দিন বদলের বারতা নিয়ে এলো বাংলা নববর্ষ

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৬

দিন বদলের বারতা নিয়ে এলো বাংলা নববর্ষ

139896_1আনন্দ ছন্দ কাঁঠালি চাপার গন্ধ, পহেলা বৈশাখে গাছেরও ঐ শাখে, কাঁক কোকিলে দন্দ্ব’ এমন অসংখ্য গানের কলি বারবার মনে করিয়ে দেয় পহেলা বৈশাখের কথা।

আজ রাত পোহালেই বাংলা নববর্ষ। পুরোনো সব গ্লানি মুছে নতুনের আগমনী বার্তা জানান দিতেই যেন বারে বারে নতুন করে, নতুন রঙে ফিরে আসে বাংলা নববর্ষ।

তাই বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বরণ করে নিতেই চলছে নানা উৎসবের আয়োজন। এই দিনে সবার প্রত্যাশা নতুন বছরটি হবে সুখ-ছন্দের, প্রতিটি দিন কাটবে আনন্দ- হিল্লোলে।

এবার এমন সময় নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে বাঙালি যখন ধর্মের নামে কিছু বিপথগামীর খুনের নেশায় জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অসিঞ্চুতা দিনদিনই মাথাচাড়া দিচ্ছে। রাজনীতিতে আপাত স্থিতিশীলতা থাকলেও উত্তেজনার পারদ নামছে না।

বর্ষবরণ উপলক্ষে এবার নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। উৎসব পালনে আরোপ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ।

মোগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) তার রাজসভার জ্যোতিষী আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে একটা সার্বজনীন বর্ষপঞ্জি তৈরির দায়িত্ব প্রদান করেন। তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সৌরমাসভিত্তিক একটা ফসলি সাল উদ্ভাবন করেন। সম্রাট আকবরের দিল্লির সিংহাসনে আরোহনের দিনকে স্মরণীয় রাখতে ১৫৮৪ সালের ১০ বা ১১ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ ধরে সাল গণনা করার রীতি প্রবর্তন করা হয়।

সম্রাট আকবর তার রাজত্বকালে ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র এই ফসলি সনের শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে এই ফসলি সনের নামই বাংলা সাল বা বঙ্গাব্দ হয়েছে।

বাংলা সন সবসময়ই কৃষিভিত্তিক। আজও আমাদের কৃষকসমাজ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করেই হাল চালান, ফসল ফলান। ফসলি সনের সাথে কৃষকের আত্মার সম্পর্ক।

মাঠের শ্রম যখন ফসল হয়ে ঘরের আঙ্গিনায় উঠে, আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন পূরণে আশাবাদ জাগে তখন উৎসবের আমেজ পাওয়া যায়। আগে উৎসবগুলো ঘিরে গ্রামে গ্রামে গ্রামীণ সংস্কৃতির যে সকল আসর বসত মেলা তার অন্যতম।

এ সকল উৎসবে আনন্দে মেতে থাকত গ্রামের মানুষ। মেলায় মানুষের ঢল নামত। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে হৈচৈ করে বেড়াত আবাল বৃদ্ধ বণিতা। মেলাকে ঘিরে হস্তশিল্পের নহর বয়ে যেত। কৃষক তার সারাবছরের ঘর-গৃহস্থালির সরঞ্জাম এখান থেকেই সংগ্রহ করতেন।

সেই কৃষ্টি-কালচার-উৎসব গ্রামে হারিয়ে যেতে বসেছে। তার পরিবর্তে শহুরে উৎসবে উৎসাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। গ্রামের আনাচে-কানাচে কে আর পৃষ্ঠপোষকতা করতে চায়।

মাটির সানকিতে একদিন পান্তা-ইলিশ খেয়ে গ্রাম-বাংলার সেই সুখস্মৃতি কি কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে?

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এখন নানা ধরনের বর্ণিল আয়োজন হতে দেখা যায়। তবে আজও মঙ্গল শোভাযাত্রা রয়েছে এর সর্বাগ্রে।

পহেলা বৈশাখ ভোরে বর্ণিল আয়োজনে এখন রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রায় তিন দশক হতে চলল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।

পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি

১. পহেলা বৈশাখ উদযাপনে চুড়ান্ত প্রস্তুতিতে বুধবার রমনা বটমূল এলাকা পরিদর্শন করেন ডিএমপি কমিশনার। এসময় সোয়াট বাহিনী মহড়া দেয়। ডগ স্কোয়াড দিয়েও তল্লাশি চালানো হয়।

২. বুধবার বিকেলে রমনা বটমূলে চুড়ান্ত মহড়ায় ছায়ানটের কর্মীরা অংশগ্রহন করে।

৩. বুধবার বিকেলে চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে ব্যস্ততা চুড়ান্ত পর্যায়ে।

পহেলা বৈশাখ নববর্ষ উদযাপনে কর্পোরেট পুঁজির দৌরাত্ম্যে আমাদের স্বকীয়তা যেন হারিয়ে না যায়, উৎসবে-আমেজে ফিরে আসুক প্রাণের স্পন্দন, যাতে প্রতিটি বাঙালি সামিল হতে পারে সম্প্রীতির অটুট বন্ধনে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল