২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০১৬
সিলেট মহানগর এলাকার ভাড়া বাসায় ব্যাচেলর বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন মেসবাড়িতে তাদের বসবাসের দিন সম্ভবত ফুরিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর থেকেই পুলিশ সিলেট নগরীসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন মেসগুলোতে নজরদারী এবং তল্লাশি শুরু করে। গত ২৭ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়া এবং বাড়ীর মালিককে তথ্য গোপনের অপরাধে গ্রেপ্তারের পর থেকে এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাড়ি মালিকরা।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাচেলরদেরকে বাড়ি ও মেস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মালিকরা। কিছু কিছু মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এখন থেকে আর কোন ব্যাচেলরদের কাছে বাড়ী ভাড়া দেবেন না তারা। ফলে নতুন করে আবাসন সংকটে পড়তে শুরু করেছেন সিলেট নগরীতে বসবাসরত কয়েকহাজার ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া।
গত কয়েক দিনে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাড়ির মালিক ও ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দুই পক্ষের বিড়ম্বনার কথা। বাড়ির মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় বাড়ির মালিকরাও গ্রেফতার হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে ভরসা পাচ্ছেন না তারা।আর অন্যদিকে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের দাবি মেসে যারা বসবাস করেন তারা সবাইতো আর জঙ্গি না। তাহলে কিছু মানুষের জন্য কেনো সব ব্যাচেলর বাসা ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
সিলেটে পড়াশোনা অথবা চাকরির সহ নানা কারণে আসা হাজার হাজার ব্যাচেলর কোথায় থাকবেন? এমন প্রশ্ন এখন সিলেট নগরীর মতো সারা দেশে বসবাসকারী বেশিরভাগ ব্যাচেলরদের। আবাসনের সংকট তাদের জীবন যাপনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ বলছে, বাড়ি কিংবা মেস ভাড়া দেবার বিষয়ে তারা কোন বিধি-নিষেধ আরোপ করেননি। সকল প্রকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য থানায় জমা দেবার জন্য বাড়ির মালিকদের তাগাদা দেয়া হয়েছে।
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের খোঁজে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে পুলিশ সিলেট নগরীর লামাবাজার থেকে শেখঘাট পর্যন্ত রাস্তা ব্লক করে বাসা ও মেসে তল্লাশি চালান। যদিও এসময় কাউকে আটক করা হয়নি।
পুলিশের অভিযানের আশঙ্কায় এখন সিলেট নগরীর অনেক বাড়ির মালিক তাদের মেসে থাকা ব্যাচেলরদের উপর নজরদারীও বাড়িয়েছেন। বাড়তি সতর্ক থাকা বাড়ির মালিকরা ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দিচ্ছন। ফলে আবাসন সংকট তৈরি হচ্ছে অবিবাহিত ছাত্র ও চাকরিজীবী ভাড়াটিয়াদের।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেসগুলোতে যে নজরদারী জোরদার হয়েছে সেটি বেশ টের পাওয়া গেল। নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেস ঘুরে দেখা গেল, সম্ভাব্য পুলিশি অভিযানের আশঙ্কায় চিন্তিত এসব ব্যাচেলররা।
অনেক ভাড়াটিয়ারা মনে করছেন, যেভাবে মেসগুলোতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে তাতে করে বাড়িওয়ালারা মেস বাড়া দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কারণ পুলিশি অভিযান একটি বাড়ীতে ঝামেলা তৈরি করে বলে মনে করেন তারা।
সুরমা আবাসিক এলাকার সিলেটের একটি ব্যাচেলর মেসে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন মিথুন দাশ। তার সাথে একই বাসায় থাকেন আরো চারজন। এদের সবাই বিভিন্ন স্থানে চাকুরী করছেন।
মিথুন দাশ বলেন, “আমাদের দুশ্চিন্তাটা এখন আরো বেড়ে গেছে। আসলে আমাদের চেয়ে বেশি চিন্তিত এখন বাড়ির মালিকরা। তারা মনে করেন যে ব্যাচেলারদের ভাড়া দেওয়া হয় তার সাথে কোন সমস্যা কিংবা জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কিনা এখন এইটাই ভয়ের কারণ।”
এমনিতেই সাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের বাড়ির মালিকদের মতো সিলেটের বাড়ির মালিকরা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান মিথুন।
সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকার একটি বাড়ি ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া দিতেন এম এ মালেক সম্প্রতি ব্যাচেলর ভাড়াটেদের বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে মালেক সাহেব বলেন, “ব্যাচেলারদের ভাড়া দেওয়ায় নানা ধরনের ঝামেলা হচ্ছে । এজন্য তাদেরকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি।”
নগরীর দরগাহ মহল্লা এলাকার ভাড়াটিয়া মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, আমি যে বাড়িতে ভাড়া থাকি তার উপরের একটি ফ্লাটে ব্যাচেলার কিছু ছেলে থাকত। কিন্তু গত ২৮ তারিখ ঢাকার কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযান চালানোর পরের দিন ঐ বাসায় অবস্থানরত ব্যাচেলারদের ২ দিনের নোটিশে বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন বাসার মালিক। নতুন বাসা পাওয়া পর্যন্ত সময় চাইলেও বাড়ির মালিক তাদের অনুরোধ রাখেননি।
এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক জয়নাল হোসেন জানালেন, তিনি প্রতিনিয়ত ভাড়াটিয়াদের গতিবিধি নজরদারীতে রাখতেন। কিন্তু ঢাকার ঘটনার পরে তাদের বের করে দিতে বাধ্য হলেন, আর আগেভাগে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন বলে জানান তিনি।
সিলেট শহরের ব্যাচেলার বাড়িভাড়া ও মেসগুলোতে কত লোক বসবাস করে তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। প্রতি মাসেই বিভিন্ন মেসে নতুন ভাড়াটে আসা-যাওয়া করে। সেক্ষেত্রে সকল ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে আগে থেকেই পুরোপুরি তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না ।
পুলিশ মনে করে, জঙ্গিরা সংগঠিত হবার জন্য কখনো-কখনো বাসা ভাড়া নেয়। এছাড়া মেসগুলোতে বসবাসরত ছাত্রদের দলে ভেড়ানোর জন্য টার্গেট করা হতে পারে। সেজন্যই পুলিশ ব্যাচেলর ও মেসের প্রতি নজরদারী বাড়িয়েছে।
বর্তমানে বাড়িওয়ালারা ও মেস মালিকরা বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের উপর নজরদারী বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়ছেন মেসে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা।
এ ব্যাপারে এক মেস মালিক বলেন, “আমি থানায় যেসব ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছি, তার বাইরে কেউ আমার বাড়িতে থাকতে পারবেনা। ভাড়াটিয়াদের বাসায় কোন মেহমান যদি রাতে থাকতে চায়, তাহলে আমাকে এ বিষয়ে জানাতে হবে।”
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ জানান , “ভাড়াটিয়াদের তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়ির মালিক যেমন নিরাপদে থাকবেন, তেমনি অন্যরাও নিরাপদে থাকবেন। যাকেই বাসা ভাড়া দেওয়া হোক না কেন, ভাড়াটিয়াদের সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য থানায় জমা দিলে পুলিশের পক্ষে অপরাধীদের শনাক্ত করতে সহজ হবে।”
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন ভাড়াটিয়া ব্যাচেলর কিংবা বিবাহিত সেটা বড় কথা নয়। মূল বিষয়টা হলো ভাড়াটিয়াদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহে রাখা। ব্যাচেলরদের বাসা থেকে নামিয়ে দিতে বা বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিতে কোনরকম নির্দেশ দেয়া হয়নি। বাড়ির মালিক কাকে ভাড়া দেবেন নাকি দেবেন না, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা শুধু চাই সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D