ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন যাত্রা!তিন নেতার ‘ওয়ার্মআপ’ বৈঠক

প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০১৬

ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন যাত্রা!তিন নেতার ‘ওয়ার্মআপ’ বৈঠক

105704-ba২৩ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার: ব্রেক্সিট পরবর্তী অনেক চ্যালেঞ্জ যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামনে তখন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী তিন নেতা সোমবার বৈঠক করেন ইতালির নেপলসে।

বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমুন্নত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

এ সময়ে তারা যৌথভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।তারা বললেন, ইউরোপকে ব্রেক্সিটের পর অবশ্যই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আগামী মাসে স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভাতে হওয়ার কথা রয়েছে ইইউয়ের সম্মেলন। তার আগে এ বৈঠককে ওয়ার্মআপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে বৃটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নতুন করে যাত্রা শুরু করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ব্রেক্সিট গণভোটের পর অনেকে বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন এ তিন নেতা। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির আমন্ত্রণে সোমবার আতালির নেপলসে বৈঠকে যোগ দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ।

তিন নেতা বৈঠক করেন ইতালির যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ গাড়িবালদির ওপর। এ সময় তারা আভ্যন্তরীণ ও বহিঃনিরাপত্তা উন্নত করার পক্ষে সবাই সমর্থন ব্যক্ত করেন। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রত্যয়ও ঘোষণা করা হয়। ফ্রান্সে একের পর এক জঙ্গি হামলার পর ইউরোপে নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি, রয়র্টাস।

এতে বলা হয়, বৈঠকের আগে তিন নেতা প্রখর সূর্যালোকের ভিতর ছুটে যান ভেনটোনেনি দ্বীপে। সেখানে তারা ইউরোপকে একই সূত্রে গাঁথার অন্যতম জনক আলতিয়েরো স্পাইনেলি’র প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আগামী মাসে স্লোভাকিয়ায় অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলনে আগে তারা ইতালিতে ঐক্যের নজির স্থাপন করলেন। বৃটেন ব্রেক্সিট নামের গণভোটের পর ইউরোপের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্লথ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে জঙ্গি হামলা।

এমন সময়ে ইউরোপের প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ইতালির নেপলসে ফ্রান্স ও জার্মানির দু’নেতাকে আমন্ত্রণ জানান মাত্তিও রেনজি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতীকি রঙ হলো নীল ও হলুদ। সেই কথা মাথায় রেখে আলতিয়েরো স্পাইনেলির মার্বেল পাথরের সমাধিতে নীল ও হলুদ ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্মরণ করেন তিন নেতা। এরপর তারা কাছেই নোঙর করে রাখা বিমানবাহী জাহাজ গাড়িবালদির ডেকে এক ঘন্টার মতো বৈঠক করেন।

এ সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী রেনজি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ব্রেক্সিটের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ হয়ে গেছে। আসলে তা হয় নি। সমুদ্রের ওপর ভাসমান ওই জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে তিনি জোর গলায় বলেন, বৃটিশ নাগরিকরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা নতুন একটি অধ্যায় রচনা করতে চাই।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওঁলাদে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সামনে এগিয়ে নিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো জোরালো করা হবে। ইউরোপের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের সীমান্তগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মধ্যে আর বেশি সমন্বয় প্রয়োজন।

তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল স্বীকার করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে বিপুল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমাদের সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে দেশের ভিতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ইস্যুতে আরও বেশি কাজ করতে হবে। আমরা দেখেছি জঙ্গিবাদ, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ। এসব কারণে আমাদের আভ্যন্তরীন ও বহিঃনিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে আরও বেশি কাজ করতে হবে।

অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেন, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা আরও জোরদার করা হতে হবে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর তিন নেতাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে উন্নততর অর্থনীতির জন্য পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর তারা জোর দেন। বিনিয়োগ সুযোগ উন্নত করার পক্ষেও তারা কথা বলেন।

সূত্র: দ্যা ইন্ডিপেনডেন্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল