সিলেট ২১শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২০
রুহুল আমীন তালুকদার :
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম লিমা সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যা সহ প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের মৃত সামছুল ইসলামের ছেলে অলিউর রহমান বাদী হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভ্রুণ হত্যা সহ তাকে প্রাণনাশের হুমকির অপরাধে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যা গোলাপগঞ্জ থানার সিআর মামলা নং ৩০৪/১৯ইং। বাংলাদেশ প্যানাল কোড ১৮৬০ এর ৩১৩/ ৩১৫/ ৫০৬ (২য় খন্ড)/৩৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপ-পরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সিলেটকে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার প্রাপ্ত হয়ে বাদী ও আসামী তদন্তকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদের নামে নোটিশ ইস্যু করেন। নোটিশ প্রাপ্ত হয়ে নির্ধারিত তারিখে বর্ণিত কার্যালয়ে উপস্থিত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা উভয় পক্ষের মৌলিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। এবং সরেজমিন তদন্তকালে আসামীগণের বিরুদ্ধে ঘটনার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট স্বাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গর্ভপাত ঘটানো ও মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে সত্যতা প্রতিয়মান হয়। এতে আসামীগণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গত ১৮/১২/১৯ইং তারিখে উপ পরিচালক শাহিনা আক্তারের স্বাক্ষরিত এক ফর্দ্দের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। সংশ্লিষ্ট আদালত তদন্ত প্রতিবেদন সমর্থনে আসামীগণকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য প্রত্যেকের নামে সমন ইস্যু করেন।
বর্ণিত মামলার আসামীরা হলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের মাথিউরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মাওলানা খলিলুর রহমানের মেয়ে, মামলার প্রধান আসামী রাজনা বেগম, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম লিমা ও দাসপাড়া সালাম হাজী রোডের বাসিন্দা মৃত আপ্তাব উদ্দিন খানের ছেলে আরবাব হোসেন খান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বর্ণিত মামলার অলিউর রহমান ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক কাবিননামা মূলে বিগত ২০১৫ইং সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে মামলার প্রধান আসামী রাজনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী রাজনা বেগমের সাথে দাম্পত্য জীবন যাপন কিছু দিন বেশ সুখে শান্তিতে কাটাাচ্ছিলেন। এরপর থেকেই উগ্র-বদ মেজাজী রাজনা বেগম তার বড়বোন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম লিমা ও অপর আসামী রোকসানা বেগম লিমার স্বামী আরবাব হোসেন খানের কু-পরোচনায় কারণে অকারণে তার স্বামী মামলার বাদীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ সহ পরিবারের অন্যান্য লোকজনর সাথে মনোমালিন্য করতে থাকে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী আসামী রাজনা বেগমকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে বার বার পরামর্শ দিলেও তার কথায় কর্ণপাত করেনি তিনি। বরং তার বোন আসামী রোকসানা বেগম লিমা ও ভগ্নিপতি আরবাব হোসেন খানের কু-পরোচনায় উগ্রতা, উশৃঙ্খলতা অব্যাহত রাখে। মামলার বাদীর সাথে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা ও আসামী রাজনা বেগমের পারিবারিক বিরোধ একাধিকবার উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও মুরব্বীয়ানরা নিঃষ্পত্তি করে দিয়েছেন। তাছাড়া মামলার বাদী ও আসামী রাজনা বেগমের দাম্পত্য জীবন পালনকালে বাদীর ঔরুষজাত ও আসামী রাজনা বেগমের গর্ভজাত সাদিয়া আক্তার আরফি নামে আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, মামলার বাদী বিয়ের পর থেকে সন্তান জন্ম দান করতে চাইলে আসামী রাজনা বেগম তাতে অনিহা প্রকাশ করে। তার স্বামী মামলার বাদীর অসম্মতিতে তার পিত্রালয়ে গিয়ে তার বড়বোন আসামী রোকসানা বেগম লিমা ও ভগ্নিপতি আরবাব হোসেন খানের কু-পরোচনায় একাধিক বার গর্ভপাত ঘটানোর ঔষধ সেবনের দ্বারা গর্ভপাত ঘটায়। এ ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদীর নিকট আত্মীয় ও আসামী রাজনা বেগমের আত্মীয়-স্বজনকে অবগত করেন। আসামী রাজনা বেগমকে ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটানোর জন্য তার স্বামী মামলার বাদী নিষেধ করলে তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আসামী রাজনা বেগম তার সাথে ঘর সংসার করবে না বলে হুমিক দেয়। এমনকি মামলার বাদীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে কয়েক বার সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে মামলার বাদী ও আসামী রাজনা বেগমের মধ্যকার বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সর্বশেষ বৈঠকে উভয় পক্ষ উপস্থিত হলে আসামী রাজনা বেগম ও তার আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে অতীতের ভুল স্বীকার করে। বৈঠকে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন সহ আরও অনেকের সম্মুখে মামলার বাদীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সরলমনা বাদী তার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা ভাবনা করে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার সংসারে ফিরিয়ে নেন।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, আসামী রাজনা বেগম মামলার বাদীর সংসারে ফিরে গিয়ে কিছু দিন সুন্দর ভাবে চললেও অপরাপর আসামীদের সাথে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের পরোচনায় পূর্বের ন্যায় আবারও উশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে থাকে। গত বছর বাদীর ঔরষজাত সন্তান আসামী রাজনা বেগমের গর্ভে আসলে মামলার বাদীকে বলে তার পিত্রালয়ে চলে যায়। সেখানে গিয়ে কিছু দিন থাকার পর বাদীর বাড়িতে ফিরে আসার কয়েক দিন পর বাদীর সম্পতিক্রমে আবারও তার পিত্রালয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার শারিরীক অবস্থা কিছুটা খারাপ বলে বাদিকে মোবাইল ফোনে জানায়। এতে বাদী তাকে ডাক্তারের নিকট যেতে পরামর্শ দিলে আসামী রাজনা বেগম অপরাপর আসামীকে সাথে নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স শেলি বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আলট্রাসনোগ্রাফী করার পরামর্শ দেন। আলট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্টে দেখা যায় যে, ৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্বা আসামী রাজনা বেগম। চতুর আসামী রাজনা বেগম মামলার বাদী অর্থাৎ তার স্বামীকে না জানাইয়া গোপনে গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে পুনঃরায় নার্স শেলি বেগমের কাছে গেলে মামলার বাদী অর্থাৎ তার স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেখে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে পারবেনা বলে জানান। আসামী রাজনা বেগম অপরাপর আসামীগণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় গত ২৮/১১/২০১৮ইং অজ্ঞাত স্থানে গিয়ে গর্ভপাত ঘটায় বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, মামলার বাদী ঘটনার সমূহ পরস্পর জ্ঞাতসারে আসামী রাজনা বেগম সহ তার পিতা খলিলুর রহমান ও মাতা মনোয়ারা বেগমের কাছে সঠিক বিষয় জানতে চাইলে তারা মনগড়া কথা বলে বাদীকে বোঝানোর চেষ্টা করে। বাদী তাদের কথায় সন্দেহ পোষণ করলে মামলার সকল আসামীরা সহ তাদের পরিবারের অন্যান্য লোকজন বর্ণিত ঘটনার বিষয় নিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করতে বারন করে। করলে তাকে উচিৎ শিক্ষা দিবে বলে হুমকি দেয়। মামলার বাদী নিরুপায় হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ আসামীদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে বার বার যোগাযোগ করলে আসামী রাজনা বেগম বাদীর সংসারে না আসিয়া বরং আসামী রোকসানা বেগম লিমা ও আরবাব হোসেন খানের মোবাইল নাম্বার থেকে বাদীকে ফোন করে অজ্ঞাত লোকদের মাধ্যমে তাকে প্রাণনাশর হুমকি প্রদান করে। শুধু তাই নয় প্রয়োজনে আসামীগণের হেফাজতে থাকা বাদীর ঔরষজাত সন্তান সাদিয়া আক্তার আরফিকে হত্যা করে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে জীবনের মত শিক্ষা দিবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী গত ১০/০৭/২০১৯ইং তারিখে ২নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বাদী ও আসামীদের মধ্যকার বিরোধ আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু আসামীগণের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কোনরূপ সহযোগিতা বা সদুত্তর না পাওয়ায় বিষয়টি মিমাংসা হয়নি।
আসামীগণের এহেন হুমকী-ধমকিতে মামলার বাদী ও তার পরিবারের অন্যান্য লোকজন জান ও মালালের চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছিলেন। অবশেষে মামলার বাদী বাধ্য হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আসামীগণ উক্ত মামলার দায় এড়াতে বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল অবলম্ব করছে বলে মামলার বাদী জানিয়েছেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
প্রধান সম্পাদক : আব্দুল লতিফ নুতন
যুগ্ম সম্পাদক : মোছাম্মদ নুরুন নাহার
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd