২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক::
* শাহী ঈদগাহে সদর উপজেলার কোন খেলার মাঠ নেই-নির্বাহী কর্মকর্তা
* খেলার মাঠ নাম ব্যবহার করে চেয়ারম্যানের ইজারা
ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে মুক্ত বাতাস আর নির্মল বিনোদনের স্থান খেলার মাঠ। এক সময় পাড়ামহল্লায় ছিল খেলার মাঠ। প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলায় মেতে উঠতেন শিশু কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও প্রশাসনের কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে খেলার মাঠ আজ পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে। সদর উপজেলার নিয়ন্ত্রনাধীন শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ সাইনবোর্ড ধারণ করে এই মাঠে চলছে পশুর হাট, মেলা সহ অর্থ উপার্জনকারী বিভিন্ন আয়োজন। যেকারণে সুস্থ বিনোদন থেকে শত সহস্র মানুষ প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছেন নগরের যান্ত্রিক জীবনে যেখানে পা ফেলার জায়গাটুকুও সীমিত সে স্থানে সর্বশেষ যে কটি মাঠ নগরীতে রয়েছে তাতেও দৃষ্টি পড়েছে রাঘব বোয়ালদের। তাদের উদর পূর্তির যেন কোন সীমারেখা নেই। তারা মেতে উঠেছেন টাকার নেশায় আর সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন সুস্থ বিনোদন ও শরীর চর্চা থেকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহে সদর উপজেলা খেলার মাঠ বলে কিছুই নেই। সরকারী ভূমি উপজেলা খেলার মাঠ বলে প্রচারের পর থেকে এ পর্যন্ত মাঠে কোন খেলা হয়েছে কি না তা জানা না গেলেও মেলা ও গরুর হাট বসেছে বারবার। প্রতিবছর অন্ততঃ দুই তিনবার এ মাঠে বসে বানিজ্যমেলা। ঈদ উপলক্ষে বসে কোরবাণীর গরুর হাট । চলতি বছরের জুলাই মাসে শেষ হয় ওই মাঠে আন্তর্জাতিক মেলা। সিলেট মেট্রেপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এ মেলার আযোজন করে। মেলা সম্পন্নের ৫মাসের মাথায় আবারো আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলার। এ মেলাও করছে সিলেট মেট্রেপলিটন চেম্বার অব কমার্স। দেশী বিদেশী পন্যের প্রসারে মেলার যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে এর বিপরীতে নেতিবাচক প্রভাব। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। গত কয়েক মেলায় দেখা গেছে মেলা কর্তৃপক্ষ রাতে সাংকৃতিক অনুষ্টানের নামে নাচ-গানের আয়োজন করে থাকে। ঘনবসতিপূর্ন আবাসিক ও ইন্সটিটিউশনাল এলাকায় এ পর্ব মারাত্মক শব্দ দুষনের সৃষ্টি করে থাকে। বিঘœœ ঘটে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ায়। ডিসেম্বর পরীক্ষার মাস বলে নির্ধারিত। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে এ মাসে চলে নিয়মিত বার্ষিক পরীক্ষা। শাহী ঈদগাহের মত এলাকায় ডিসেম্বরে মেলার আয়োজন নিশ্চিতভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বিঘœ ঘটাবে। রাতে শব্ধ দুষনের কারনে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পরবে না এবং দিনে যানজট সৃষ্টির ফলে সময়মত পরীক্ষার হলে পৌছতে তাদের হিমশিম খেতে হবে। নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, সংক্রামক ব্যাধী হাসপাতাল সহ নামকরা কয়েকটি বে-সরকারী ও আধা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টান। রয়েছে অতি নিকটে এমসি কলেজ ও সরকারী কলেজ। পরীক্ষার মাসে মেলার কারনে অবুঝ ও উঠতি বয়েসী শিক্ষার্থীদের সময়েরও অপচয় ঘটবে। সব মিলিয়ে এক প্রতিকুল পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে আয়োজিত এ বানিজ্য মেলা। তাই মেলা বন্ধের দাবিতে এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে।
নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ সরকারী খাস খতিয়ানের এ মাঠ নিয়ে বিতর্ক ও মামলা-হামলার শেষ নেই। বিগত মেলা চলাকালে আয়োজকদের অনেক জটঝামেলা পোহাতে হয়েছিল মামলা নিয়ে। মাঠটি সিলেট সদর উপজেলার খেলার মাঠ নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠটি আদৌ খেলার মাঠ নয় এবং খেলায় ব্যবহৃতও হচ্ছে না। মাঠের উন্নয়নের নাম দিয়ে প্রায়ই ঈদে গরুর বাজার এবং বছরে দুইতিনবার মেলার জন্য দিয়ে দেয়া হয়। এতে করে কর্তা-ব্যক্তিদের জ্ঞাতবহির্ভুত লাখ লাখ টাকা আয়ও হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মূলত তাদের অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে খেলার নামে মাঠ নাম দিয়ে নিয়ে সরকারী এ ভূমিকে মেলার মাঠ ও গরুর হাট হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ আর্থিক ফায়দা লুটে চলেছেন।
এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি সিলেট মেট্রেপলিটন চেম্বারের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে মেলার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অপেনিংয়ের সময় তারিখ এখনো নির্ধারন করা হয়নি।সিলেট সদর উপজেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মেলার জন্য মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুব-এর বক্তব্য সম্পূর্ন বিপরীত। তিনি বলেন, নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ মাঠটি সরকারী খাস খতিয়ানের ভুমি সত্য। তবে এটা ‘সিলেট সদর উপজেলা খেলার মাঠ’ বলে বরাদ্দের বিষয়টি তার আদৌ জানা নেই এবং ‘সিলেট সদর উপজেলা খেলার মাঠ’ বলে উপজেলা প্রশানের মালিকানাধীন ভূমির তালিকা ও খাতাপত্রে কিছুই নেই্। আয়োজকরা মাঠটিতে মেলা করার জন্য কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন সে বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই বরে জানান তিনি।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের সাথে সোমবার বিকেলে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একটি জরুরী মিটিংয়ে আছেন বলে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহী ঈদগাহ এলাকার কয়েকজন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মাঠ টিকে নিয়ে ফায়দা হাসিলের চিন্তুায় রয়েছেন মশগুল। তিনি এলাকাবাসীর সুবিধা অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনায় আনছেন না। সারা সিলেট রেখে কথায় কথায় শাহী ঈদগাহ মাঠকে সদর উপজেলার খেলার মাঠ দাবী করে মেলা আয়োজনের নামে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বার বার এসএমসিসি কে মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তারা আরো জানান, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা এসএমসিসি’র অন্যতম কর্ণধার বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে একচ্ছত্রভাবে বার বার মেলা করে যাচ্ছেন। ফলে ব্যবসায়ী মহল সহ ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D