১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিদিন ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মানুষকে গুম করে ফেলা হচ্ছে অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে তারা কিছুই জানেনা। আগামী দিনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে এখন যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকে প্রতিটি এলাকার প্রতিটি গুম খুনের ঘটনার জবাব দিতে হবে।
বিএনপির ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৩১ আগস্ট বুধবার পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি অডিটরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। বক্তৃতায় তারেক রহমান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নেয়ার অপচেষ্টা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, ফারাক্কার বাঁধ ভেঙে দেয়ায় উত্তরাঞ্চলে বন্যা, আওয়ামী লীগের জঙ্গি কনেকশনসহ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উপর প্রায় পৌনে একঘন্টা বক্ততা করেন। বক্তৃতায় তিনি গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সাহস ও সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
তারেক রহমান বলের, বর্তমান অবৈধ সরকার অগনতান্ত্রিক এবং জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা এখন জনগনকে তথাকথিত উন্নয়নের গল্প শোনায়। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবেনা। তিনি বলেন, নিজ নিজ দেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তুলে ধরার জন্য প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু “ঐতিহ্য বা নিদর্শন“ থাকে। তেমনি বাংলাদেশের রয়েছে সুন্দরবন। শেখ হাসিনার কোথাও কোন কমিটমেন্ট থাকলে সেটা সুন্দরবনের বিনিময়ে হতে পারেনা।
একযোগে ফারাক্কার সকল বাঁধ খুলে দেয়ায় দেশের দক্ষিন-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় এমন জনদুর্ভোগেও শেখ হাসিনা কিংবা তার অবৈধ সরকার দেশ ও জনগনের পক্ষে একটি বাক্যও সাহস করতে উচ্চারণ করতে পারেছেনা। ।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ডক্টর এম এ মালেকসহ অনেকে বক্তৃতা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সভাপতি এম এ মালেক। সভা পরিচালনা করেন কয়সর এম আহমেদ।
সভায় তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালেস্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাকামী জনগনের কাছে “দিশারীর ভুমিকা রেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। একইভাবে পরবর্তীতে দেশ ও জনগনের প্রয়োজনে গঠন করেছিলেনবিএনপি।
তিনি বলেন, জনগন বিশ্বাস করে বিএনপি‘র মাধ্যমেই দেশে গনতন্ত্র ও আইনের শাসন, মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান সম্ভব। তাই যতবারই জনগন নিরপেক্ষভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা বারবার বিএনপিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন সবদিক থেকেই একজন সফল ব্যক্তিত্ব। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের শাসনামল তুলনা করলে জিয়াউর রহমানই সফল।
তিনি বলেন, ৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সকল দলকে নিষিদ্ধ করেছিলেন আর ৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সকল দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের দলকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বলে দাবী করে অথচ শেখ মুজিব এই দলটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তাহলে কি শেখ মুজিব কি এই দলটিকে রাজাকারের দল মনে করতেন? নাকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথিত দলটিকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে শেখ মুজিবই রাজাকারী করলেন? তিনি বলেন, জনগন জানতে চায় তাহলে রাজাকার কে? শেখ মুজিব নাকি আওয়ামী লীগ?।
তারেক রহমান আবারো বলেন, ৭১ সালে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি। জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। তারেক রহমান আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দাবী করে জিয়াউর রহমান নাকি শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। এটি যদি সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে তো প্রমান হয়, জিয়াউর রহমানকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শেখ মুজিব মেনে নিয়েছেন। কারণ প্রতিবার প্রতিটি ঘোষনায় নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবেই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।পরবর্তীতেও ষেখ মুজিব কখনোই এর বিরোধীতা করেননি।
তারেক রহমান বলেন, শহীদ জিয়ার সাফল্যের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে আওয়ামী লীগ এখন শহীদ জিয়া এবং জিয়া পরিবারকে তাদের আপপ্রচারের টার্গেটে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, জনম্যান্ডেটহীন সরকার নাকি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করতে চায়। অথচ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং গৌরবজনক “স্বাধীনতা পদক“ এবং “একুশে পদক“ প্রবর্তণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীরোত্তম।
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক স্বার্থে আদালতকে ব্যবহার করছে। তিরি বলেন, রাজনৈতিক ইস্যু আদালতে নেয়া ঠিক নয়। ইতিহাস রচনার ভার আদালতের কাছে দেয়া উচিৎ নয়। তিনি বলেন, কার শাসনামল ভালো কিংবা কার শাসনামল মন্দ সেটি বিচারের ভারও া আদালতের হাতে দেয়া সমীচীন নয়। বরং সেটি বিচার করবে জনগণ, সেই বিচার হবে জনতার আদালতে।
তারেক রহমান আরো অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিরাই সংসদে যেসব বিচারপতিদের নেতিবাচক কর্মকান্ড নিয়ে স্ােচ্চার হয়েছিলেন সেই ধরণের বিচারপতিরা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে যেভাবে অতিমাত্রায় উৎসাহী হয়ে রাজনৈতিক বিশৃংখলা সৃষ্টিতে উপাদান যুগিয়েছেন ভবিষ্যতে তাদেরকে আইনের মুখোমুখি হতে হবেনাএমন গ্যারান্টি দেশের আইন কিংবা সংবিধানে দেয়া নেই।
তারেক রহমান সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আদালতের একটি রায় আরেকটি রায়ের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে বিবেচিত হয়।২০০০ সালে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত শেখ হাসিনাকে রংহেডেড ওম্যান বলে রায় দিয়েছিলো। এখন সেই রায়কে দৃষ্টান্ত ধরে যদি ভবিষ্যতে কোন আদালত শেখ হাসিনার শাসনকালকে“পাগলের শাসন“ বলে রায় দেয় তখন কি হবে? তিনি আদালতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ জনগনের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পায়।
দেশে চলমান জঙ্গি ইস্যু নিয়েও কখা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০০ শেখ হাসিনা সরকারের সময় দেশের সবচেয়ে বড় দুই জঙ্গিশায়খ আব্দুর রহমান এবং মুফতি হান্নানের উত্থান। শায়েখ আব্দুর রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার বর্তমান অবৈধ সরকারের পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজমের আপন ভগ্নিপতি।
অপরদিকে জঙ্গি মুফতি হান্নানের বাড়ী এবং শেখ হাসিনার বাড়ী একই এলাকায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ক্ষমতা থাকার সময়১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি শেখ হাসিনা মুফতি হান্নানের ছোট ভাই গোপালগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা মুন্সী আনিসুল ইসলামকেগোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীর ৭ নম্বর প্লটে চার হাজার ৫০০ বর্গফুট জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। অপরদিকে গত জুলাই মাসে গুলশানে হোলি জঙ্গি হামলার নেতৃত্বদানকারী রোহান ছিলো ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজের ছেলে।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় দেখা যায়, রাহমান থেকে রোহান সব জঙ্গিই আওয়ামী ঘরানার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জঙ্গি কানেকশন থাকার পরও দেশের স্বার্থে জঙ্গি দমণে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়েছিলো। কিন্তু সবাই জানেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যের পক্ষে নয়।
বর্তমান সরকারকে ব্যাংক ডাকাত সরকার হিসাবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে দেশের সরকারী বেসরকারী প্রতিটি ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে লুটপাটের কেন্দ্রে। তিনি গত ১৮ আগষ্ট একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, এনবিআর বলেছে, তারা গত ৫ অর্থবছরের ৪৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বলছে, এই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা হয়নি“। তারেক রহমান প্রশ্নœ করে বলেন, কে দেবে জনগনের ট্যাক্সের ৪৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকার হিসাব? গত ফেব্রƒয়ারীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হয়ে আট‘শ কোটি টাকাকেমন করে গেলোফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে। কে দেবে এসব টাকার হিসাব?
তারেক রহমান বলেন, দেশে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একটি সূষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেরদাবীতেই আন্দোলন করতে গিয়ে সারাদেশে দলের হাজারো নেতাকর্মী গুম খুন হয়েছেন। হামলা মামলায় নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তারেক রহমান বলেন, দলের এইসব নেতাকর্মীদের কি অপরাধ? তাদের একটাই অপরাধ, তারা ভোটারবিহীন বর্তমান অগনতান্ত্রিক সরকারের বেআইনী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছে। একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলণ করেছে। সভায় হতাহত ও নির্যাতিতদের জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D