জেলা পরিষদ নির্বাচন : হবিগঞ্জে প্রতি ভোট ৫০ হাজার টাকা

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬

জেলা পরিষদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। আর মাত্র একদিন পরেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নাকে ডগায় আসার সঙ্গে সঙ্গে হবিগঞ্জে প্রার্থীদের প্রচারণার মাত্রাও বেড়ে গেছে। চলছে ভোট সংগ্রহের নানা কৌশলও। শেষ মুহূর্তে এসে বাতাসে উড়তে শুরু করেছে টাকা।

অত্যন্ত নিরবে এবং কৌশলে টাকা বিতরণ করা হচ্ছে ভোটারদের মাঝে। একেকটি ভোট বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। তবে কেউই রেট কমাতে চান না। ভোটাররাও এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাচ্ছেন নিজেদের নির্বাচনের ব্যয় কিছুটা হলেও উঠিয়ে নিতে।

এদিকে নাওয়া, খাওয়া, ঘুম কোনো কিছুরই বালাই নেই। সবকিছু ছেড়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে এ জেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শুধু সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা। প্রত্যেকেই প্রতিপক্ষ প্রার্থী কিভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ভোট সংগ্রহে কত টাকা বাজেট করেছেন সেদিকে নজর রাখছেন। নিজের বাজেট বাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কার মাধ্যমে কাকে টাকা দিলে কাজ হবে এ বিষয়েও জোর প্রচেষ্টা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় ১৫টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে লড়াই করছেন মোট ৮৪ জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে লড়ছেন ১৬ জন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা নিজেদের কৌশলে প্রচারণা শুরু করেন। শুরুতে মোবাইলে ম্যাসেজ কিংবা ফোনের মাধ্যমে প্রচারণা করলেও পরে জোরে শোরে মাঠে নামেন। কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোন ভোট নিশ্চিত হবে সে কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু শেষ দিকে এসে টাকার খেলায় মেতে উঠেন প্রার্থীরা। কিভাবে, কাকে, কার মাধ্যমে, কত টাকা দিলে ভোট নিশ্চিত হবে সে চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন প্রার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রিয় এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তিনি কয়েকজন ইউপি সদস্যের কাছে পৃথকভাবে জানতে চেয়েছিলেন নির্বাচন নিয়ে তারা কি ভাবছেন। তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন সুযোগতো বার বার আসে না। একবার যখন এসেছে যতি নির্বাচনের খরচ কিছুটা হলেও উঠানো যায় তাতে মন্দ কি।

হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটার নির্বাচনের বিষয়ে তথ্য দিতে রাজি হলেও পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি কেউই। তাদের শর্তে রাজি হয়ে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেকটি ভোট সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেউই কম টাকায় ভোট বিক্রি করতে রাজি নন। প্রথম দিকে যারা নিয়েছেন তারা একটু কম পেয়েছেন।

নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রেট বাড়তে থাকে। শেষ মুহূর্তে এসে বাহুবল, নবীগঞ্জ ও মাধবপুর এলাকায় একেকটি ভোটের মূল্য লাখ টাকায় পর্যন্ত গিয়ে উঠেছে।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা এবং ৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ১১০৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এ নির্বাচনের ভোটার। তারা ২৮ ডিসেম্বর নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

এদিকে, চেয়ারম্যান পদে মোট ৪ জন প্রার্থী মনোনয়পত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মাঝে তিনজনের মনোনয়নপত্র নানা ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায়। ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল