সিলেট ৩রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০১৬
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার একটি নিবন্ধে জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ উল্লেখ করায় গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গাড়ি ভাঙচুর করে বাসভবনে ঢোকার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনের সামনের সড়ক দুপুর থেকে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। এর আগে ওই নিবন্ধের লেখক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে প্রায় এক ঘণ্টা নিজের কক্ষে তালাবন্দী করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অন্য সব আয়োজন ম্লান হয়ে যায়। ছাত্রলীগ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দিলেও রাত নয়টার দিকে তাঁরা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সৈয়দ রেজাউর রহমানকে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। স্মরণিকাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। উপাচার্য তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, স্মরণিকায় লেখাটি রেজাউর রহমানের নিজের লেখা। যেহেতু এটা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানের ‘বাইলাইন লেখা’, তাই এর দায়দায়িত্ব লেখককেই বহন করতে হবে। এ কারণে রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ১ জুলাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই দিনটিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। স্মরণিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব রেজাউর রহমানের লেখা ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে নিবন্ধে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে লিখেছেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা’।
সকালে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভায় এ বিষয়টি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার নজরে আসে। তাঁরা এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে সভায় হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দেন। তড়িঘড়ি করে আলোচনা সভা শেষ করে দেওয়া হয়। সভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মেহেদী হাসান ও আদিত্য নন্দীর নেতৃত্বে সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে তাঁর কার্যালয়ে তালাবন্দী করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে রেজাউর রহমানকে তালামুক্ত করে বের করে নিয়ে যান। এ সময় রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ একটি প্রিন্টিং মিস্টেক (ছাপার ভুল)।’
এই লেখার প্রতিবাদে জুমার নামাজের পর মধুর ক্যানটিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা তিনটার দিকে বাসভবনে ঢোকার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর গাড়ির সামনের-পেছনের ও ডান পাশের কাচ ভাঙচুর করেন। উপাচার্য গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। এ সময় উপাচার্যের দেহরক্ষী আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করে বিফল হন। পরে উপাচার্য গাড়ি নিয়ে বাসভবনে ঢুকতে সক্ষম হন। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলে ছাত্রলীগ তাদের কর্মসূচি ১৭ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তারা ফিরে এসে ‘উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) রাত আটটার মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আগামীকাল (আজ শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হবে।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা কেউ করলে আন্দোলন থেমে থাকবে না। গাড়ি ভাঙচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের সূত্র জানায়, বিক্ষোভ হঠাৎ উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের শিক্ষকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েও উপাচার্যের ওপর ছাত্রলীগের নেতাদের ক্ষোভ ছিল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান তা অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে উপাচার্য এ দায় এড়াতে পারেন না। শুধু এ কারণেই তাঁরা আন্দোলন করছেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটা কোনো ছোট ভুল না। ওই স্মরণিকা প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দিলে হবে না, এর সঙ্গে উপাচার্য জড়িত থাকলে তাঁকেও পদত্যাগ করতে হবে।
রাত সাড়ে আটটার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক উপাচার্যের বাসভবনে যান। তবে উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। পরে উপচার্যের বাসভবনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে রাত নয়টার দিকে ছাত্রলীগ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd