সিলেট ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২১
মাহমুদ আহমদ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
তিনি চিরঞ্জীব-জীবনদাতা ও চিরস্থায়ী-স্থিতিদাতা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আকাশসমূহে যা আছে ও পৃথিবীতে যা আছে সব তারই। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫)।
ইসলাম এই দাবি করে যে, এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হলেন একজন জীবন্ত প্রভূ প্রতিপালক। তিনি নিজ বান্দাদের জন্য বর্তমান যুগেও সেভাবেই প্রকাশিত হন যেভাবে পূর্ববর্তী যুগসমূহে প্রকাশিত হতে থেকেছেন।
আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত তার গুণাবলীর কোন একটি গুণও নষ্ট হয় নি। তিনি আজও সেভাবেই শুনতে পান যেভাবে পূর্বে শুনতেন আর আজও সেভাবেই পুণ্যবানদের সাথে ব্যবহার করেন যেভাবে পূর্বে করতেন।
আল্লাহতায়ালার জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী হওয়াই মানুষকে তার ওপর ঈমান আনতে, তার সাথে সম্পর্ক রাখতে, তার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করতে বাধ্য করে। যদি তিনি জীবন্ত এবং অনাদি ও অনন্ত না হন তাহলে তার জীবন সম্পর্কেও ভীতি থেকে যাবে যে, তিনি আবার আমাদের পূর্বেই না মারা যান।
আল্লাহতায়ালা নিজের জীবন্ত হওয়ার প্রমাণ দেয়ার মাধ্যমে তার ওপর তাওয়াক্কুল করার দাওয়াত দিয়েছেন এভাবে যে, তিনি বলেন: আর তুমি সেই চিরঞ্জীব (সত্তার) ওপর ভরসা কর যার মৃত্যু নেই। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৫৮)।
আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেন: এ (পৃথিবীতে) যা-ই আছে সবই নশ্বর, কিন্তু প্রতাপ ও মর্যাদার অধিকারী তোমার প্রভু-প্রতিপালকের সত্তা অবিনশ্বর। (সুরা রহমান, আয়াত: ২৬-২৭)।
অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের সব জগতের প্রত্যেকটি সত্তা পরিবর্তনশীল এবং নশ্বর। আর যার ওপর কোন পরিবর্তন এবং ধ্বংস আপতিত হবে না তিনিই হলেন খোদা।
আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান এবং বিশ্বাসই প্রকৃত পক্ষে ধর্মের ভিত্তি এবং আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এটি ছাড়া ধর্মের চিন্তাই করা যায় না।
ইসলাম আল্লাহতায়ালার সত্তাকে একটি জীবন্ত বাস্তবতা বা নিদর্শন রূপে উপস্থাপন করেছে। তিনি এক জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী প্রভূ। তার জীবন্ত সত্তার একটি প্রমাণ হলো, তিনি নিজ বান্দাদের দোয়া শুনেন এবং সেগুলোর উত্তর দেন।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)।
আল্লাহর সঙ্গে মহানবীর (সা.) সম্পর্ক এবং এক জীবন্ত সৃষ্টিকর্তার ওপর ঈমান এবং এর প্রমাণের হাজার হাজার উদাহরণের মাঝ থেকে শুধুমাত্র একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।
মহানবী (সা.) বিভিন্ন বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লিখেন। মহানবীর (সা.) এই চিঠি যখন ইরানের বাদশাহ কিসরার কাছে পৌঁছে তখন এই চিঠির লেখা পড়ে তার এত রাগ হয় যে, সে এই চিঠিকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে এবং বলে, আমার গোলাম হয়ে আমাকে এভাবে সম্বোধন করে।
এরপর সে তার ইয়ামেনের গভর্নরকে হুকুম দেয়, এই আরবী অর্থাৎ মহানবীকে বন্দী করে আমার সামনে উপস্থাপন করা হোক। অতএব ইয়ামেনের গভর্নর মহানবীকে (সা.) বন্দী করার জন্য দু’জন লোক প্রেরণ করে।
তারা মদীনায় পৌঁছে মহানবীকে (সা.) উপদেশের মাধ্যমে বুঝায় যে, আপনি আমাদের সাথে চলুন নতুবা কিসরা আপনার দেশকে ধ্বংস করে দিবে। তিনি (সা.) বলেন, তোমরা আজ রাতে এখানে অবস্থান কর, আমি ইনশাল্লাহতায়ালা আগামীকাল তোমাদের উত্তর দিব।
তারপর তারা যখন দ্বিতীয় দিন মহানবীর (সা.) কাছে যায় তখন মহানবী (সা.) বলেন: তোমাদের মালিকের (অর্থাৎ ইয়ামেন এর অধিকারীর) কাছে গিয়ে বলে দাও যে, আমার প্রভু তার প্রভুকে (অর্থাৎ কিসরাকে) আজ রাতে হত্যা করেছেন।
যখন ইয়ামেনের গভর্নরের কাছে মহানবীর (সা.) এই উত্তর পৌঁছে তখন সে বলে, এ ব্যক্তি যেই কথা বলেছে যদি সত্যিই এমন হয়ে যায় তাহলে সে সত্যিই আল্লাহর এক নবী হবে।
অতএব কিছুদিন পর গভর্নরের নামে কিসরার পুত্রের চিঠি আসে যাতে লিখা ছিল, আমি দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজ পিতাকে হত্যা করেছি।
এমনই ছিল জীবন্ত আল্লাহর সাথে মহানবীর (সা.) সম্পর্ক। যার ফলে মহানবীকে (সা.) সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালা নিরাপত্তার বেষ্টনিতে রেখেছিলেন।
আসলে আল্লাহতায়ালাকে যারা ভালোবাসেন, যাদের হৃদয় পাক-পবিত্র, তারা যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, তাকে ডাকেন, তার সাহায্য কামনা করেন তখন আল্লাহ তাদের ডাক শুনেন এবং তার সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: ‘এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।
তাই আমাদের সবার উচিত হবে এই জীবন্ত আল্লাহর সাথে প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলা, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে জীবন পরিচালনা করা।
আসুন! সব ধরনের অপকর্ম থেকে নিজেক দূরে রাখি এবং আল্লাহর স্মরণে সময় অতিবাহিত করি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
সুত্র : যুগান্তর
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd