বিএনপির পদত্যাগী নেতা সমশের মবিন চৌধুরী আবার দলে ফিরতে পারেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তিনি। শিগগির দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাবেক এই কূটনীতিক বিএনপিতে ফিরবেন বলে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

তাকে দলে ফিরিয়ে নিতে ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ নিয়েছেন সমশের মবিনের শুভাকাঙ্ক্ষী বিএনপির কয়েকজন নেতা।

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিএনপির সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন সমশের মবিন চৌধুরী। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লেখা পদত্যাগপত্র তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জমা দিয়েছিলেন তিনি। তখন সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা জানান সমশের মবিন। একইসঙ্গে রাজনীতি থেকেও অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তখন গণমাধ্যমকে বিএনপিতে জিয়াউর রহমানের আদর্শ কতটুকু আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

অবশ্য তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় হয়, বিএনপিকে দুর্বল করতে সরকারের চাপের মুখে সমশের মবিন দল থেকে পদত্যাগ করেন। তবে দলের ভেতরের খবর ছিল, সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপি নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছিলেন। বিশেষ করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না বলেও গুঞ্জন ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বিএনপি মহাসচিবের মাধ্যমে চেয়ারপারসন বরাবর দেওয়া সমশের মবিনের সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তখনই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো কয়েকজন সিনিয়র নেতা সমশের মবিন চৌধুরীকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন। অবশ্য সমশের মবিন তাতে রাজি হননি। তারপরও বিষয়টি বিবেচনা করতে তাকে অনুরোধ জানানো হয়। অবশেষে বরফ গলেছে। সমশের মবিন বিএনপিতে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বিএনপিতে তার যোগদান এখন সময়ের ব্যাপার।

অবশ্য বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, ‘সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগপত্রই গ্রহণ করা হয়নি। কাজেই তার বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরে আসার কিছু নেই। শুধু দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেই যথেষ্ট।’

সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির সহসভাপতির পদে থাকলেও মূলত দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করেন। বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি।

তৃণমূল বিএনপির নেতা কর্মীরা মনে করছেন শমশের মবীন চৌধুরী বিএনপির জন্য সু বার্তা নিয়ে দলে ফিরছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন আর্ন্তজাতিক ভাবে ‘গ্রিন সিগনাল’ নিয়ে তিনি দলে ফিরে আসছেন। কেউ কেউ মনে করছেন দলীয় গ্র“পিং নিয়ে দল থেকে পদত্যাগ’র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সব মিলিয়ে তার দলে ফেরাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা কর্মীরা। আর তৃণমূল বিএনপি তার দল ফেরাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সমশের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরির মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে তাকে সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়।