৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৬
নিউজ ডেস্ক: ফুলেল শুভেচ্ছা আর গণসংবর্ধনার অন্তরালে চলছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভা। সদ্য সমাপ্ত ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের সপ্তাহখানেক কেটেছে ফুলেল শুভেচ্ছায়। এরপর তারা নিজ নিজ এলাকায় প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে সংবর্ধনা নেন, সেখানেও প্রচুর জনসমাগমে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান। এরপর সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন জেলায় সংবর্ধনার নামে জনসভায় অংশ নিচ্ছেন এসব নেতা। নামে সংবর্ধনা হলেও কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এটাকে আখ্যায়িত করছেন ওবায়দুল কাদেরের ‘জনসভা’ হিসেবে।
বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় এখনো এ সংবর্ধনার ধারা অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, কুষ্টিয়ায় বড় রকমের শোডাউনে সব ভেদাভেদ ভুলে কেন্দ্রীয় নেতারা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতাদের সংবর্ধনার দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা আপাতত স্থগিত রয়েছে। চলতি সপ্তাহে ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিজেই সিলেটে যাচ্ছেন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধন শেষে জনসভায় অংশ নিতে।
৩০ নভেম্বর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবর্ধনা সভায় অংশ নেবেন। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর নিজ জেলা নোয়াখালীতে বিশাল জনসভার মাধ্যমে সংবর্ধনা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুধু বড় জেলা শহরেই এ সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন নয়; পথে পথে পথসভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া যাওয়ার সময় ঝিনাইদহ ও যশোরের পথে পথে অন্তত ৭/৮টি পথসভায় অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সম্পাদক।
শনিবার নোয়াখালী যাওয়ার সময়ও কুমিল্লা-চাঁদপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ কয়েকটি পথসভায় অংশ নিয়েছেন।
দলের নেতারা বলছেন, এ মুহূর্তে কোনো দলীয় কর্মসূচি না থাকায় এ সংবর্ধনার মাধ্যমেই জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এসব সংবর্ধনায় জনগণের কাছে দল ও সরকারের বার্তা দেয়া হচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ যাচ্ছে তৃণমূলে। বিপুল জনসমাগমে কেন্দ্রীয় নেতাদের উজ্জীবনী বক্তব্যে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় নেতাদের। তবে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এর মাধ্যমে এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ ধরনের সভা চলবে। সারাদেশের সব বিভাগ, জেলা-উপজেলায় এমন সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সব সভায় কেন্দ্রীয় সব নেতা উপস্থিত থাকবেন এমন নয়। সারাদেশে একবার করে সংবর্ধনার নামে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হবে নির্বাচিত জেলা প্রশাসকদের সংবর্ধনা, তারপর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর। এভাবে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনমুখী এসব সমাবেশ চলতে থাকবে।
২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের পর সপ্তাহখানেকের মধ্যে কয়েক দফার ঘোষণায় আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে শুভানুধ্যায়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে থাকেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারপর শুরু হয় সংবর্ধনার পর্ব।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সংবর্ধনা নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারা। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাও ছিলেন। আর ফরিদপুরে সংবর্ধনা নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নতুন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানসহ বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারা। একই দিন চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দান ও ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সংবর্ধনাস্থল কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাদের মিলনমেলার রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই এ দুই সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে ১২ নভেম্বর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় লালদীঘির ময়দানে। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই দিন বিকেলে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ঈদগাহ মাঠে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের সংবর্ধনা সভায়ও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলে চোখে পড়ার মতো। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ভূইয়া মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন।
এর পর একই সপ্তাহের বুধবার কুষ্টিয়ায় জমকালো সংবর্ধনা নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। দুই নেতার এ সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে পুরো কুষ্টিয়াকে নতুন করে সাজানো হয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তোরণ আর ব্যানারে জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে এ সংবর্ধনা। পথে পথে কয়েকটি পথসভায়ও বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
১৯ নভেম্বর নিজ জেলা নোয়াখালীতে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এ সংবর্ধনায় অংশ নেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নিচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে ভোট চাইছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি সংবর্ধনা নেয়া এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নেতাকর্মীদের ভালোবাসার বহির্প্রকাশ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানগুলো। এগুলোকে নেতিবাচক হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সেক্ষেত্রে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার ও সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের কাজটি হয়ে যাচ্ছে।
তবে এর আগের কমিটির নেতাদের মধ্যে সংবর্ধনা নেয়ার এমন রীতি জোরালো ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিজেরা সংবর্ধনা নিতেন না এমনকি অন্য নেতাদেরও নিরুত্সাহিত করতেন। তবে সংবর্ধনা নেয়া যে খারাপ, তা নয়। একেকজন নেতার স্টাইল একেকরকম।
নতুন করে সভাপতিমণ্ডলীতে ঠাঁই পাওয়া ড. আবদুর রাজ্জাক ও শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপাকে টাঙ্গাইলে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া চাঁদপুরের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। সংবর্ধিত নেতারা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু।
তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে সংবর্ধনা দিয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগ। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে সংবর্ধনা দিয়েছে দিনাজপুর জেলা ও জেলাধীন বিরল-বোচাগঞ্জ আওয়ামী লীগ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D