৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৬
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরে সীমানাপ্রাচীরঘেঁষা টিলা, নাম—দুসকির টিলা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে এই টিলার চূড়ায় উঠতে গিয়ে পথে পাওয়া গেল একটি ঘর। টিনের চাল বাঁশ দিয়ে আটকানো। আবার ঘরের মেঝে ও দেয়াল পাকা। এই ঘর পেরিয়ে বাঁ দিকে আরেকটি ঘর। পুরোটা মাটির। চারদিকের উঠান বের করা হয়েছে টিলা কেটে। এর ঠিক পেছনে আরেকটি পাকা ঘর। সদ্য নির্মিত এই ঘর করা হয়েছে টিলার একাংশ কেটে সমতল করে।
এভাবে শুধু একটি টিলায় দু-তিনটি ঘর নয়, বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া ডালিয়া এলাকার তিনটি টিলায় রাতারাতি ঘর তোলা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব টিলায় এ রকম ঘর নির্মাণ করা হয়েছে টিলা সাবাড়ের উদ্দেশ্যে।—এমনটাই অভিযোগ করলেন টিলার পাশে থাকা সমতলের বাসিন্দারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে কথা হয় আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ঘরের ঘেরাটোপে টিলাগুলোও নানা কৌশলে কাটা চলছে। সামনে বর্ষা মৌসুম। এ সময় টিলাধসের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
সিলেট নগরের দক্ষিণে সুরমা নদী। উত্তর দিকে চা-বাগান হওয়ায় উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম দিক বেঁকে ছোট-বড় অসংখ্য টিলা ছিল। এসব টিলা পরিবেশবাদীদের দৃষ্টিতে নগরের জন্য ‘উত্তরের প্রাকৃতিক ঢাল’ হিসেবে অভিহিত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অবকাঠামো নির্মাণে উত্তরের ঢালের টিলাগুলোর অধিকাংশ কাটা পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবশ্য অক্ষত অবস্থায় রাখা একটি টিলার চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। টিলার চূড়ায় এ ধরনের বসবাস প্রসঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ-কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুশতাক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম বসবাস ঝুঁকির। আবার টিলাকে সাবাড় করার একটি কৌশলও বলা যায়।’
সিলেটের সব টিলা আবাসনের কারণেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মুশতাক আহমদ বলেন, ‘দেখা গেছে, এভাবে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসের ফলে টিলাধস দেখা দেয়। ধসের কারণে পরে টিলা কাটা হয়। এটা পরিবেশ আইন ফাঁকি দেওয়ার কৌশল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী ছাত্র হলের পাশঘেঁষা দুসকির টিলা এলাকায় সম্প্রতি দুই দফা সরেজমিনে দেখা গেছে, এই টিলার চূড়া থেকে নিচ পর্যন্ত ১৭টি আধা পাকা টিনশেডের ঘর। এর মধ্যে একটি ‘এতিমখানা’ প্রতিষ্ঠায় টিলার একাংশ কেটে পুকুর ও নতুন আরও সাতটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দুসকির টিলার ওপাশে ডালিয়া এলাকায় পাশাপাশি ছোট আরও দুটি টিলায় ছোট ছোট আরও ১২টি ঘর দেখা গেছে। ১৯ মে সরেজমিনে টিলার চূড়ার ঘরের বাসিন্দা ১২ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা নিজেরা ঘর নির্মাণের বিষয়টি জানালেও নিজেদের ভাড়াটে বলে দাবি করেন। টিলার চূড়ায় পাকা মেঝে আর দেয়ালের মধ্যে টিনগুলো বাঁশ দিয়ে আটকানো ঘরে গিয়ে পাওয়া যায় একজনকে। আবুল কালাম আজাদ নামের মধ্য বয়স্ক এই লোক প্রথমে ভাড়ায় আছেন বলে জানালেও পরে অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি মালিক। এভাবে বসবাস কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি টিলা রক্ষার কথা জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে টিলা কাটার এ রকম কোনো অনুমতি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেন সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। ঘর বানানোর নাম করে কৌশলে টিলা কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ রকম কৌশলী তৎপরতা আসলে একদিনে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ওই টিলাগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D