বিচারের বাণী কাঁদছে সিলেটের জালালাবাদে

প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৬

বিচারের বাণী কাঁদছে সিলেটের জালালাবাদে

akther ocসিলেটে মেট্রোপলিটন জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আখতার হোসেন। তাঁ কারনেই থানা এলাকায় কাঁদছে বিচারের বাণী। থানায় পোস্টিং পাওয়ার পর থেকে বিচারহীনতায় ভোগছেন ওই থানার সাধারণ মানুষ। তার আমলে ওই থানায় বিচারের বাণী কাঁদছে নিরবে নিবৃতে। দেশ-বিদেশে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকার রাজন হত্যা মামলা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড বিচারহীন হয়ে পড়েছে তার কারনে। বিচারপ্রার্থীদের বিচারবঞ্চিত করা হয়েছে ওসির নানা অপকৌশল ও ছলচাতির ফলে। যে কোন হত্যাকান্ডের ঘটনার বিচার অংকুরে বিনষ্ট করতে ওসি আখতারে যেন জুড়ি নেই। সরাসরি নিজে অথবা পর্দার আড়ালে থেকে অধীনস্তদের দিয়ে মামলা বিনষ্টের অপকৌশল অবলম্বন করে থাকেন তিনি। ওসি আক্তার থানার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যে সব হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচারহীনতায় ভোগছেন থানার সাধারন মানুষ এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি জালালাবাদ থানার দিঘলবাক নোওয়াগাঁওয়ের গৃহবধূ মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাজনা হত্যাকান্ড, একই গ্রামের রজব আলী হত্যাকান্ড ও আলোচিত রাজন হত্যাকান্ড উল্লেখযোগ্য। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এলাকার সহজসরল মানষুদের চোখে ধুলো দিয়ে অতি সহজেই হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো হজম করে নেন ওসি আখতার হোসেন।
রজব হত্যাকান্ড ঃ গত২০১৫ সালের ২১ মে থানার দিঘলবাক নোওয়াগাঁওয়ে ঘটে রজব আলী হত্যাকান্ড। প্যারালাইসেস আক্রান্ত রজব আলীকে মাথায় আঘাত করে খুন করে প্রতিবেশী ঘাতকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,ঘাতকদের কাঠের রোলের আঘাতে রজবের কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে সে মারা যায়। থানা পুলিশকে খবর দেয়া হলে ঘাতকরা লাশ উদ্ধারের আগেই যোগাযোগ করে ওসি আখতারের সাথে। ওসি আখতার লাশ উদ্ধারের আগেই ঘাতকদের সাথে রফাদফা শেষ করে ফেলেন। মামলার দায় থেকে ঘাতকদের বাঁচাতে লাশ উদ্ধারে গিয়ে অবলম্বন করে কুটকৌশল। অলিখিত সাদা কগজে কয়েকজনের দস্তখত নিয়ে লাশ পাঠিয়ে দেন ময়না তদন্তে। পরে অধীনস্থ পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে থানায় বসে ইচ্ছেমত সুরতহাল রিপোর্ট করান। সুরত হাল রিপোর্টে কান দিয়ে রক্তপড়ার কথা উল্লেখ তো করানই নি। আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে নিহতের প্যারালাইসেস রোগের কথা প্রধান্য দিয়েই সুরতহাল রিপোর্ট করান তিনি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসে সুরতহাল রিপোর্ট মতো করে। এ ঘটনায় সিলেটের জালালাবাদ থানায় হত্যামামলা (নং-১৪(৫)১৫) হলেও ঘাতকরা ধরা পেড়েনি। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। ফলে স্বামী হত্যার বিচার বঞ্চিত হন নিহতের বিধবা কাচামালা বিবি। টাকা নেই বলে অসহায় বিধবা কাচামালা মামলার ব্যাপারে আর এগুতে পারেন নি। ফলে এখনো নিরবে কাঁদছে রজব হত্যা মামলার বিচার।
রাজন হত্যাকান্ড ঃ গত ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের জালাবাদ থানার কুমারগাওয়ে শিশু রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।ভিডিও করা হয়তার হত্যার ঘটনা। এ ঘটনায় হত্যাকান্ডের মূল নায়ক প্রবাসী কামরুলকে কৌশলে বাঁচিযে দিয়েছিলেন ওসি আখতার। পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দেশের বাইরে। তার নির্দেশে তড়িঘড়ি করে পুলিশ একটি গনপিটুনীর মামলা নিয়ে নিষ্পাপ শিশু রাজনকে চোর বানিয়ে দেয়। ‘চুরি করার সময় ওয়ার্কশপের অজ্ঞাতনামা লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে’ মর্মে থানায় মামলা করান তিনি। ‘ওয়ার্কশপের কর্মচারী’ বলে তিনি ঘাতক কামরুলকে মাশরার দায় থেকে অব্যাহতির চেষ্ট করেন। এ সময় ওসি পুত্রহারা রাজনের পিতাকে সাজিয়ে দেন চোরের পিতা। কিন্তু খোদার ডোল ফেরেশতায় বাজায় রাজন হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ায় বিচারহীনতা তেকে রক্ষা পায় রাজনের পরিবার, রক্ষা পায় দেশ ও জাতি। শেষ পর্যন্ত ঘাতক কামরুলসহ ফাঁসির আদশ হয় চারজনের। এ ঘটনায় থানার তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও কৌশলে শাস্তির খড়গ থেকে বেঁেচ যান ওসি আখতার হোসেন।
সাজনা হত্যাকান্ড ঃ এবার বিচারের বাণী কাঁদছে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাজনা হত্যাকান্ডের। গত ২২জুন পবিত্র রমজান মাসের রাতে জালালাবাদ থানার দিঘলবাক নোয়া গাঁওয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটে। সিলেটের জালালাবাদ থানার নিহত হন স্থানীয় পুরাণ কালারুকা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তজমূল ্অলীর মেয়ে সাজনা বেগম (২৩)। দেড়বছরের কন্যসন্তানের জননী সাজনাকে রাতের আঁধারে হত্যা করে স্বামী ও শশুর পরিবার। সাজনার পিতৃপরিবারে খবর না দিয়ে ঘাতকরা আগেই যোগাযোগ করে থানার ওসি আখতার হোসেনের সাথে। ওসি আখতার রজব হত্যাকান্ডের ন্যায় একই কৌশল অবলম্বন করেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা সাজনার ব্যপারে। স্থানীয়রা রাতের আঁধারে সাজনার আর্তচিৎকার শুনেছেন। তারা জানেন সাজনাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবার। হত্যার পর রাতভর সাজনার মরদেহ ফেলে রাখা হয় কাচাঘরের মাটির ফ্লোরে। তার দেহে বেয়ে যায় লাল-কালো বেড়বড় অনেক পিপড়া। ওসি আখতারের সাথে যোগাযোগীমূলে সকালে সাজনার মরদেহ উঠিয়ে খাটের উপর দাঁড় করিয়ে গলায় ওড়না পেচে ঘরের তীরের সাথে বেঁেধ রেখে দেয় ঘাতকরা। এসময় সাজনার গলায় ওড়না পেচানো থাকলেও পা দুটি ভর করা ছিল খাটের উপর বিছানায়। দু’পা দিয়ে বেয়ে ঝরছিল রক্ত। দু’পায়ের মাঝখানে একটি লুঙ্গি, যেটি দিয়ে মোছা হয়েছিল সাজনার রক্ত। এসময় পরিপাটি করে বিছানায় মৃতার পায়ের পেছন ঘষিয়ে রেখে দেয়া হয় প্লাস্টিকের একটি চেয়ার। দেখানো হয় সাজনা গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।অথচ সাজনার কক্ষে তার বাপের বাড়ি থেকে দেয়া কাঠের চেয়ারগুলো স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঘরের বেড়ার সাথে ও তীরের সাথে উঠিয়ে রাখা ছিল। স্থানীয়রা জানান, সাজনা তার শয়ন কক্ষে কোনসময় প্লাস্টিকের চেয়ার ব্যবহার করতো না। চেয়ারটি তার শশুরের কক্ষেই থাকতো। খবর পেয়ে ওসি আখতার হোসেন দু’জন পুরুষ পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এর একজন ছিলেন এসআই আখতারুজ্জামান পাঠান ও অপরজন ছিলেন কনেস্টবল রেজা। কোন মহিলা কনেস্টেবল ছিলনা তার সাথে। অভিযোগ পাওয়া গেছে ওসি আখতারের নির্দেশে এসআই আক্তারজ্জামান পাঠান রজব হত্যামামলার মত অলিখিত সাদা দু’টি কাগজে সাজনার স্বজনসহ উপস্থিত লোকজনের স্বাক্ষর নিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। রক্তমাখা লুঙ্গিটিও ফেলে আসেন খাটের উপর। ঘরের চাবিও দিয়ে আসেন ঘাতকদের হাতে। পরে থানায় বসে এসআই আক্তারকে দিয়ে স্বাক্ষর করা কাগজে ইচ্ছেমত ‘ঘাতকবাঁচানোর’ সুরতহাল রিপোর্ট করিয়ে মরদেহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরন করান। সুরতহাল রিপোর্টে রক্তঝরা, দরজা খোলা থাকা,দেহের উপর পিপড়া বয়ে থাকা, খাটের উপর ভর করে থাকা, রক্তমাখা পা ইত্যাদি কিছুই উল্লেখ করান নি। এছাড়া মহিলা কনস্টেবল খায়রুন নাহার ঘটনাস্থলে রনা গেলেও তার নাম দিয়ে দেন সুরতহাল রিপোর্টে। উপরন্তু মৃতার স্বজনদের অজান্তেই অলিখিত সাদা কগজে নেয়া স্বাক্ষর দিয়েএকটি অপমৃত্যু মামলা(নং-১১/১৬) রুজু করিয়ে নেন তিনি। পরে মৃতার স্বজনরা মামলা দিতে গেলে আর মামলা নেন নি ওসি আখতার। অলিখিত সাদা কগজে স্বাক্ষর নিয়ে আত্মহত্যার পক্ষে সুরতহাল রিপোট করে এ রিপের্টের অনুকুলে পিএম রিপোর্টও করিয়ে নেন তিনি। এভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা হত্যার বিচার অংকুরেই বিনষ্ট করে দেন ওসি আখতার হোসেন।
পরে অলিখিত সাদা কগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ করেছেন মৃতার স্বজনরা। কিন্তু অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে হওয়ায় তাও আমলে নেয়া হচ্ছেন না। এভাবে ওসি আখতারের কারনেই সিলেটের জালালাবাদ থানায় বহুহত্যাকান্ডের বিচার নিরবে কাঁদছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল