সিলেট ২রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৬
আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। বন্দরে নেই যথেষ্ট সিসি ক্যামেরা, যা আছে তার অনেকটি নষ্ট। মনিটরিং ব্যবস্থাও দুর্বল। ফায়ার অ্যালার্ম অকার্যকর। নিরাপত্তা দেয়ালও ভেঙে গেছে কয়েক জায়গায়। মোবাইল ভেহিক্যাল স্ক্যানারটিও সঠিকভাবে কাজ করছে না। দীর্ঘদিন যাবৎ এ বন্দরে বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগে জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়ছে কনটেইনার পাচারের ঘটনা। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি বন্দরের এসব ঝুঁকি তুলে ধরে সেগুলো প্রতিকারে করণীয় ও অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশসহ একটি সচিত্র প্রতিবেদন পাঠিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এমন তথ্য দিয়ে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরসহ সব বন্দরের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের একটি অন্যতম কেপিআই ও অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্রস্থল। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বন্দরের কোস্টাল শিপিং চুক্তি হওয়ায় এ বন্দরের ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। এ অবস্থায় বন্দর নিরাপত্তায় ১৯৪৮ সালে প্রণীত পরিকল্পনা পরিবর্তন এবং যুগোপযোগী করা দরকার। বন্দরের নিরাপত্তা দুর্বলতার অন্যতম কারণ মোবাইল ভেহিক্যাল স্ক্যানার অকার্যকর এবং অব্যবহৃত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সাত পৃষ্ঠার ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান একটি মোবাইল ভেহিক্যাল স্ক্যানার প্রায়ই নষ্ট থাকে। দীর্ঘদিন নষ্ট থাকার পর সম্প্রতি এটি চালু করা হলেও তেল সরবরাহ অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে না; ফলে বিভিন্ন সন্দেহজনক কনটেইনার দ্রুততম সময়ে তল্লাশি করা যাচ্ছে না, যা বন্দরের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। বন্দরে অপর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও মনিটরিং দুর্বলতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, বর্তমানে বন্দরের ৩০ শতাংশ রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়, বাকি ৭০ শতাংশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে সিসি ক্যামেরার বাইরে। বন্দরে স্থাপিত ১২৬টি সিসি ক্যামেরার অনেকটিই বর্তমানে অকার্যকর। প্রায় ৫০টি সিসি ক্যামেরা নষ্ট অথবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বন্দরের ফায়ার অ্যালার্মটিও সঠিকভাবে কাজ করছে না। গোয়েন্দা তথ্যানুসারে বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হওয়ায় ৩০টি ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ফায়ার সিস্টেম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানা বরাবর দেয়াল ও গ্রিল থাকলেও অনেক স্থানে নিরাপত্তা দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে যাওয়ার পর তা মেরামত না করায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরে ক্যারেট ব্যবসা এবং এ ব্যবসা নিয়ে ক্যারেট পার্টির সঙ্গে সরকারের প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, এ ধরনের ব্যবসা বন্দরের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ বিষয়ে নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরকে নিরাপদ রাখতে যা যা করা দরকার তা করার জন্য এরই মধ্যে চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের শতভাগ এলাকা যাতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয় সে ব্যাপারেও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এদিকে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের নির্ধারিত পোশাক না থাকা এবং ইউনিফর্ম না পরে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিকেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, বন্দর নিরাপত্তাকর্মীদের ইউনিফর্ম থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে অথবা অসদুদ্দেশ্যে ইউনিফর্ম না পরে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তা সদস্য ও আনসার সদস্যদের ইউনিফর্ম একই রকম হওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। বন্দরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার পোস্টে গার্ড না থাকার আরেকটি গুরুতর অভিযোগ তুলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দরের বিভিন্ন স্থানে ৫৩টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার পোস্ট তৈরি হয়েছে। জনবলস্বল্পতা ও অন্যান্য কারণে মাত্র ৮টি পোস্টে সীমিত পরিসরে আনসার দায়িত্ব পালন করছে। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আনসার থাকে না। বন্দরের অভ্যন্তরে হকারদের অবাধ চলাফেরাও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়। নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, এটি তো গোপনীয় রিপোর্ট। কালেকটিং ইনফরমেশন নয়। তার পরও এটা যেহেতু সিকিউরিটি ম্যাটার তাই সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে এবং এ ব্যাপারে বেশ কিছু কাজও হয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd