পরিচালকদের অভিযোগ: সভাপতির নিজস্ব নীতিতে চলছে সিলেট চেম্বার

প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬

পরিচালকদের অভিযোগ: সভাপতির নিজস্ব নীতিতে চলছে সিলেট চেম্বার

সালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ। অর্ডিনারি শ্রেণী থেকে পরিচালক। পহেলা জানুয়ারী ২০১৫ সালে সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব নীতিতে চেম্বার পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পরিচালকদের। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পরিচালকদের অভিযোগের শেষ নেই। চেম্বারের সভায় উপস্থিত পরিচালকদের বক্তব্য/ প্রস্তাবনা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না করে তাঁর সুবিধামতো লিপিবদ্ধ করানো। কার্যবিবরণী পরিচালকদের কাছে প্রেরণ না করা। লিপিবদ্ধ কার্যবিবরণী সংশোধনের প্রস্তাব আমলে না নেওয়া। চেম্বারের কার্যক্রম গতিশীলের লক্ষে গঠিত সাব-কমিটির আহবায়কদের দায়িত্ব পালনে অসহযোগিতা। সাব-কমিটির কার্যক্রম হস্তক্ষেপ। চেম্বারের অন্যতম কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দুই বছর যাবৎ আয়োজনের কোনো উদ্যোগে না নেওয়া। নীল-নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ২০১৭-১৮ সাল মেয়াদী নির্বাচনের জন্য পছন্দের লোকদের দিয়ে নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করা। পরিচালনা পরিষদের সাথে কোনো সভা বা আলোচনা না করে নির্বাচন পিছানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচন পিছিয়ে বর্তমান পরিষদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করা। সিনিয়র সহ সভাপতিকে কোনো কাজের দায়িত্ব না দেওয়া ও কোনো ধরনের সহযোগিতা না করা। তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোনো অভিযোগ গ্রহন বন্ধ। সর্বশেষ ৫০ বছর পূর্তি উৎসব ও আন্তর্জাতিক বার্ণিজ্য মেলা আয়োজনের অজুহাতে আবারো নির্বাচনের মেয়াদ বাড়ানোর আশংকাসহ অভিযোগ পরিচালকদের। মৌখিকভাবে পরিচালকগন অভিযোগ করে কোনো সুরাহ না পেয়ে তাঁকে লিখিতভাবেও জানান। এতেও কোনো সাড়া দেন নি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। কোনো উপায় না পেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন পরিচালকগন। অন্যদিকে, গত তিন বছর মেয়াদকালে একবারও মেলা আয়োজন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী কমিটির ওপর ক্ষুদ্ধ। বর্তমান কমিটির মেয়াদে নতুন সদস্য করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি। এ নিয়ে চেম্বারের পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে, নির্বাচন ভন্ডুল করে ৫০ বছর পূর্তি উপৎসব ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ।
ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না গিয়ে সভাপতির আবেদনের ভিত্তিতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন আরও ৬ মাস পেছানো হয়। মেয়াদ বাড়ানো ক্ষেত্রেও কোনো বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অথচ চেম্বারের এই নির্বাচন গত ১৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে নির্বাচনি তফসিলও ঠিক করা হয়েছিল।
কয়েকজন পরিচালক জানান, হঠাৎ করেই সভাপতি নির্বাচন না করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন কনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। গত ২০ আক্টোবর চেম্বারের সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধির আহবান জানান। তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সুপারিশ সম্বলিত আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করলে মন্ত্রণালয় শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষে আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৮০ দিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে পত্র দেয়া বাণিজ্য মন্ত্রনালয়।
এর পরই চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর বার্ণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন কিবরিয়া সুমন চেম্বার সভাপতির অসহযোগিতার উল্লেখ্য করে লিখিত অভিযোগ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন পরিচালক বরাবর। এতে তিনি বলেন ২০১৫-১৫ মেয়াদে তিনি সিনিয়র সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সভাপতির অনুপস্থিতিতে অনুুুুুুুুুুুুুুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন চেম্বারের নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সভাপতিকে অবগত করলে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গত ৩০ আক্টোবর তিনি হজ পালন করে দেশে ফিরে চেম্বার ভবনে গেলে দেখতে পান তার বসার নির্ধারিত কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। বিষয়টি সভাপতিকে অবগত করলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। সর্বশেষ পরিচালনা পরিষদের সাথে আলোচনা ব্যতিরেখে সভাপতি নির্বাচন ভন্ডুল করতে ৬মাস মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন।
একই দিকে চেম্বর সভাপতির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ ( উপরে উল্লেখিত অভিযোগের মাধ্যে) তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ৫ জন পরিচালক লিখিত আবেদন জানান বার্ণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন পরিচালক বরাবর। অভিযোগকারীরা হলেন- সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এটিএম শোয়েব, শামীম আহমদ, এজাজ আহমদ চৌধুরী, এনামুল কুদ্দুস চৌধুরী, মামুন কিবরিয়া সুমন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, ট্রেড অর্গানাইজেশন অর্ডিনেন্স , ১৯৬১ সংবিধিতে কমিটি গঠন, নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান, হিসাব ও অডিটের নিয়মনীতি সংশোধন করা সমীচীন।
ওই আদেশের (৫) এর উপদাফ (৪) এর (ক) তে শর্ত দেয়া হয়েছে কেবলমাত্র দৈব দূর্বিপাকের কারনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্বব না হলে নির্বাচন বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তক্রমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য পরিচালক, বাণিজ্য সংগঠনের নিকট আবেদন করা যাবে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না করলে কমিটির দায়িত্তশীলরা কমিটি মেয়াদোক্তীণ হওয়ার সাথে সাথে পদবি বাতিল হবে।
(৭) এর উপ দফা (৪) অনুযায়ী নির্ধারিত নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য বিধান মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহনে ব্যর্থ হইলে কার্যনির্বাহী কমিটির সংশ্লিষ্ট সভাপতি, সহ সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সদস্যগণ পরবর্তী ছয় বছর কোন বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে প্রার্থী হইতে পারিবেন না।
এদিকে, বৃদ্ধি করা মেয়াদে ৭ জুলাই ২০১৭ ইং পর্যন্ত বহাল থাকবে বর্তমান কমিটি। আর ৩০ জুন ২০১৭ ইং এ বর্তমান সকল ভোটারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ৫০ বছর পূর্তি উৎসব ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা করতেই বৃদ্ধি করা মেয়াদের জুন মাস পর্যন্ত চলে গেলে বাকি থাকবে মাত্র ৭ দিন। এই অল্প সময়ের চাওয়া হবে বলে পরিচালকদের আশংকা।
এছাড়াও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ৫০ বছরপূর্ণ হওয়ার চেম্বারের পক্ষ থেকে গৌরবোজ্জল ইতিহাস নিয়ে এবার বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুযারি মাসে অনুষ্ঠেয় উৎসব পালনের জন্য ইতোমধ্যে লগো উন্মোচন করেছেন চেম্বার নেতৃবৃন্দ। এর আগে ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ঘটা করো পালন করেছিল সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। তবে এবার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন প্রদান বাধা হবে পারে নির্বাচন ইস্যু। কারণ সময়মতো নির্বাচন না হওয়ায় চেম্বার অনেক নেতা ক্ষুব্ধ। গায়েবি কারণে নির্বাচন হচ্ছে না বলে চেম্বার নেতারা মন্তব্য করেছেন। চেম্বার নেতাদের দ্বন্দের কারণে ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ব্যাহত হবে কি না জানতে চাইলে চেম্বার সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ বলেন বোর্ড মিটিং করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের। অর সিলেট চেম্বারের কোনো বিভক্তি নেই। কয়েকজন মামলাবাজ পরিচালক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, কোনো ধরনের সহযোগিতা তো দুরের কথা এরা সবসময়ই বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠিতে ব্যস্ত াকেন। নিয়মানুযায়ী নির্বাচনের সময় আসলে সিনিয়র সহ সভাপতির রুমে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সিনিয়র সহ সভাপতি তো অফিসই করেন না। নতুন সদস্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯শ সদস্য নেয়া হয়েছে। বার্ণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে চেম্বার নেতার লিখিত অভিযোগ করার বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান। তিনি বলেন নির্বাচন কমিশন েেক জানানো হয় এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারনেই নির্বাচন ৬ মাস পেছানো হয়েছে। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. মামুন কিবরিয়া সুমন বলেন সময়মতো নির্বাচন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিও করতে পারত। তিনি বলেন শুধু আমার দৃষ্টি কোন থেনে নয়, অধিকাংশ ব্যবসায়ী উৎসবের চেয়ে সময়মতো নির্বাচন হওয়ার পক্ষে।
সিলেট চেম্বারের পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শামীম আহমদ রাসেল বলেন বর্তমান সভাপতি সাব কমিটির আহবায়কদের স্বাধীন মত কাজ করতে দেন না। সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করেন। যেমন সম্প্রতি এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী সভাপতির পছন্দের লো না হওয়ায় পরির্বতন করে খন্দকার সিপারকে আহবায়ক করেছেন।
সিলেট চেম্বারের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন অনেক দিন থেকেই ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের কথা শুনে আসছি। দুই বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাও হচ্ছেনা। এগুলোত নির্বাচনের আগে কিংবা পরেও করা যেত। তিনি বলেন নির্বাচনের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। বাড়োনোর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এটি গায়েবিভাবেই হয়েছে। সিলেট চেম্বারের পচিরালক মো. লায়েস উদ্দিন বলেন কিছু পরিচালকদের সাথে হযতো দুরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় মনোমালিন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আলাপ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্ঠা করব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল