সিলেট ৩রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২০
স্পোর্টস ডেস্ক
আশির দশকে মাঠ কাঁপানো সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায় আর নেই। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোববার সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে চলে যান জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এ ফুটবলার।
সপ্তাহদুয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয় বাদল রায়কে। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডায়ালাইসিসের সমস্যা হওয়ায়
শনিবার বাদল রায়কে ধানমণ্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান আবদুল গাফফার। সাবেক এই তারকা ফুটবলার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডায়ালাইসিস করাতে সমস্যা হচ্ছিল তাই বাদলকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানেই তাকে আইসিইউতে রেখে ডায়ালাইসিস করানো হয়।
ঢাকার মাঠে সাদা-কালোর প্রতীক মোহামেডানের অনেক শিরোপা জয়ের পেছনে বিশাল অবদান রয়েছে বাদল রায়ের। খেলা ছাড়ার পর সংগঠক হিসেবে দেশের ফুটবল উন্নয়নে অবদান রেখে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শংকর হাজরাদের প্রজন্মের পর বাদল রায়ই ছিলেন সেরাদের কাতারে। কুমিল্লার সুতাকল ক্লাব দিয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি তার। এরপর ১৯৭৭ সালে মোহামেডানের হয়ে তার ঢাকার মাঠে যাত্রা শুরু। ক্যারিয়ারের শেষটাও এখানেই। আবাহনী, ব্রাদার্স অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন অবলীলায়।
আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদের কথায়, বাদল আমার খুবই কাছের একজন মানুষ। ওকে অনেকবার আবাহনীতে আনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। মোহামেডানের প্রতি ওর ভালোবাসা অনেক।
১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন বাদল রায়। ’৮৬-তে তিন বছর পর মোহামেডানের লিগ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৮২ সালে আবদুস সালাম মুর্শেদীর ২৭ গোলের পেছনে বড় অবদান ছিল বাদলের। নিজে গোল করার মতো অবস্থানে থেকেও আবাহনীর কাজী সালাউদ্দিনের ২৪ গোলের রেকর্ড ভাঙার জন্য সালাম মুর্শেদীকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। শুধু মোহামেডান নয়, জাতীয় দলেও বাদল রায় ছিলেন অপরিহার্য ফুটবলার। ১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডে তার জয়সূচক গোল রয়েছে ভারতের বিপক্ষে। ইনজুরির জন্য বাদল রায়ের ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি।
বাদল রায় খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯১ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বাদল রায়। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ক্রীড়া কমিটির সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন বেশ ক’বার।
খেলা ছাড়ার পর সংগঠক হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান বাদল রায়। নিজের ক্লাব মোহামেডানের ম্যানেজার ও পরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দুই মেয়াদে। পরবর্তীতে ২০০৮-২০ সাল পর্যন্ত সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বাদল রায়।
ক্রীড়াঙ্গনের কোনো অন্যায়-অনিয়ম হলে প্রতিবাদ করতেন বাদল রায়। অসুস্থ্য ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠকদের সাহায্যে এগিয়ে যেতেন সবার আগে।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন, বাদল আমার প্রায় অর্ধ শতাব্দীর বন্ধু। ওর মতো ভালো মানুষ ক্রীড়াঙ্গনে বিরল। বাদলের জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ ওকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।
বাদল রায় ২০১৭ সালে স্ট্রোক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদল রায়কে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেন। বন্ধুর পাশে সিঙ্গাপুরেও ছুটে গিয়েছিলেন আবদুল গাফফার। স্ট্রোক করার পর থেকেই নানাবিধ শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন বাদল রায়। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে বাফুফের কর্মকাণ্ড। ২০১২ ও ২০১৬ নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে একই প্যানেলে ছিলেন।
২০১৬ সালে বাফুফে সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিনের জয়ের পেছনে বাদল রায়ের অবদান অনেক। অথচ সভাপতি হওয়ার পর বাদল রায়ের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদ কেড়ে নেন সালাউদ্দিন। গত বছর ক্যাসিনো ঝড়ে মোহামেডান ক্লাব যখন লণ্ডভণ্ড, তখন বাদল রায়ই অসুস্থ শরীরে মোহামেডানের হাল ধরেছেন।
সবশেষ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে ফুটবলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছিলেন বাদল রায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। নির্বাচনী ভেন্যুতে উপস্থিত না থেকেও ৪০ ভোট পেয়েছেন তিনি। হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় নির্বাচন হলে বাদল রায়ই হতেন বাফুফের সভাপতি।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd