রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭

রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক:: ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির ঘটনায় বিতর্কিত শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে রাগীব আলী ও তার ছেলেকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ৩টায় এ রায় ঘোষণা করেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত।

সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, দুই আসামিকেই ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইনের ৪৬৬ ধারায় ৬ বছর, ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর, ৪২০ ধারায় ১ বছর এবং ৪৭১ ধারায় ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়ে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে তারাপুর চা বাগান আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করেন। এই মামলার দুই আসামীই জেল হাজতে রয়েছেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

১৯৯৯ সালের ২৫ অগাস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা-বাগান নিয়ে বিশেষ আলোচনার পর এই মামলার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মসাতের মামলা হয় কোতোয়ালি থানায়। দীর্ঘদিন এই মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত ছিলো।

গতবছর উচ্চ আদালতের একটি রায়ে গতি পায় মামলার কার্যক্রমে। নিষ্পত্তি হয় তারাপুর চা বাগান দখল বিতর্কেরও। গত বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রাগীব আলীর তারাপুর চা বাগান দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে বাগান সেবায়েতকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

একই এই ঘটনায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটি পুনরায় চালু ও তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশের পর ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

মামলা হওয়ার ১১ বছর পর গত বছরের ১০ জুলাই সিলেটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান গত ১০ জুলাই ওই দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

ওই দুই মামলায় গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত। ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

গতবছরের ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী। ওই দিনই সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।

রাগীব আলীর স্মারক জালিয়াতি মামলা বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের পর্যায়ে এলেও তার বিরুদ্ধে ভূমি আত্মসাতের মামলায় এখনও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। এ মামলার আসামিদের মধ্যে রাগীব আলী, আবদুল হাই জেলে রয়েছেন। জামিনে আছেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ও মোস্তাক মজিদ। আর রাগীবের জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা পলাতক।

৭৮ বছর বয়সী রাগীব আলী সিলেটের আলোচিত-সমালোচিত শিল্প উদ্যোক্তা। ব্যাংক, চা বাগান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারী সম্পত্তি, দেবোত্তর সম্পত্তি দখলেরও অভিযোগ ওঠেছে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথের কামালবাজারে জন্ম নেওয়া রাগীব আলী।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল