সিলেট ২রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটে চলছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপজেলা সম্মেলন। জাতীয় সম্মেলনের পূর্বে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ প্রত্যেকদিন সম্মেলন করে যাচ্ছেন। জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের সম্মেলন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূ¤্রজাল।
৪ বছর আগে এ দুই উপজেলা সম্মেলনে ৪ সদস্যের কমিটি করা হলেও আজ পর্যন্ত তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কমিটির মেয়াদ এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। তবে দুই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদেই আছেন দুই রাজাকারপুত্র।
একজনের বাবার বিরুদ্ধে ৫ মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে পাঞ্জাবিদের দিয়ে হত্যার অভিযোগ, আরেকজনের বাবার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে পাকিস্তানি হানাদারদের সহায়তার অভিযোগ। তাদের বাদ দিয়ে কমিটি করার মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি আজও উপেক্ষিত।
সূত্র বলছে, তাদের কমিটিতে রাখতেই এবার সম্মেলন না করেই আগের সেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কমিটি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তেই করা হচ্ছে।
যদিও বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জৈন্তাপুরের কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পরিবারের কেউ দলের সদস্য হতে পারবে না। এসবে কর্তপাত নেই জেলা আওয়ামী লীগের।
২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ৪ সদস্যের কমিটি করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ ছিল। মো. আবদুল্লাহকে সভাপতি, কামাল আহমদকে সহসভাপতি, ওয়াজিদ আলী টেনাই রাজাকারের ছেলে লিয়াকত আলীকে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় ফয়েজ আহমদ বাবরকে। এর মধ্যে সভাপতি আবদুল্লাহ মারা গেছেন দুই বছর আগে। সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি আজও।
দলের স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, লিয়াকত আলী দলের শৃঙ্খলাপরিপন্থী নানা কাজে জড়িয়ে পড়ায় সংগঠনের দিকে নজরই দেননি। ব্যক্তিস্বার্থে নিজের অনুসারীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। খুনের মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা ছাড়াও গত উপজেলা নির্বাচনের আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ- তিনি টেনাই রাজাকারের সন্তান, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের কোনো অনুষ্ঠানেই মুক্তিযোদ্ধারা তাকে উপস্থিত হতে দেন না।
স্থানীয় তূণমূল আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, টেনাই রাজাকারসহ কয়েকজন মিলে মানুষের বাড়ি থেকে গরু-ছাগল ধরে নিয়ে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্পে দেয়া ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত। বাড়ি বাড়ি আগুন দেয়া থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ টেনাই রাজাকারের বিরুদ্ধে। তারই ছেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই কষ্ট কাকে বলব। তার টাকার কাছে আমাদের দাবির কোনো মূল্য নেই। লিয়াকত আলী একসময় স্থানীয় এমপি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বাড়ির পাহারাদার ছিলেন। পরে এমপির গাড়ির ড্রাইভার, পিএস, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক এবং সবশেষে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হন।
অভিযোগ অস্বীকার করে লিয়াকত আলী বলেছেন, বাবা রাজাকার ছিলেন না। যে তালিকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ করেছে, তা ঠিক না। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগও অস্বীকার করে তিনি বলেন, নব্য আওয়ামী লীগাররা এসব ছড়াচ্ছেন।
একই অবস্থা গোয়াইনঘাটেও, ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে সভাপতি ও শান্তি কমিটির সভাপতি আজির উদ্দিনের ছেলে গোলাম কিবরিয়া হেলালকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪ সদস্যের কমিটি করা হয়। শুরু থেকেই হেলালকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। সম্প্রতি সেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে হেলালের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছে জেলা আওয়ামী লীগ।
গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হক জানান, গোলাম কিবরিয়া হেলালের বাবা আজির উদ্দিন চেয়ারম্যান শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাঞ্জাবিদের ওপর আক্রমণ করেন ৫ মুক্তিযোদ্ধা, পরে তারা পালিয়ে গেলেও আজির উদ্দিন তাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে ডেকে আনে এবং তাদের নৌকা ঘাটে আসা মাত্রই ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করা হয়। এই কষ্ট স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ভুলবেন না কখোনই। সেই আজির উদ্দিনের ছেলে যদি মুক্তিযোদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের নেতা হন, তখন আর কিছু বলার থাকে না।
অভিযোগ সম্পর্কে গোলাম কিবরিয়া হেলাল বলেন, আমার বাবা আজির উদ্দিন তখন চেয়ারম্যান ছিলেন ঠিক আছে এবং আমাদের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পও ছিল। কিন্তু আমার বাবা শান্তি কমিটির কেউ ছিলেন না। এরই মধ্যে সিলেটের ১৩ উপজেলায়ই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। কয়েকটিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনও হয়েছে। কিন্তু জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে রাজাকারপুত্রদের পদে রেখেই আগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা চলছে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জৈন্তাপুরের কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা বললেও পরে তা না ভেঙে পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজাকারের সন্তানদের কারণেই নাকি কমিটি ভাঙা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়, তা-ই বাস্তবায়ন করে জেলা কমিটি, এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।
সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জৈন্তাপুরের কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রস্তুতি কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদল হয়ে থাকলে আমি কিছু জানি না। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে জেলা নেতাদের কী আলোচনা হয়েছে, কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৫ সালে যেসব উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে, সেসব পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলা হয়েছে। রাজাকারের সন্তানদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজাকারের তালিকা কে করেছে, আমাদের তালিকায় তো নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের করা তালিকা রাণাঙ্গন-৭১ এর কথা বললে তিনি বলেন, সেটা গ্রহণযোগ্য না। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারের তালিকা করলেই তো হবে না। সেটা তো ভুলও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেক সদস্য এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের চালিকাশক্তি। তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরি করা রাজাকারের তালিকা সঠিক না-ও হতে পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তারা কীভাবে বুঝবেন কে রাজাকার।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd