২৭শে মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কচুরিপানায় ভরা জলাশয়ে আছে নানা রকম লতাগুল্ম। এসব লতাপাতার ফাঁক ভেদ করে শোনা যায় কিচিরমিচির ডাক আর ডানা ঝাপটানোর শব্দ। দল বেঁধে যখন ওড়ে, তখন জলাশয়সহ আশপাশের এলাকার আকাশ ঢাকা পড়ে পাখির ডানায়। শীতে পরিযায়ী পাখির এমন কোলাহল কোনো নির্জন স্থানে নয়, সিলেট নগরের ঘনবসতিপূর্ণ ঘাসিটুলা এলাকার একটি জলাশয় ঘিরে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির ওড়াউড়ি অন্য রকম করে রেখেছে গোটা এলাকাকে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রায় তিন বছর ধরে জলাশয় ঘিরে শীত মৌসুমের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। শীত শেষে আবার ফিরে যায়। ঘাসিটুলা সিলেট নগরীর সুরমা নদীর তীরের একটি মহল্লা। সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার এই মহল্লা নগরের অন্যতম একটি ঘনবসতি। যে জলাশয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা, সেই জলাশয়ের পাশ দিয়ে রয়েছে মহল্লায় যাতায়াতের একটি রাস্তা। আশপাশে বসতবাড়ি। শুধু জলাশয়ের একটি দিকে কবরস্থান। মূলত কবরস্থানের নির্জনতা জলাশয়কে অতিথি পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্যে রূপ দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছু দেশি পাখির কোলাহল ছিল জলাশয় ঘিরে। শীত এলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে। জলাশয়ের আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, বিচরণ করা অতিথি পাখির অধিকাংশ সরালি হাঁস প্রজাতির। সঙ্গে সাদা ও ধূসর বকও রয়েছে। কচুরিপানায় পূর্ণ জলাশয়ে মাছসহ নানা রকম খাবার সংগ্রহ আর ওড়াউড়িতে মগ্ন থাকতে দেখা গেছে পাখিদের।
জলাশয় থেকে পাখিগুলো উড়ে উড়ে সুরমা নদী পার হয়ে হাওর ও বিলে পর্যন্ত যেতে দেখা যায়। দিন শেষে ওই সব পাখি আবার দল বেঁধে জলাশয়ে থাকে। জলাশয়ের এক পাশে ঘাসিটুলাসহ আশপাশ এলাকায় যাতায়াতের রাস্তা। সেই স্থান অনেকটা জনারণ্যের মতো। কিন্তু পাখিগুলো রাস্তালাগোয়া স্থানে নির্বিঘ্নে ওড়াউড়ি করতে দেখা গেছে।
সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও জলাশয়ে বিচরণ করা পাখির প্রতি কোনো ধরনের বিরূপ আচরণ করা সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে অতিথি পাখির ঝাঁক দেখে এমনই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা। এ জন্য ছোট-বড় সবাইকে অতিথি পাখির প্রতি একধরনের মায়ার দৃষ্টি রাখতে দেখা যায়।
ঘাসিটুলার বাসিন্দা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পরিযায়ী পাখি হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি সুযোগ পেলেই আমরা এলাকাবাসীকে অবহিত করি।’ সকালে ও দুপুরে দুই দফা পর্যবেক্ষণ করে জলাশয়ে পাখি দর্শনার্থী কয়েকজনকে পাওয়া যায়। নবাব রোড ও বাগবাড়ির বাসিন্দা ফারুক হোসেন ও শাহরিয়ার আলম নামের দুজন শীতের শুরুতে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে পাখি দেখেন বলে জানান। লোকালয়ে একসঙ্গে এত পাখি বিচরণ তাঁরা প্রথম দেখেছেন বলে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন।
নগরে নির্ভয়ে অতিথি পাখির আশ্রয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান জানান, মূলত দুটি কারণে অতিথি পাখির এমন অস্থায়ী নিবাস হয়। একটি খাবার, অন্যটি নিরাপত্তা। তিনি বলেন, ‘সরালি আমাদের আবাসিক পাখি হলেও বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের সীমান্ত এলাকার জলাশয় ও মিয়ানমারে বিচরণ করে বেশি। শীতকালে খাবার ও নিরাপদ আবাসের প্রয়োজনে পরিযায়ী স্বভাব ধারণ করে। নিরাপত্তা ও খাবারের জন্যই লোকালয়ে এ পাখি নিবাস গড়েছে। যত দিন এ দুটি পাবে, তত দিনই থাকবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D