নাসিক নির্বাচনে আমাদের আংশিক জয় হয়েছে: মির্জা আলমগীর

প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬

নাসিক নির্বাচনে আমাদের আংশিক জয় হয়েছে: মির্জা আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের চলমান আন্দোলনে ‘নারায়নগঞ্জের নির্বাচন’কে আংশিক বিজয় হিসেবে দেখছে বিএনপি। শনিবার সকালে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ নারায়নগঞ্জের নির্বাচনকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখি। সেখানের নির্বাচনে আমাদের যে দীর্ঘকালের সুষ্ঠু নির্বাচনের সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের আংশিক বিজয় আমরা লক্ষ্য করেছি অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়েছে অন্ততঃ বাহ্যিকভাবে একটা পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। এইটুকু আপনারা বলতে পারেন যে, আমাদের সেই সংগ্রামের একটা আংশিক বিজয় হয়েছে নিসন্দেহে।”

‘‘ ওই নির্বাচনের ভেতরে কী হয়েছে, সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমাদের বক্তব্য গেছে, আপনারা শুনেছে। আমরা এই বিষয়টা আরো পরীক্ষা করছি, আমরা দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করছি। এরপরে আপনাদেরকে আরো ভালোভাবে বলতে পারবো আসলে কী ঘটেছে?”

সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ৩০২ নম্বর কেবিনে মাহমুদুর রহমানকে দেখতে ফুল নিয়ে যান বিএনপি মহাসচিব। গ্রেপ্তারের ২১ মাস পর গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন মান্না। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এই নেতাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন।প্রায় আধঘণ্টা কেবিনে থেকে মান্নার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন ফখরুল। এ সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী সেলিম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগ্রামী জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখতে আমি হাসপাতালে এসেছি। দীর্ঘ ২২ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন মিথ্যা মামলায়। এখন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আশা করি উনি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।”

নারায়নগঞ্জবাসী ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে জবাব দিয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ এটা উনার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য। আমরা যেটা মনে করি, সেটা হচ্ছে যে, নারায়নগঞ্জের নির্বাচন একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে কখনো জাতীয় নির্বাচনের কোনো ফলাফল বা তার সম্পর্কে ধারনা করা সঠিক নয়। স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুগুলো সেভাবে প্রাধান্য পায় না।”

‘‘ আজকে সংকটটা কোথায়? দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের ভোটের অধিকার নেই, তারা ভোট দিতে পারে না সঠিকভাবে। একটা কথা আমি বলতে চাই, এই যে সংগ্রাম চলছে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার, সংগ্রাম চলছে জনগনের অধিকার ফিরিয়ে আনবার, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবার, সেই সংগ্রামই আজকে কিছুটা হলেও আমরা মনে করি যে আংশিকভাবে একটা সাফল্য পেয়েছি। একটা নির্বাচন ভোটগ্রহন পর্যন্ত বাহ্যিকভাবে হলে মোটামোটি একটা দেখা গেছে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ নারায়নগঞ্জের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তা আমি বলছি না। আমি বলছি এই নির্বাচন বাহ্যিকভাবে ভোটগ্রহন পর্যন্ত একটা অবস্থা ছিলো। তারপরে কী হয়েছে, সেটা আমরা জানি না। এই নির্বাচন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নগুলো আমরা তদন্তের পরে জানাবো।”

মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পরাজয়ের কারণ কি প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এখানে প্রার্থীর পরাজয় নয়। এই নির্বাচনে কী ঘটছে, তা তদন্ত করে আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো।”

বিএনপি মহাসচিব কেবিনে প্রবেশের সময়ে দেখা হয় বিএসএমএমইউওয়ের উপাচার্য কামরুল হাসানের সাথে হয়। তাকে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছাও জানান উপাচার্য।

এক সময়কার জাসদ ছাত্রলীগের তুখোর নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন। বামধারার এই ছাত্রনেতা নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন; পেয়েছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও।

ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান মান্না। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের পদ হারালে তিনি নাগরিক ঐক্য নামে নতুন দল গঠন করেন।

দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধ-হরতাল ও সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান মান্না। সংলাপ না হলে আবারও ‘ওয়ান ইলেভেনের’ কথা বলে আলোচিত হন তিনি।

এরপরই বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার টেলিফোন আলাপের দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়, যেখানে তার কণ্ঠে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহের সুর শোনা যায়।

ওই কথোপকথনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ ফেলার’ কথাও বলতে শোনা যায় তাকে। এই প্রেক্ষাপটে ওই বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মান্নাকে আটক করে পুলিশ। সেনা বিদ্রোহে উসকানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল