৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২২
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য সিলেট। সিলেটের উত্তর পূর্বে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলা। এই উপজেলা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক জৈন্তাপুর ছিল জৈন্তা রাজার আধিপত্য।
সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মেঘালয়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর “লাল শাপলার” বিল নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। বিলগুলোর প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম।
আমাদের জাতীয় ফুল লাল শাপলার বিল ডিবির হাওর। প্রতিদিন একান্তেই ভোরে তার নিজ নিজ সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে ওঠে অপূর্ব অগণিত ফুল, তাদের সাথে দেখা করতে প্রতিদিন ভোর হওয়ায় সাথে সাথেই দলবেধে নৌকায় ভেসে বেড়ান অগণিত ভ্রমণপিয়াসু।
সাথে বাড়তি আকর্ষণ হলো হাওরের পাড়েই পাহাড়ের সারি। ভারতের মেঘালয়ের সেই পাহাড় যেন মনে হয় সৃষ্টির আরেক স্বর্গ।
যেহেতু শীতকাল তাই নানা ধরণের পাখির দেখাও পাবেন আপনি এখানে। প্রতিবছর অসংখ্য পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ভোরের লাল শাপলা,পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।
অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ইতিহাসও। স্বাধীন জৈন্তারাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল।
পৌরাণিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারতবর্ষের অধিকাংশ এলাকা তখন মোঘলসাম্রাজ্যের। তখনো জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হয়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের অনেক উল্লেখ আছে।
১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্দি করে সব লুট করে নেয় রাজা বিজয় সিংহের রাজ্য থেকে। এই রাজ্যেরই স্মৃতি বিজড়িত ডিবির হাওর। পরে সেখানেই তার সমাধিস্থল হয়ে ওঠে। তাছাড়া এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এক মন্দির। ইতিহাস থেকে জানা যায় জৈন্তার এক রাজাকে এখানে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্মৃতিতেই এই মন্দির তৈরী হয়।
কম খরচে যেভাবে যাবেন : ঢাকা, চট্টগ্রাম দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকেই যদি ঘুরে আসতে চান সিলেটের লাল শাপলার ডিবির হাওরে। তাহলে প্রথমেই আপনাকে বাস কিংবা ট্রেনে সিলেটে পৌঁছাতে হবে।
খুব সকাল পৌঁছানোর পর আপনাকে শাপলার মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে তখনই রওনা করতে হবে। কেননা রোদ ওঠার সাথে সাথে শাপলার আসল সৌন্দর্য্য লোপ পেতে থাকে।
সিলেট শহরে পৌঁছে আপনি শহরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ থেকে, উত্তর সুরমার সোবহানীঘাট কিংবা টিলাগড় পয়েন্ট থেকেও জাফলংগামী বাস পাবেন। বাসটি জৈন্তাপুর বাজার হয়ে যাবে। আপনাকে সেখানেই নামতে হবে। লোকাল বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই হবে।
তবে এই বাসে করেই আপনি বিজিবি ক্যাম্প লিখা নামক জায়গায় নামতে পারেন। রাস্তার বিজিবি ক্যাম্প লিখা সাইনবোর্ডের ডান পাশের রাস্তা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন লাল শাপলার বিল।
তবে খুব সকালে যেহেতু আপনি যাচ্ছেন, পথে খাবারের প্রয়োজন হলে আপনাকে জৈন্তা বাজারে নামতে হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপনাকে বাজারে থাকা টমটমযোগে চলে যেতে হবে ডিবির হাওরে। টমটম রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। তবে সিলেট থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে।
শাপলার বিলে পৌঁছে আপনাকে নৌকা ভাড়া করে পুরো বিলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে হবে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বহমান কাঁচা রাস্তা।
প্রশাসন কর্তৃক শাপলাবিল পর্যটক পরিচালনা কমিটি জৈন্তাপুর সিলেটকে দায়িত্ব দিয়ে। ডান এবং বাম দুই পাশ দিয়েই নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।প্রতি নৌকায় ১ ঘণ্টা সময় বেধে ভাড়া পরবে ৪০০টাকা।যাত্রী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬ জন।অতিরিক্ত সময় ঘুরলে ১ ঘণ্টা ঐ একই নৌকায় ২০০ টাকা।
তবে বাম পাশ দিয়ে গেলে আপনি লাল শাপলার সাথে বাড়তি সোন্দর্য হিসেবে একটি পুরনো মন্দির পাবেন সেই সাথে খুব কাছ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মিতালীর হাতছানিও পাচ্ছেন। মন্দিরে নেমে আপনি হাঁটতেও পারবেন কিছুক্ষণ। আর ডান পাশ দিয়ে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আপনি কেবল লাল শাপলার সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারবেন। তবে ডান পাশ দিয়ে গেলে বাম পাশের তুলনায় শাপলা বেশি পাচ্ছেন। কারণ মন্দির আর মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে বাম পাশ দিয়ে পর্যটকদের আনাগুনা বেশি থাকায় ডান পাশের উদিয়মান শাপলাগুলো দীর্ঘক্ষণ অক্ষত থাকে।
লাল শাপলার ডিভির হাওর সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেটের ট্যুরিজম উদ্যোক্তা ও টুরিস্ট গ্রুপদের মধ্যে অন্যতম ট্রাভেলার্স অব সিলেট এর ফাউন্ডার শফি মোহাম্মদ বলেন, সিলেট ভ্রমণের মূল সিজন বর্ষাকাল হলেও শীতের সিজনে ডিবির হাওর ভ্রমণ প্রেমিদের জন্য বিশাল টুইস্ট | কারন তখন ফুলে ফুলে লাল হয়ে যায় জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন কুয়াশার চাদরে মোড়া লাল শাপলার এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, তবে এ স্পটের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মেইন রোড থেকে নৌকা ঘাট পর্যন্ত কাঁচা মাটির রাস্তা ,যা দিয়ে চলাচল করা কষ্ট । কাঁচা রাস্তা পাকা সহ, সেই সাথে পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে সরকারি উদ্যোগে পাবলিক টয়লেট নির্মানের দাবী জানান।
ভোরে নৌকায় ভেসে ভেসে দেখবেন অপরূপ লাল শাপলা, দূরের পাহাড়, সোনালি আকাশ সাথে পাখির কিচির মিচির। এ যেন পৃথিবীর এক টুকরো স্বর্গ রাজ্য।
শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন, তবে চেষ্টা করবেন আপনার দ্বারা এ সৌন্দর্য্য যেন নষ্ট না হয়। আসার পথে সময় থাকলে বাড়তি হিসেবে আপনি দেখে আসতে পারেন জৈন্তাপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী ও সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র।
এগুলো আপনার আসার পথেই পাবেন।
লেখক : উত্তম কাব্য
(সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী)
SR
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D