জগন্নাথপুরে আ. লীগের বিদ্রোহ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৭

জগন্নাথপুরে আ. লীগের বিদ্রোহ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

আগামী সোমবার (৬মার্চ) জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নিয়ে ৩য়বারের মতো নির্বাচন হচ্ছে এ উপজেলায়। তবে এবারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদে প্রার্থী দিয়েছে  আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহের বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দেওয়ায় কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে বিএনপি। তবে শেষদিকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আকমল হোসেন ভাল অবস্থানে আসতে পারেন বলে ভোটাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ মুক্তার রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা। ফলে তিনিও রয়েছে আলোচনায়।

এ বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ালীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ তিন জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আকমল হোসেন (নৌকা)। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান (ধানের শীষ), এবং আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা (আনারস)।

নির্বাচনকে অবাধ সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সহকারী রিটানিং অফিসার জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানান। তিনি আরো জানান, নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত থাকবেন।

স্থানীয় ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীল লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় বিপাকে রয়েছে এই সংগঠনটি। তবে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির একক প্রার্থী আতাউর রহমান নিয়ে সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির বিবদমান দুই অংশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর আতাউর রহমানের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই অংশের মধ্যে দলীয় প্রার্থী আকমল হোসেনের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে স্থানীয় সাংসদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিদ্দিক আহমদের অনুসারিদের। অপরদিকে নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের আরেকটি অংশ জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ আজাদ ডন অনুসারিদের। আর ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ মুক্তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগসহ একাধিক সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কাজ করতে দেখা গেছে। এসব নিয়ে বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রী(এম.এ মান্নান এমপি) ও লিডারের ( সিদ্দিক আহমদ) বিপক্ষে কাজ করতে পারি না। আমাদের লিডারের জন্য আমরা তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাব।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭ বছর পরে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিরোধ দেখা দিলেও অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপির শাহারপাড়া কেন্দ্রে ফের ভোট গ্রহন হয়। ফের ভোট গ্রহনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকমল হোসেন। কিন্তু তাঁর ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হলে তিনি তাঁর ৫ বছর মেয়াদের জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন রায়ের করেন। তাঁর রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে তাঁকে ৫ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ৫ বছর পূর্ণ হলে নির্বাচন কমিশন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৬ই মার্চ একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৬৯২ ও নারী ভোটার ৮৩ হাজার ৮০৭ জন। কেন্দ্র সংখ্যা ৮৭টি। এই ভোটারদের মধ্যে থেকে নিজেদের পক্ষে ভোট আদায় করতে দিনরাত মাঠ চষে গেছেন প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

উপজেলার মীরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদেকুর রহমান সাদ বলেন, প্রাবাসী প্রার্থী না থাকায় টাকার ছড়াছড়ির প্রতিযোগীতা হবে না। এমনকি জয় নিশ্চিত করে আকাশ দিয়ে উড়াল দিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম রয়েছে। তাঁদেরকে জনগন সবসময় পাশে পাবে।

নির্বাচন সম্পর্কে এই প্রতিবেদককে তিন প্রার্থীই বিজয়ী হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল