১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৬
গুলশানে জঙ্গী হামলায় একসঙ্গে ১৭জন বিদেশি মারা যাওয়ার পর বাংলাদেশে বিদেশিদের আতঙ্ক কাটছে না।
ঐ হামলার পর বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যে সম্পৃক্ত অনেকেই নিজের দেশে চলে গেছেন। ওই হামলায় প্রধান টার্গেট বিদেশি নাগরিকরা হওয়ার কারণে সবার মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।
আন্তর্জাতিক একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্টাইজার পদে বাংলাদেশে কাজ করেন অ্যান্ডি (ছদ্মনাম)। গুলশান হামলার পর নিজের দেশে চলে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে আবার ঢাকায় এসেছেন। তবে এখন ব্যাপক সতর্কতা আর নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে। অ্যান্ডি বলছিলেন, “ওই হামলার পর আমি এখন বলতে গেলে বাইরেই যাই না। শুধু অফিস আর বাসা। একটা বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে”।
অ্যান্ডি ঢাকার একটি সুরক্ষিত এলাকায় থাকেন। তার কাজের জায়গাটিও নিরাপদ। অ্যন্ডি ঢাকায় ফিরলেও পোশাক খাতে সম্পৃক্ত অনেক বিদেশি এখনও বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নীপিন গঙ্গাধরনের। বিদেশি একটি বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে আছেন এই ভারতীয়। গুলশানে হামলার পর তার বন্ধুমহলের অনেকেই এখন ঢাকায় নেই।
তিনি বলেন, “হামলার কথা জেনে প্রথমে স্তম্ভিত হয়েছি। ওটা একটা নিরাপদ জায়গা ছিল। আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম। ওখানকার রুটি আমার বাসার নিয়মিত খাবার ছিল। ওই হামলা বিদেশিদের শঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ হলো অনেকে ওই হামলার গোলাগুলির শব্দ নিজ কানে শুনেছে। কোনো পত্রিকা পড়ে বা টিভিতে দেখে নয়।”
নীপিন জানান সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে তার বিদেশি বন্ধুরা আরো কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। মূলত নিজেদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠাই কাজ করছে বলে জানান নীপিন।
গুলশানে নিহত ১৭জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে নয়জন ইতালীয়। তাদের কয়েকজন গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জানা যায় পোশাক রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ হাজার বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে থাকেন। এছাড়া নিয়মিত আসা যাওয়ার মধ্যে এ খাতে সম্পৃক্ত প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস বাইং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আমিনুল ইসলাম বলছিলেন,“তারা যে কথাটা বলেছে যে আমরা ওয়াচ করবো আগামী একমাস দুই মাস। আমার মনে হয় একমাস দুইমাস আমাদের জন্য অনেক সময়”।
গুলশান হামলার পর বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের কোনো ক্রয়-আদেশ বাতিল হয়নি। কোনো বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ারও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
মিস্টার ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে কোনো ক্রয়-আদেশ বাতিল হয়নি। কোনো বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ারও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। তবে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্ডার কমে গিয়ে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
“আশঙ্কা করছি যারা বেশি অর্ডার দিতো তারা কমিয়ে দিতে পারে। গ্রীষ্মকালীন ক্রয়াদেশের জন্য আমাদের জুলাই থেকে নেগোসিয়েশন শুরু হয়। আল্লাহ না করুক এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে আশঙ্কা তখন অ্যাবসলিউট হয়ে যাবে। প্রথম পর্যায়ে যেটা দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন”।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পোশাক রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়বে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনই দেয়া যাবে না। তবে এরকম পরিস্থিতি নতুন বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারে।
“ভারতের গত দুই তিন বছর ধরে যেসব পলিসি এবং প্ল্যান আমরা দেখছি তারা কিন্তু রেডিমেড গার্মেন্টসের ওপর একটা নতুনভাবে নজর দেয়া শুরু করেছে। তারা চায়না প্লাস ওয়ানে শক্তিশালীভাবে ঢোকার জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছে। মিয়ানমার এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পর একটা চেষ্টা করছে। আফ্রিকাতে অনেকে চেষ্টা করছেন যেহেতু তারা শূণ্য-শুল্ক সুবিধা পায়”।
মিস্টার রহমান মনে করেন পোশাক খাত ছাড়াও গুলশান হামলা আরো কয়েকটি খাতে প্রভাব ফেলবে, “আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখছি যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ভাবে ফাইনান্সিয়াল আউটফ্লো হচ্ছে। যারা উপার্জন করছেন তারা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন ইলিগ্যালি আর যারা বাইরে উপার্জন করছেন ভেতরে আনছেন না। এরকম অনিশ্চয়তা হলে এই ধরনের প্রবণতাগুলো শক্তিশালী হয়।”
তিনি বলছেন এটা ছাড়াও যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন তারাও কিন্তু চিন্তা করবেন যে দীর্ঘমেয়াদে তারা যে বিনিয়োগ করছেন, বাংলাদেশে কি সে ধরনের পরিবেশ থাকবে যেখানে তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করে সেই লাভ নিয়ে যেতে পারবেন!
সূত্র: বিবিসি
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D