১লা জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২১
জাতির সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে জনস্বার্থে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনস্বার্থে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে তবে জাতির সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে। জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো দরিদ্র মানুষের পাশে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দাঁড়াতে পারে, তবে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। গতকাল রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ষষ্ঠ দিনের বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি সম্মানিত বিশেষ অতিথি এবং বিশিষ্ট লেখিকা সেলিনা হোসেন মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী রাশিদা খানম এবং নেপালের প্রেসিডেন্টের কন্যা উষা কিরণ ভাণ্ডারি।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু একজন ক্যারিশমেটিক, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতা, দক্ষ সংগঠক এবং দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ভিশন অনুযায়ী বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম সফর হলেও এর আগে ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা সফর করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করা একটি বড় জনগোষ্ঠীকে গত কয়েক বছরে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত আছে। নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, ভৌগোলিকভাবে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বেশি নয়। ভৌগোলিক নিকটবর্তিতা, একই ধরনের সংস্কৃতি, প্রথাসহ অন্যান্য বিষয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করেছে। ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এটি সব সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর এই সম্পর্ককে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হামিদ নেপাল সফর করেন এবং আজকে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, ট্রানজিট, জ্বালানি, পর্যটন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা চলমান রয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব আরো বাড়াতে হবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি এবং এটি কমানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাজার সুবিধা সমপ্রসারিত হলে বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ক্ষেত্র সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। নেপালের জলবিদ্যুৎ ও বাংলাদেশের গ্যাস দুই দেশের উন্নয়নে একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। জ্বালানি বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা জরুরি। কানেক্টিভিটি দুই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি বলেন, ‘ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইট আরো বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সৈয়দপুর ও নেপালের বিরাটনগরের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, নেপালের নদীর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের নদীর সংযোগ ঘটানো সম্ভব হলে নদীপথে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে কানেক্টিভিটি উন্নত করা সম্ভব হবে এবং বাণিজ্য ও পরিবহন খরচ কমানো যাবে। রেলপথ ও সড়কপথের উন্নয়নের মাধ্যমে কানেক্টিভিটি আরো অর্থবহ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, নেপালে রেলওয়ে ট্রানজিটের জন্য রোহানপুরকে পোর্ট অব কল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী। এসময় বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ভিভিআইপি বিমান সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ঢাকায় নেপালি প্রেসিডেন্টের এটি প্রথম সফর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যে ক’জন বিশ্বনেতা যোগ দিয়েছেন তিনি তাদের মধ্যে তৃতীয়। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে নেপালি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। সফররত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্বসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।
বিমানবন্দরে নেপালের প্রেসিডেন্টের সম্মানে ২১ বার তোপধ্বনিসহ বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও নেপালের প্রেসিডেন্ট অস্থায়ী ডায়াসে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন। এ সময়ে দু’দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। রাষ্ট্রীয় এ অতিথি গার্ড পরিদর্শন করেন এবং এরপর উভয় প্রেসিডেন্ট তার নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলকে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি জাতীয় সৃতিসৌধে যান। এসময় তাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, জেলা পুলিশ সুপারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে নেপালের প্রেসিডেন্ট স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি পদ্ম ফুলের চারা রোপণ করেন এবং পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নেপালের রাষ্ট্রপতির আগমনকে কেন্দ্র করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশেপাশের এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দুই দেশের চলার পথ আরো সুগম হবে: প্রধানমন্ত্রী: বাংলাদেশ ও নেপাল এই দুই দেশের চলার পথ আরো সুগম হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময়ই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। সবার অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
SR
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D