তৃতীয় দিন শেষে কিউইদের থেকে ৩০৩ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭

তৃতীয় দিন শেষে কিউইদের থেকে ৩০৩ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ

ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজটা ভালোভাবেই সেরেছেন। বড় সংগ্রহ এনে দিয়ে বোলারদের লড়াইয়ের জন্য দারুণ এক মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচে আধিপত্য ধরে রাখতে পরে মূল দায়িত্বটা ছিল বোলারদের কাঁধেই। তাতে তৃতীয় দিনে পাওয়া-না পাওয়ার মিশ্র অনুভূতি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ! সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে তোলা ৫৯৫ রানের পাহাড়সম বোঝা মাথায় নিয়ে জবাব দিতে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংকে মূলমন্ত্র বানিয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রতিপক্ষের তিনটি উইকেট তুলে নিলেও তাই রানের গতিতে লাগাম পরাতে ব্যর্থ টাইগাররা। এরপরও তৃতীয় দিনটি বাংলাদেশেরই বলা যায়! দিন শেষে যে কিউইদের থেকে এখনো ৩০৩ রানে এগিয়ে আছে লাল-সবুজরা।

ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে শনিবার প্রথম ইনিংসে ৭৭ ওভারে ৩ উইকেটে ২৯২ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। দারুণ এক ব্যাটিং প্রদর্শনীতে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে উইকেটে আছেন টম ল্যাথাম ১১৯ রানে। সঙ্গী হেনরি নিকোলস অপরাজিত ৩৫ রানে।

বড় সংগ্রহের জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ড অবশ্য দারুণ শুরুই করেছিল। জিত রাভাল ও টম ল্যাথাম উদ্বোধনীতে ৫৪ রান যোগ করেন। লাঞ্চের কিছু আগে কামরুল ইসলাম রাব্বির মাধ্যমে প্রথম আঘাতে পায় তারা। রাব্বির করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে কাট করতে যেয়ে রাভাল ক্যাচ দিয়েছেন। মুশফিকের চোটের কারণে কিপিং-গ্লাভস হাতে নেওয়া ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২৭ রান করেছেন কিউই ওপেনার।

পরে কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে ৭৭ রানের আরেকটি প্রতিরোধ গড়েন ল্যাথাম। যাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক গুড লেংথ বলে স্বাগতিক অধিনায়ককে নিজের প্রথম টেস্ট শিকার বানিয়ে টাইগার শিবিরে হাসি ফুটিয়েছেন অভিষিক্ত এই পেসার। অবশ্য টেস্টে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন! সাব্বির রহমান স্লিপে রাভালের ক্যাচ ছাড়ায় তা আর হয়নি। ফেরার আগে উইলিয়ামসন ৮ চারে ৫৫ বলে ৫৩ রানের ঝলমলে একটি আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছেন।

দ্বিতীয় সেশনে দ্রুততার সঙ্গে ২৫ ওভারে ১৩১ রান সংগ্রহ করে চা বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড। ফিরেই অবশ্য রস টেইলরকে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। আক্রমণাত্মক মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান রাব্বি। তার কোমর উচ্চতার বলে পুল করতে যেয়ে স্কয়ার লেগে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়েছেন চোখের অস্ত্রোপচারের পর এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা টেইলর। ফেরার আগে ৬ চারে ৫১ বলে ৪০ রানের অবদান তার।

টেইলরের সঙ্গে ল্যাথামের জুটিটি ৭৪ রানের। পরে হেনরি নিকোলসের সঙ্গেও অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটি গড়ে সফরকারীদের ভালোই ভোগাচ্ছেন এই উদ্বোধনী। তাকে যেনো আটকাতেই পারছেন না বাংলাদেশের বোলাররা। ১৩ চারে ১১৯ রানে থেকে চতুর্থ দিনের লড়াই এগিয়ে নিতে নামবেন এই ২৪ বর্ষী কিউই।

ল্যাথামের সঙ্গী হেনরি নিকোলসের বিপক্ষে মাঝে অবশ্য তামিমের চাওয়া একটা রিভিও ব্যর্থ হয়েছে। ইনিংসের ৫৭তম ওভারে নিকোলসকে করা মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন ওঠে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের থেকে। আম্পায়ার সাড়া না দিলে পরে রিভিউ নেন মুশফিকের চোটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা তামিম। কিন্তু ইম্প্যাক্টে অফ স্টাম্পের বাইরে আম্পায়ার্স কল থাকায় সেই যাত্রায় বেঁচে যান নিকোলস।

কঠিন পরীক্ষার দিনে দারুণ বোলিংয়ে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা কামরুল ইসলাম রাব্বি। অন্য উইকেটটি অভিষিক্ত তাসকিন আহমেদের। ১৪ ওভারে ৪ মেডেনসহ ৮২ রান খরচায় উইকেটশূন্য থেকেছেন ইংল্যান্ড সিরিজের চমক মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিব আল হাসন ৭ ও আরেক অভিষিক্ত শুভাশিস রায় ১৬ ওভার হাত ঘুরিয়েও কোনো সাফল্য পাননি।

এর আগে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে সাব্বির রহমানের অপরাজিত ফিফটিতে ছয়শর কাছে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। সাব্বির ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

দলীয় সংগ্রহটা বড় করতে দিনের সকালে ব্যাটিংয়ে নামেন সাব্বির রহমান ও তাসকিন আহমেদ। ছোট অথচ কার্যকরী জুটির পর তাসকিন (৩) ফিরে গেলেও কামরুলকে (৬*) নিয়ে আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন সাব্বির। তাতেই টেস্ট নিজের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান। সাব্বির ফিফটি করার কিছুক্ষণ পরই অবশ্য ইনিংস ঘোষণা করেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ৮৬ বলে ৭ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন সাব্বির।

আগেরদিন নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কাঁদিয়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন। সাকিব ২১৭ ও মুশফিক ১৫৯ রানের ঝলমলে কাব্যিক ইনিংস উপহার দেন। তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পায় বাংলাদেশ।

পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের নান্দনিক জুটি গড়ার পথে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা সাকিব ২৭৬ বলে ৩১টি চারের সাহায্যে ২১৭ রান করেন। আর জুটি সঙ্গী মুশফিক করেন ১৫৯ রান। এছাড়া মুমিনুল হক ৬৪ ও তামিম ইকবাল করেছেন ৫৬ রান।

প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে নেইল ওয়াগনার ৪টি উইকেট নিয়ে সেরা বোলার। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।

টেস্টের কোনো ইনিংসে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে’তে বাংলাদেশের করা ৬৩৮ রান এখনো সবার ওপরে। শনিবার পেছনে পড়ে গেছে ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা ৫৫৬ রান। যে সংগ্রহের বদৌলতে এখনো ৩০৩ রানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটা নিজেদের দিকে ঝুঁকে নেওয়ার বড় সুযোগই এখনো আছে টাইগারদের।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল