালানি সেক্টরের ডিপো কর্তাদের মার্কেটিং-এ গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা বিদ্যমান। জ্বালানি সংকট দেখা দিলে ডিপো কর্তারা ডিলারদেরকে জেলা প্রশাসনে চিঠি দিয়ে অবগত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বিগত এক বছর যাবত সিলেটে ডিজেল সংকট বিদ্যমান। স্বাভাবিকভাবে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করে থাকে। কিন্তু সিলেটের ডিপো কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সচেতন বা সতর্ক থাকেন না। তাদের উচিত ছিল, চাহিদাকে সামনে রেখে মজুত বৃদ্ধিকরণ এবং আপতকালীন মজুত সৃষ্টি করে রাখা। কিন্তু ডিপো ৩টি’র ডিএমওদের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতায় বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটে বর্তমানে ডিজেল সংকটের প্রেক্ষাপটে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি সিলেট ডিপোর ডিএমও মো. সালাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘সিলেট বিভাগের ডিপোগুলো জ্বালানি পরিবহনে রেলওয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে সিলেটে ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানির ২ থেকে ৩টি চালান আসে। একেকটি চালানে ২৪টি করে ওয়াগন থাকে। এরমধ্যে যমুনা ডিপো পায় ১০টি, পদ্মা ডিপো পায় ৯টি এবং মেঘনা ডিপো পায় ৫টি। এতে আমাদের সরবরাহে কোন ঘাটতি হয় না। কিন্তু সংকটকালে আপতকালীন মজুত করার মতো ব্যবস্থা সিলেটের ডিপোতে নেই। তাই দুর্যোগকালে আমাদের সংকটে পড়তে হয়।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটে নদীপথে জ্বালানি পরিবহনের কোনো সুযোগ নেই। বর্ষা মৌসুমে যমুনা ডিপো অল্পকিছু ডিজেল নদীপথে আনতে পারে। কিন্তু আমরা বা মেঘনার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। আর সড়ক পথে আনতে গেলে পরিবহন খরচ রেলওয়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রেলের উপর নির্ভর থাকতে হয়।’
সিলেট যমুনা ডিপোর ডিএমও মো. আবদুল বাকি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এবং ১১ নভেম্বরের কসবার ট্রেন দুর্ঘটনায় সৃষ্ট সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শিডিউল বিপর্যয়ে এমন অবস্থা হয়েছে। চট্টগ্রাম ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ডিজেলের কোনো অপ্রতুলতা বা অন্য আর কোন সংকট নেই। শুধুমাত্র রেলওয়ের ইঞ্জিন না থাকায় এ পরিস্থিতি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একটু-আধটু ডিজেল সংকট দেখা দেয়। কিন্তু তাও সাময়িক। তবে এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রেল দুর্ঘটনার কারণে একটু আগেই ডিজেল সংকট দেখা দিয়েছে। আর এটার মূলে রয়েছে, পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলওয়ের অপারগতা।’
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সিলেট ডিপোর ডিএমও কাজী আনোয়ার হোসেন চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সিলেটের মতো শ্রীমঙ্গলেও ডিজেল সংকট বিরাজ করছে। তা না হলে, আমরা হয়তো শ্রীমঙ্গল থেকে ডিজেল সংগ্রহ করে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারতাম। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি তাঁদের অবহিত করেছি। আশা করছি, তারা রেলওয়ের ডিজি’র সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুন্দর সুরাহা করবেন।‘
কোম্পানির ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের ব্যাপারে তাদের প্রতিষ্ঠান সচেতন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে সিলেটে পাঠানো প্রতিটি চালানের মধ্যে ২৪টি ওয়াগনের মধ্যে মাত্র দু’টো মেঘনা ডিপোতে দেয়া হতো। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে ডিলারদের এসোসিয়েশন ২টির বদলে ৫টি ওয়াগনের দাবি করলে কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেন। এর পর থেকে ৫টি ওয়াগনে করে মেঘনা ডিপোতে জ্বালানি আসছে। তিনি শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd