সিলেট ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৬
জঙ্গি তালিকায় নাম দেখে থানায় হাজির হওয়া মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের সেই কলেজ ছাত্রী নুরুন নাহার ইরা প্রেমের টানে পালিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পালিয়ে তিনি বিয়েও করেছেন। আজ (বুধবার) ইরাকে আদালতে তুলে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কোনো প্রকার জঙ্গি সম্পৃক্ততা নয়, প্রেমের টানে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের হাত ধরে ঘর থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন ইরা, প্রাথমিক তদন্তে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, পুলিশ ইরাকে তার বাবা-মার কাছে ফেরত দিতে চাইলেও পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা-মা তাকে ফেরৎ নিতে চাননি। এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে বাবা-মায়ের অভিমান চলে। কোনো কিছুতেই বাবা-মা মেয়েকে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় অবশেষে আজ বুধবার তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিতে মুন্সীগঞ্জের আদালতে পাঠিয়েছে শ্রীনগর থানা পুলিশ।
শ্রীনগর থানার ওসি সাহিদুর রহমান জানান, প্রায় এক মাস পূর্বে গত ১৯ জুন বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে নিখোঁজ হন শ্রীনগর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুরুন্নাহার ইরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইরাকে না পেয়ে গত ১০ জুলাই ইরার মা শামীমা আক্তার মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানিয়ে শ্রীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে ইরার সঙ্গে তার স্কুল শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম নয়নের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
তদন্তে জানা যায় সিরাজুল বর্তমানে ঢাকার গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে অনুরোধ করে সিরাজুলকে মঙ্গলবার শ্রীনগর থানায় হাজির করতে বলা হয়। শিক্ষক সিরাজুল থানায় হাজির হওয়ার আধাঘণ্টা পূর্বে ইরা নিজেই থানায় হাজির হন। পরিচয় জেনে পুলিশ তাকে নিখোঁজ হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে। জবাবে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় পুলিশ তাকে আটক করে। কোনো প্রকার জঙ্গি কানেকশন রয়েছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতেই পুলিশ তাকে আটক করে।
এর ঠিক আধা ঘণ্টা পরই একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকার গুলশান ২ এর ৭২ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত আহামেদ গ্রুপের কর্মকর্তা ও ইরার স্কুলের সাবেক শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম নয়ন তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে শ্রীনগর থানায় হাজির হন। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মঙ্গলবার মধ্যরাতে স্বীকার করেন ইরা তাঁর স্ত্রী। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তাঁকেই বিয়ে করে ঘর সংসার করছিলেন ইরা। পরে ইরার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হলে তাঁরা মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় কথা বলেন মেয়ের সঙ্গে। এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে বাবা-মার মান অভিমান চলতে থাকে থানাতেই। কিন্তু বাবা-মাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করা এ বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাঁরা। তাই মেয়েকে বাড়িতে ফেরত নিতে রাজি হননি তাঁরা। অগত্যা পুলিশ ঝামেলা এড়াতে ইরাকে তাঁর স্বামীর কাছে ফেরত না দিয়ে বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে নিরাপত্তা হেফাজতে নিতে।
জানা যায়, শ্রীনগরে একমাস ধরে নিখোঁজ কলেজ ছাত্রী ইরার সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন নিয়ে মঙ্গলবার কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে এ নিয়ে জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মী, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। কয়েকদিন পূর্বে ওই ছাত্রী তার পরিবারের লোকজনকে ফোনে জানান, তিনি পবিত্র স্থানে রয়েছেন এবং ভালো আছেন। তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে লাভ নেই। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো তাঁর সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সংবাদ পরিবেশন করলে নড়েচড়ে বসে শ্রীনগর থানা পুলিশ।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ওই ছাত্রী স্বেচ্ছায় শ্রীনগর থানায় এসে হাজির হন এবং কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন- এজন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করার কথা বলেন। পরিচয় পেয়ে পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে নিখোঁজ সরকারি শ্রীনগর কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুরুন নাহার ইরার বাবা ইয়াকুব আলী ও মা শামীমা বেগম কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকদের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, তাঁদের মেয়ে বিদেশে জঙ্গি মিশনে যেতেই বাড়ি ছেড়েছেন। ফোন পাওয়ার পর তাদের এ ধারণা আরো পোক্ত হয়। তাছাড়া নিখোঁজের কিছু দিন পূর্বে তিনি বাড়িতে ধর্মীয় বই আনা শুরু করেন এবং হঠাৎ করে বোরখা পরা শুরু করেন।
গত ১৯ জুন নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি ইরা। এর ২০ দিন পর গত ১০ জুলাই তাঁর মা শামীমা আক্তার শ্রীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ তাদের বাসা থেকে দুটি ধর্মীয় বই উদ্ধার করে। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি শ্রীনগর সার্কেল) মো. সামসুজ্জামান বাবু জানান, সেগুলো সাধারণ ধর্মীয় বই।
ইরার বাবা জানান, সমষপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাস করেন ইরা। এরপর শ্রীনগর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর মেয়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান। কলেজে যাওয়ার কথা বলেই ওইদিন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ইরা। এরপর আর ফেরেননি।
আরও পড়ুন : ‘জঙ্গি তালিকায় নাম’ দেখে থানায় হাজির কলেজ ছাত্রী
মঙ্গলবার ইরার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া একটি ছবির সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ। ছবিতে দাড়িওয়ালা এক যুবকের সঙ্গে ইরা ও তার আরো দুই বান্ধবী রয়েছেন। ওই যুবকের সন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর নাম সিরাজুল ইসলাম নয়ন (৩৫)। তিনি পাবনার বর্জনাথপুর গ্রামের আ. হামিদের ছেলে। সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে সমষপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ফজলুল হক হান্নুর মালিকানাধীন ঢাকার গুলশান ২ এর ৭২ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত আহামেদ গ্রুপের একজন কর্মকর্তা। তাঁকে ২০১৫ সালে ওই স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ওই বছর এএসসি পরীক্ষার পূর্বে তিনি ইরাসহ আরো কয়েকজনের গাইড হিসেবে তিন মাস নিযুক্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ সিরাজুল ইসলামকে শ্রীনগর থানায় হাজির করার জন্য আহমেদ গ্রুপের কর্ণধারকে অনুরোধ করলে সিরাজুল ইসলামকে ওই প্রতিষ্ঠানের একটি গাড়িতে করে তাঁর কয়েকজন সহকর্মীসহ গুলশান থেকে শ্রীনগরে পাঠানো হয়। সিরাজুল ইসলাম থানায় পৌঁছানোর আধঘণ্টা আগে ইরা স্বেচ্ছায় থানায় হাজির হন এবং তাঁর জন্য অন্য কাউকে হয়রানি না করতে বলেন। বিদ্যালয়ের গাইড থাকাকালে ইরা ও শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর সিরাজুল ইসলাম শিক্ষাকতা ছেড়ে দিলেও তাঁরা ফোনে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত প্রেমের সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। একপর্যায়ে বাবা-মাকে না জানিয়ে ইরা বাড়ি থেকে পালিয়ে সিরাজুল ইসলামকে বিয়ে করে গুলশানের একটি বাসায় সংসার শুরু করেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd