রাজনগরে ইউপি নির্বাচন! উৎসবের রঙে শঙ্কার ছায়া

প্রকাশিত: ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মে ৬, ২০১৬

রাজনগরে ইউপি নির্বাচন! উৎসবের রঙে শঙ্কার ছায়া

up-elecation-300x188কাউয়াদিঘি হাওরপারের গ্রাম অন্তেহরিতে ঢুকতেই কাঁচা-পাকা ধানের গন্ধ এসে নাকে লাগে। পথে পথে ছড়ানো খড়। বাড়ির উঠোনে অনেক ধান। মাঠের আলে ধানের আঁটি। হাওরজুড়ে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক।
সেদিন ২৫ এপ্রিল, অন্তেহরি বাজারে ঢুকে দেখা যায় অন্য এক দৃশ্য। আট-দশ জনের একটি দল নিয়ে বৈশাখের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ছুটছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য পদপ্রার্থী নেহারুন বেগম। এই এলাকাটি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)। ভোট আগামীকাল শনিবার।
কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউপির নানা প্রান্ত ঘুরে উৎসবের আমেজ চোখে পড়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কণ্ঠে শোনা গেছে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়-শঙ্কার কথা।
বাজার ও গ্রামে, গাছে, বাড়িঘরের বেড়া, এখানে-ওখানে সাঁটানো বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার। হিজল-করচ ও নাম না জানা গাছের ডালে ডালে ঝুলছে ব্যানার, পোস্টার। অন্তেহরি উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে বটগাছের নিচে তখন অনেক লোকের ভিড়। এঁরা কেউ মাঠে যাচ্ছেন, কেউ মাঠ থেকে ধান নিয়ে ফিরছেন। এক ফাঁকে ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় একদল কর্মী-সমর্থক নিয়ে মাঠ পেরিয়ে বটতলায় ছুটে এলেন এ ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নকুল চন্দ্র দাশ। তিনি বলেন, ‘আমার ইউপি একটি অবহেলিত এলাকা। প্রার্থী হয়েছি এলাকার উন্নয়ন করার জন্য।’
এ ইউপির পূর্বাঞ্চল মোকামবাজারে সেদিন বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান ও সদস্য পদপ্রার্থীদের প্রচারণায় সরগরম। সবখানে নির্বাচনী উৎসবের হাওয়া।
মোকামবাজারে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আমীর আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্য ছিলাম। ২১ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। আমাকে দল মনোনয়ন দেয়নি। তবে এলাকার মানুষের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।’
ইউপির গালিমপুরে দেখা যায় সদস্য প্রার্থী কেরামত খান তাঁর সমর্থক-ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠক করছেন। নানা বয়সের মানুষ জড়ো হয়েছেন সেখানে। সেখানে থাকতে থাকতেই আরও অনেক প্রার্থীর মাইক এলাকায় ঘুরেফিরে চক্কর দিল। ছোট ছেলেমেয়েরা এর-ওর প্রতীক নিয়ে মিছিল করে। একসময় গ্রামে ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। কিন্তু প্রচারের মাইক বেজেই চলে।
বিকেলে মুন্সীবাজার ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাতির মিয়া ইউপি কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সমর্থকদের নিয়ে কোনো এক গ্রামের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘সরকার ও দল পৃথক জিনিস। সরকারের কাছে সবাই সমান। আমরা ভোটের দিন সরকারের কাছে নিরপেক্ষ আচরণ আশা করছি। কারণ, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমাদের সংশয়-শঙ্কা রয়েছে। এখানে গুজব আছে, কেন্দ্র দখল করা হবে। উপজেলায় নিয়ে ভোট গণনা করা হবে। ভেতরে ভেতরে ফোনে সংখ্যালঘু ও চা-শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। একটা চাপা ভীতি তৈরি করা হচ্ছে।’ এ রকম হুমকি-ধমকি ও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন টেংরা ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান টিপু খানও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইনুর আক্তার পান্না কে বলেন, ‘কেউ উল্টাপাল্টা করার সুযোগ পাবে না। জনগণ যাতে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারেন, আমরা সেটা নিশ্চিত করব।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল