সিলেট ২রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০১৬
পেশায় চা-শ্রমিক। কিন্তু বিয়েশাদি লাগলে তাঁকে আর চা-শ্রমে পাওয়া যেত না। বিয়ের বাদকদলের সদস্য হওয়ায় বাদ্যযন্ত্র নিয়েই মশগুল থাকতেন। এভাবে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন চা-শ্রমিক গিনাই লোহার (২৬)। কিন্তু তাঁর আর ফেরা হয়নি।
গত ২১ এপ্রিল রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার হাওরপারের একটি গ্রামে বিয়ের বাদ্য বাজাতে যাচ্ছিলেন গিনাই লোহারসহ তাঁর দলের পাঁচ বাদকশিল্পী। পথে ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে মারা যান সিলেট নগরের লাক্কাতুড়া চা-বাগানের এই শ্রমিক।
সেই থেকে গিনাই লোহারের পরিবারে কান্না থামছে না। ঘরে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও পিঠাপিঠি চার মেয়েসন্তানের ভবিষ্যৎ কেমন কাটবে, সেই চিন্তায় চা-পল্লির প্রত্যেক বাসিন্দাও যেন উদ্বিগ্ন।
গিনাই লোহার চা-বাগানের স্থায়ী শ্রমিক না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের সহায়তাও মিলছে না তাঁর পরিবারের। মা গঙ্গা লোহার (৫৫) লাক্কাতুড়া চা-বাগানের একজন প্রবীণ নারী চা-শ্রমিক। চা-বাগানের উপরেরটিলা নামের চা-পল্লিতে তাঁদের ঘর।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গিনাই লোহারের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। কাছে যেতেই অনেকটা বিলাপ করে গঙ্গা বলছিলেন, ‘হে (গিনাই) তো আছিল আমরার ফুর্তির একটা মানুষ। এক তুফানে আমরার চা-পল্লির ফুর্তিটাই মাটি করি দিল! চার কইন্যা আর ছেলের বউটা খেয়ে-পড়ে কেমনে চলবে, হেই চিন্তায় তো দিন আর কাটছে না!’
বিয়ের বাদকদলে মনোযোগী থাকায় গিনাই লোহার চা-বাগানের স্থায়ী শ্রমিক হতে পারেননি বলে তাঁর পরিচিতজনেরা জানান। চা-বাগান ছাড়াও আশপাশ এলাকায় বায়না পেলে কাজ ফেলে চলে যেতেন বিয়ের বাদ্য বাজাতে। এভাবে দৈনিক মজুরিতে একেকটি বিয়ে থেকে তাঁর ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার হতো। তা দিয়েই চলত সংসার।
গঙ্গা জানালেন, ছোটবেলা থেকেই বিয়ের বাদ্য বাজানোর প্রতি বিশেষ টান ছিল গিনাইয়ের। চা-পল্লির কোথাও গানবাজনা হলেই সেখানে চলে যেতেন। একটু বড় হয়েই বিয়ের বাদকদলে যোগ দেন। নেমে পড়েন বাড়তি রোজগারে।
গঙ্গা বলেন, ‘বাজনা বাজাইতে পারব না বইলা গিনাই স্থায়ী (স্থায়ী শ্রমিক) অইতে পারল না। এখন তো বাবুরাও (বাগান কর্তৃপক্ষ) দেখভাল করার কথা না। কী করি বুঝিও পারি না!’
গিনাইয়ের স্ত্রী রীনা লোহারের (২২) পরনে এখন বিধবার সাজ। কোলে দেড় বছরের ছোট মেয়ে। বড় মেয়ে রত্না লোহার (১০) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার মৃত্যুর পর সে আর স্কুলে যাচ্ছে না। রীনাও মেয়েকে আর স্কুলে পাঠানোর সাহস করেন না। বললেন, ‘কী কইমু, আমি তো শেষ!’
লাক্কাতুড়া চা-বাগানে একটি বেসরকারি সংস্থার ‘মানবাধিকার কর্মী’ হিসেবে কর্মরত আছেন দিপালী গোয়ালা। গিনাই লোহারের প্রতিবেশীও তিনি। জানালেন, ঘটনার পরপরই তাঁরা চাঁদা তুলে কিছু অর্থ সহায়তা গিনাইয়ের পরিবারকে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত কমিটিও এভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। গিনাইকে একজন ‘শিল্পী’ অভিহিত করে দীপালী বলেন, ‘কিন্তু এসব সহায়তায় তো আর তাঁদের দিন চলবে না। এ জন্য আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে ওই পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে সহায়তা চাই।’
যোগাযোগ করলে ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুড়া টি এস্টেট ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে আমার কাছে এ রকম কোনো প্রস্তাব অফিশিয়ালি আসেনি। যদি কেউ করেন, তাহলে অবশ্যই সহায়তা করব।’
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd