সিলেট ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৬
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা চার মিনিটে মীর কাসেমের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
রবিবার এ বিষয়ে শুনানি শেষে রায়ের জন্য এই দিন নির্ধারণ করা হয়। গত ২৪ আগস্ট মামলাটির শুনানি শুরু হয়। ওই দিন মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের করা সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন আদালত।
এর আগে ২৫ জুলাই রিভিউ শুনানির জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয় মীর কাসেম আলীকে। তাঁর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রিভিউ শুনানির জন্য দুই মাসের সময় আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এক মাসের সময় মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় আবেদনের বিরোধিতা করেন।
গত ১৯ জুন আপিল বিভাগের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। এতে ১৪টি আইনি যুক্তি তুলে ধরে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোর জসিমসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে গত ৮ মার্চ মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন আদালত। পরে ৭ জুন তাঁকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।
মামলার সারসংক্ষেপ: ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার বিষয়টি। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়া বাকি ১২টিই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বরটিতে মীর কাসেমকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে আপিল করেন জয়নুল আবেদীন তুহিন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি যুক্তি দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। এ মামলা এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি আপিলের ষষ্ঠ রায়।
এ ছাড়া আপিলে চূড়ান্ত পাঁচটি রায়ের পর চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
আপিলের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। রায় রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ এরই মধ্যে আবেদন দাখিল করেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলাম। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা এই কর্মসূচি চলবে।
মঙ্গলবার বিবৃতিতে একথা জানায় দলটি। বিবৃতিতে বলা হয়, মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়ার প্রতিবাদে এই হরতাল। তবে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, হজযাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি, সংবাদপত্রে গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd