১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০১৬
দলমত নির্বিশেষে ঐক্য প্রয়োজন
গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে নারকীয় জঙ্গি হামলার পর প্রথম সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। সরকার দলীয় নেতাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও জাতীয় ঐক্যের অবস্থান থেকে সরেনি বিএনপি। খালেদা জিয়াসহ দলটির সিনিয়র নেতারা গতকাল পর্যন্ত দফায় দফায় সে আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন। গুলশান ট্রাজেডির পরদিন গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে প্রথম জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমি আবারও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই নিষ্ঠুর বিবেকবর্জিত গণতন্ত্র ও সভ্যতাবিরোধী উগ্রবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে দলমত নির্বিশেষে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাই। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এখনই এই উগ্রবাদী শক্তিকে দমন করতে না পারলে এরা দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে দেশের জনগণের শান্তি, সুস্থিতি, নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন করে তুলবে। ঘটনার একদিন পর ৩রা জুলাই দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডাকেন খালেদা জিয়া। সভাশেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই বক্তব্য দেন। সেদিন আরো পরিষ্কারভাবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় যাবে- সেটা আজ বড় কথা নয়। দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। আমাদের কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। খালেদা জিয়া আরো বলেন, এ সন্ত্রাসী ঘটনা এটা আমাদের জন্য নতুন এক ভয়াবহ জাতীয় সংকট। শুক্রবার রাতের ঘটনায় শুধু একটি রেস্তরাঁ নয়, সারা বাংলাদেশ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা, আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সকলের মিলিত প্রয়াসে আমাদের এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবে না। এই সংকটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের জাতীয় সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেবল গণতান্ত্রিক পরিবেশেই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে। এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদের একতাবদ্ধ হতেই হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। পরে ৭ই জুলাই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানেও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান পুনরাবৃত্তি করে খালেদা জিয়া বলেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সকলে মিলে দেশে যে একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করা দরকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তারা জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়। তারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সান্ত্বনা দেয়ার বদলে যা ইচ্ছে কথাবার্তা বলছে। এদিকে ঘটনার দিন দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রতীক এই উগ্রবাদী জঙ্গিদের সন্ত্রাসের সংগঠন ও পরিকাঠামো নিশ্চিহ্ন করতে হলে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি। আর এই জরুরি কাজটি সরকারকেই করতে হবে। সরকার এখন যদি এই মানবতাবিরোধী উগ্রবাদীদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের খেলায় মেতে থাকেন, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। পরে ৫ই জুলাই দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিতে সরকারের প্রতি ফের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে যে জিনিসটি বেশি প্রয়োজন তা হলো ভয়াবহ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে প্রতিরোধ করার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন- আমাদের বিশ্বাস তার এ আহ্বান পুরো দেশের মানুষকে আশাবাদী করে তুলেছে। শুধু দেশের মানুষই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার এ বক্তব্য অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিএনপি আশা করে, সরকার এবং সরকারি দল তাদের দাম্ভিকতা বাদ দিয়ে এবং দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থে ও বৃহত্তর কল্যাণে খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার ক্ষেত্র তৈরির উদ্যোগ নেবে। এদিকে দলীয় প্রধানের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। শনিবার চট্টগ্রামের নিজ বাসভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি বলেন, জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার যদি এই সংকট নিরসন করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অবিলম্বে জাতীয় সংলাপ আহ্বানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের রুদ্ধ কপাট খুলে দেয়া। একইভাবে গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একমাত্র জাতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব। রাজনীতিতে বিচ্ছেদ, বিনাশ, ব্যবধানের চর্চা অব্যাহত থাকলে কোনো না কোনোরূপে ভিন্নমত বিধ্বংসী উগ্রবাদীরা মাথাচাড়া দেবেই। প্রকৃত গণতন্ত্রে ভিন্নমতের সহাবস্থান জোরালো হয় বলেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি হয়।
সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে
গুলশান ট্র্যাজেডিসহ সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আর এই ঐক্যের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। গতকাল রংপুরে ‘পল্লীনিবাস’ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, সব দলকে নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সবাই একসঙ্গে বসলে বিশ্ববাসী দেখবে, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি ইস্যু নিয়ে একসঙ্গে বসেছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, হামলার আগাম তথ্য সংগ্রহে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা জঙ্গি দমনে সফলতা দেখাতে পারেনি। ব্যর্থ গোয়েন্দা সংস্থার পরিবর্তন চাই। গোয়েন্দা সংস্থা কেন ব্যর্থ হলো জঙ্গি হামলার তথ্য সংগ্রহ করতে তা সরকারের খুঁজে বের করতে হবে। ব্যর্থ গোয়েন্দাদের সরিয়ে সেখানে দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে। জঙ্গি হামলার ঘটনার মূলে কারা রয়েছে তা দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস নির্মূলে বৈদেশিক সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই। বাঙালি বীরের জাতি, স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জাতি যেভাবে জয়ী হয়েছে, সেভাবেই দেশ থেকে জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গি নির্মূল করা সম্ভব। এরশাদ আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। ঘরে ঘরে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক শিক্ষিত যুবক জঙ্গি হয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে না পারলে এ সমস্যা আরো দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। জঙ্গি সমস্যার কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই ভাবমূর্তি সরকারকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। গুলশান ট্র্যাজেডির পর বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা হারিয়ে ফেলবে মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, এ দেশে কোরিয়ানরা আসে, জাপানিরা আসে, আমেরিকানরা আসে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে ভাবতে হবে। তা না হলে এ দেশে বিদেশি উদ্যোক্তারা আসবে না।
জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই
উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিস্তার বিচ্ছিন্ন বা স্বতঃস্ফূর্ত কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সুপরিকল্পিত দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক হঠকারিতা ও অবিমৃশ্যকারিতা। এর শেকড় অনেক গভীর। এ থেকে উত্তরণে যে সংগ্রাম তা-ও হতে হবে সর্বাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি। জঙ্গিবাদের এই ভয়াবহ বিস্তারকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে এ থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুজন। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গি আক্রমণে দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত, ক্ষুব্ধ। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে মুক্ত চিন্তার লেখক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী, সংখ্যালঘু ও ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীদের টার্গেট করে ধারাবাহিক এসব হত্যাকাণ্ড যেন অন্তহীন মৃত্যুর এক মিছিলের সূচনা করেছে, যা বাংলাদেশকে এক প্রতিকারহীন আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আবহের মধ্যে হামলার ধরন ও মাত্রা বিবেচনায় গুলশান ও শোলাকিয়ার সমন্বিত ও নৃশংস এ দুটি হামলার ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের এক নতুন স্তরে এনে ফেলেছে। এ নিয়ে কোনো প্রকার দ্বিধা-সংশয়, দায় এড়ানো বা দোষারোপের সময় আজ অতিক্রান্ত। অমোঘ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ আজ জঙ্গি উপদ্রুত এবং জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উগ্রপন্থা প্রভাবিত। এ থেকে মুক্তি পেতে হবে এখনই।
বিবৃতিতে তারা বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের জরুরি দুটি কর্তব্য রয়েছে। প্রথমত, সম্ভাব্য হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে চিহ্নিত এবং নিবৃত্ত করা। দ্বিতীয়ত, উগ্রপন্থার বিস্তারের সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চিহ্নিত করে তা উপশমের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রথম করণীয়ের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কেবল শক্তি প্রয়োগ করে এই সন্ত্রাসবাদ দমন করা যায়নি। বরং উল্টো তা সন্ত্রাসবাদীদের শক্তি ও সমর্থন বৃদ্ধিতে এবং দেশে দেশে তার বিস্তারেই অবদান রেখেছে। তাই এই উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদ রোধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সমাজের ভেতর থেকেই। উগ্রপন্থাকে উৎসাহিত করে এমন যেকোনো তৎপরতাকে চিহ্নিত ও প্রতিহত করার জন্য সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে। তার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্য আজ অবিকল্প।
তারা বলেন, জঙ্গিবাদী ন্যারেটিভের মোকাবিলায় একটি বিকল্প ন্যারেটিভের প্রস্তাবনা আজ জরুরি, যা সমাজের অভ্যন্তরে উগ্রপন্থার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। এবং একটি উদার, সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তি রচনা করবে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ১৬ই জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশব্যাপী এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় এই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হবে শাহবাগে, জাতীয় জাদুঘরের সামনে। এই কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার জন্য সমমনা সব সংগঠন ও নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে সুজন।
পুরনো শর্তে অনড়
সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বিভিন্ন পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহ্বান এলেও এ ইস্যুতে পুরনো শর্তে অনড় আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতকে সঙ্গে রাখলে বিএনপির সঙ্গে বসার সুযোগ নেই। যেকোনো ইস্যুতে এক টেবিলে বসতে হলে বিএনপিকে আগে জামায়াত ছাড়তে হবে। তবে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সম্মিলিত উদ্যোগের বিষয়ে একমত আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের দাবি ওঠে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে। দেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গি হামলার সঙ্গে জামায়াত ও শিবির সরাসরি জড়িত বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে আওয়ামী লীগ। শুধু আওয়ামী লীগ নয় জোটবদ্ধভাবেও একই দাবি জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে সম্প্রতি মানববন্ধনসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে। গুলশান হত্যাকাণ্ডের পরই খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব করলে সরব হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি নেত্রীর এ আহবান সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য রাখেন দলটির নেতারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি তো এখনো চিহ্নিত রাজাকার জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। আগে তারা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক, পরে আমরা দেখবো। একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অবশ্যই, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে। এটা আমরাও মনে করি। কিন্তু জাতীয় ঐক্য হবে কার সঙ্গে? যিনি জঙ্গি লালন করছেন, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তার সঙ্গে? তাহলে তার সঙ্গে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব? উনি আগে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করুক। অতীত ভুলের জন্য অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ করুক। তাহলে উনার সঙ্গে জনগণের ঐক্য হতে পারে। আমাদের ঐক্যও হতে পারে। কারণ, জাতীয় ঐক্য আমরাও চাই। হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার এই আহ্বান সবার কাছেই অবাক করার বিষয় হয়েছে। হ্যাঁ যদি এই কথাগুলো খালেদা জিয়ার অন্তরের কথা হয়, তাহলে তিনি অতীত উপলব্ধি নিয়ে আগামীর পথ চলা শুরু করবেন। হানিফ আরও বলেন, খালেদা জিয়া যদি অতীত কর্মকাণ্ডের ওপর অনুতপ্ত হয়ে এই কথাগুলো বলে থাকেন তাহলে জাতি আশাবাদী হবে। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে এ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে জাতি হিসাবে আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতনভাবে ঐক্যবন্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তার কারণ খুঁজে পেতে গিয়ে জামায়াত ও শিবিরের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আর এ পর্যন্ত গুপ্তহত্যার ঘটনায় যারা আটক হয়েছে তাদের জবানবন্দিতে বলছে, তারা কোনো না কোনো সময় জামায়াত এবং শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D