৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
জামিন না মঞ্জুর করে শিল্পপতি রাগী আলীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়।
এসময় সিলেট মহানগর অতিরিক্ত মূখ্য হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা তারাপুর চা বাগান দখলের দুটি মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে রাগীব আলীকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
দুটি মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে হলেও সিলেটের ডাক’ প্রকাশনা সংক্রান্ত আরেকটি মামলায় বিতর্কিত এই শিল্পপতিকে জামিন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে ভারত পালিয়েছিলেন। তব গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি সিলেটের আলোচিত-সমালোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী। ভারতেই গ্রেপ্তার হতে হলো তাকে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ৩ মাস ১৪ দিন পর বৃহস্পতিবার রাগীব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। অবৈধভাবে অবস্থানের দায়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর বিকেলে সিলেটের শেওলা শুল্ক স্টেশন দিয়ে রাগীব আলীকে বিডিআরের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষ করে সিলেট জেলা পুলিশের হাতে বিতর্কিত এই শিল্পপতিকে তুলে দেয় বিডিআর। সেখান থেকে সন্ধ্যায় প্রতারণামূলকভাবে তারাপুর চা বাগান দখলের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি ও প্রতারণা করে সিলেটের দুই হাজার কোটি টাকার দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান দখলের অভিযোগে দুটি মামলায় গত ১০ অগাস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরোয়ানা জারির দিনই গোপনে সপরিবারে ভারত পালিয়ে যান তারা। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়েই সপরিবারে ভারত পালান রাগীব আলী।
এছাড়া পরোয়ানা নিয়ে পলাতক থাকা অবস্থায় সিলেটের ডাকের প্রকাশক পদে থাকার ঘটনায় দায়েকৃত আরেকটি মামলায় পরোয়ানা জারি হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ১২ নভেম্বর এই সীমান্ত দিয়েই দেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
বিএসএফের আসাম অঞ্চলের আইজি পাওয়ান কুমার দুবে’র বারত দিয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা জানান, ১০ নভেম্বর রাগীব আলীর টানা ৯০ দিন ভারতে অবস্থানের মেয়াদ শেষ হয়। অতিরিক্ত ১৩ দিন অবৈধভাবে বসাবাসের পর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বৃহস্পতিবার সকালে করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন অফিসে হাজির হন তিনি। এসময় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে।
সিলেটের উপ মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পলাতক থাকা রাগীব আলী ভারতে আটক হয়েছেন সংবাদ পাওয়ার পরই তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের শেওলা শুল্ক স্টেশন দিয়ে দেশে আনার হয় রাগীব আলীকে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর শেওলা কোম্পানী কমান্ডার বাসুদেব চক্রবর্তী বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিএসএফ রাগীব আলীকে আমাদের হাতে তুলে দেয়। এরপর পরোয়ানাভ’ক্ত আসামী হওয়ায় আমরা রাগীব আলীকে পুলিশের হাতে তুলে দেই।
সীমান্তে ইমেগ্রিশেনের প্রক্রিয়া শেষে রাগীব আলীকে নিয়ে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ সিলেট আদালতে রওয়ানা হয় বলে বিকেলে জানিয়েছিলেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি চন্দন চক্রবর্তী।
তারাপুর চা বাগানসংক্রান্ত দুটি মামলার নথি থেকে জানা যায়, সিলেটের পাঠানুটুলা এলাকার দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই । ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে ৪২২ দশমিক ৯৬ একরের বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।
এ ঘটনার দায়েরকৃত দুটি মামলায় গত ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। অভিযোগপত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির ঘটনায় রাগীব আলী ও ছেলে আবদুল হাইকে আসামি করা হয়।
আর প্রতারণার অপর মামলায় রাগীব আলী, তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদিরকে আসামি করা হয়।
এই মামলায় পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে স্থায়ী জামিন দিয়েছে আদালত। অপরদিকে দেবোত্তোর সম্পত্তির কথিত সেবায়েত দেওয়ান মোস্তাক মজিদ ও রাগীব আলীপুত্র আব্দুল হাইকে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে আদালত। বৃহস্পতিবার রাগীব আলীও কারাবন্দি হলেন। বাকীরা এখনো পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির সুশেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে হাই কোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান রাগীব আলীর দখল করাকে প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে পুরো বাগান সেবায়েত পঙ্কজগুপ্তকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশনার পর গত ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। ২৬ বছর পর রাগীব আলীর দখলমুক্ত হয় তারাপুর চা বাগান। তবে এখনো বাগান দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D