১৫ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৬
উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে উদ্ভট কারণ দেখিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আজকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলেই আবার একদল আন্দোলনে নামে পরিবেশ রক্ষার নামে। কিছু কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা এদেশের মানুষের আছে। আমি জানি না- কীভাবে আসে!। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকে ঘিরে হতাহতের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্ভট কথা বলে অযথা কিছু মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নেয়া হলো। আমি জানি না, উদ্দেশ্যটা কী? আমরা যত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সবাইকে একটু স্বস্তি দিয়েছিলাম, এখন সেই উৎপাদনে বাধা দেয়ার চেষ্টা… অথচ এটা আমাদের উন্নয়নের জন্য দরকার। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই এলাকার কোনো ক্ষতি হয়নি। সেখানে বরং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধান হচ্ছে, গাছপালা হচ্ছে, সব হচ্ছে, মানুষ বসবাস করছে। সমপ্রতি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কয়লাবাহী কোস্টারডুবির ঘটনায় পরিবেশবাদীদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়লার একটা কার্গো ডুবে গেলো নদীতে, আর কিছু লোক চিৎকার করল, পানি নাকি সব দূষিত হয়ে গেছে। শৈশবে কয়লার ওয়াটার ফিল্টার ব্যবহারের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, এটা সায়েন্টিফিক্যালি কতটা সত্য…কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে দেখেছি, আমাদের বাড়িতে পানির ফিল্টার ছিল। সেই ফিল্টারের ওপরের স্তরে কয়লা থাকত। কয়লা পানিকে দূষণমুক্ত করে। এখনো গ্রামেগঞ্জে এই ফিল্টার দিয়ে পানি দূষণমুক্ত করে। তাহলে এটা কী করে দূষিত হলো? তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট কারখানায় চলে যায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। অক্সফোর্ডেও আছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ও এশিয়ার অন্যতম আধুনিক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী কারাগারের কিছু অংশ ঘুরে দেখেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, দেশের কারাগারগুলোকে কেবল বন্দিদের আটক রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করার পরিবর্তে সংশোধনাগারে পরিণত করা হবে। কয়েদিদের সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। জাতির পিতা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য এই কারাগার যেন একটি সংশোধনাগার হিসেবে বন্দিসেবা দিতে পারে। যারা জঘন্য অপরাধী তাদের কথা আমি বলব না, যাদের মানুষ হবার সুযোগ রয়েছে তাদের যেন সংশোধনের সুযোগটা করে দিতে পারি।
অপরাধীদের অপরাধ করার মানসিকতা দূর করে তাদেরকে কর্মমুখী জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সরকার ও রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। তিনি বলেন, মানুষ অপরাধ করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও বন্দি করা হয়। অপরাধপ্রবণতা থেকে অপরাধীদের সরিয়ে আনার উপায় সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হবে। তিনি অপরাধ সংঘটনের কারণ সম্পর্কে বলেন, অনেকের অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। এ ছাড়া, এখন নতুন নতুন অপরাধ দেখা দিচ্ছে। সময়ের বিবর্তনে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে আর অপরাধ প্রবণতাতেও ভিন্নতা আসছে। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে অপরাধীদেরকে তার অপরাধ প্রবণতা থেকে সরিয়ে এনে সংশোধন করা। সংশোধন করে তার জীবনটা কর্মমুখী করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারাগারেই অনেক জিনিসের প্রয়োজন হয় সেটা কারাগারেই তারা তৈরি করতে পারবে, উৎপাদন করতে পারবে। এগুলো বাজারজাত করার ফলে যে আয় হবে তা থেকে উৎপাদনকারী কয়েদিদের মজুরি দেয়া হবে। এই মজুরি তাদের জন্য জমা থাকবে। প্রয়োজনে কয়েদিরা তাদের পরিবারকেও এর কিছুটা অংশ যেন পাঠাতে পারে তার ব্যবস্থাটাও করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েদিদের মাসে একবার পাবলিক টেলিফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিলে তাদের সংশোধনে বিশেষ সহায়ক হতে পারে । প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জমানো কিছু সঞ্চয় নিয়ে কয়েদিরা মুক্তি পেলে বাকি জীবনটা সে কিছু করে খেতে পারবে। আর অপরাধের পথে পা বাড়াবে না।
দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কারণে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কারাগারে থাকলে, আসল ভুক্তভোগী হয় তার পরিবার। আমার মতো এই কষ্টটা হাড়ে হাড়ে আর কেউ বুঝবে না। কারাবন্দিদের মানবেতর পরিবেশে বসবাস করতে হয়। কারণ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মুঘল আমলের দুর্গের আদলে তৈরি। যেখানে ঘোড়াশাল থেকে শুরু করে অনেক কিছু ছিল। এটিকে বৃটিশ আমলে কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। এরপর পাকিস্তান আমলে এটা পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। কাজেই এটা কারাগারের আদলে তৈরি হয়নি। যেখানে মাত্র আড়াই হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতা সেখানে হাজার হাজার বন্দি অত্যন্ত মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতো। নতুন জেলখানায় প্রচুর জায়গা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কয়েদিদের নানা উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার জন্য জেল কতৃর্পক্ষকে নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে তিনি কারারক্ষীদের এবং কয়েদিদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বর্তমান নাজিমউদ্দিন রোডের জেলের ফাঁকা জায়গার পরিবর্তে এই কেরানীগঞ্জেই জেলখানার পাশে কারাবন্দি এবং কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণের ঘোষণা দেন। তিনি কারা হাসপাতালটি ১৬ শয্যা থেকে বাড়িয়ে কারাগার সংশ্লিষ্ট এবং জনগণের সুবিধার্থে দুই শ’ থেকে আড়াই শ’ শয্যার করে নির্মাণের পাশাপাশি কারারক্ষীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনে নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ এবং যাতায়াতে বাস সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কোথায় কি সমস্যা তা চিহ্নিত করেই উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি, তাই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ উন্নয়ন হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
টোল দিলেন ফ্লাইওভারে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল টোল দিয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে কেরানীগঞ্জে যান। সরকারি গাড়িবহর ফ্লাইওভার অতিক্রমকালে তিনি টোল পরিশোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী কেরানীগঞ্জ যাওয়ার এবং সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়িবহরের সব যানবাহনের জন্য টোল পরিশোধ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D