বাংলাদেশে জাপানের সব কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০১৬

বাংলাদেশে জাপানের সব কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

11-16-2015-2-11-30-AM-6273705জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) ঢাকা কার্যালয়, সারা দেশের প্রকল্প, জাপানিজ স্কুলের ছাত্রছাত্রী, জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে নিরাপত্তা দিতে ও জোরদার করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত এক মাসে তাদের জরুরি ভিত্তিতে সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশি পাহারা দিতে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে জাপান। এ ছাড়া তারা সব কার্যালয়ে নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা ৬ ও ৭ আগস্ট ঢাকা সফরে আসবেন। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সফরসঙ্গীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশের নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন শিনিচি কিতাওকা। এসব আলোচনার মধ্যেও শীর্ষে থাকবে নিরাপত্তার বিষয়টি। বাংলাদেশে অবস্থানরত জাইকার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোট ২৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে জাপানের সাত নাগরিক নিহত হন। ওই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বিচলিত জাপান। তাই জাইকার পাশাপাশি জাপানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাহায্য সংস্থায় কর্মরত সে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারকে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছে দেশটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশিদের থাকার জায়গা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সর্বত্রই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যখন যেখানে তাঁরা চাইছেন, তাঁদের সেখানেই নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। দূতাবাসপল্লিসহ সব স্থান এখন নিরাপদ।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে জাইকার ১৬ জন কর্মকর্তা, জাপানের ৬৮টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জাপানের পাঁচটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে দূতাবাস অনুরোধ জানিয়েছে।

১ জুলাই জঙ্গি হামলায় জাইকার কর্মকর্তারা নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাটির ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা নিশ্চিত করার কথা বলছে জাপান দূতাবাস। এর পাশাপাশি কর্মকর্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঢাকায় ও প্রকল্প এলাকায় তাঁদের চলাফেরার সময় পুলিশি উপস্থিতি চাইছে দূতাবাস।

জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে জাপানের চলমান বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্প নিশ্চিত করতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থার মাধ্যমে ঢাকার সহযোগিতা চায় টোকিও।
জানা গেছে, জাপানের নিবন্ধিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলো জাপান দূতাবাসের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তারা বাংলাদেশে তাদের কাজকর্ম নিরাপদে চালিয়ে যেতে বিশেষ নিরাপত্তা-সুবিধা পায়। এ প্রসঙ্গে জাপান দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যেন মন্ত্রণালয়গুলো বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যম স্থাপন করে যা ব্যবহার করে, তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং নিরাপদে চলাচলের জন্য নিরাপত্তা সহায়তা চাইতে পারে। জাপান দূতাবাস বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে, বাংলাদেশ যেন জাপানের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয় ও কারখানায় যেসব বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেবে, তাদের যেন অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিরা নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিচ্ছেন। দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাচ্ছেন।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে কয়েক শ জাপানি নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিদিওসি ইরিজাকি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জাইকার প্রায় অর্ধশত প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোতে কর্মরত জাপানি নাগরিকদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ওই চিঠিতে মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে জাইকার কর্মকর্তারা যাতে নিজ দেশে ছুটিতে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারের সম্মতি চাওয়া হয়েছে।

এদিকে শুধু রাজধানী ঢাকার গুলশান-বনানী-বারিধারায় নয়, সারা বাংলাদেশে এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারেই বিদেশিদের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সংলাপ’ শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু এ নিরাপত্তার দাবি জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল