সচিবের স্ত্রীর সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে মহাবিপাকে সেই কর্মচারী

প্রকাশিত: ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৩, ২০১৬

সচিবের স্ত্রীর সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে মহাবিপাকে সেই কর্মচারী

govt-logo-md20151012181038_131481সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজে ইতিপূর্বে ‘সচিবের স্ত্রীর সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে বিপাকে এক কর্মচারী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো। প্রতিবেদনটি পাঠক মহলে বেশ নজর কেড়েছিলো। তবে প্রতিবেদনে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সচিবের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ায় অনেক পাঠকই হতাশ হয়েছেন।
কারণ, এতে পাঠকের জানার তৃষ্ণা মেটেনি। মৌখিকভাবে অনেকে জানতে চেয়েছিলেন, কে এই সচিব। শীর্ষ কাগজ কর্তৃপক্ষ পরিচয় প্রকাশ করেননি। কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, সচিব এবং তার স্ত্রী এতে সতর্ক হবেন। ভুল শুধরে নেবেন। কিন্তু না, দেখা গেলো তাদের বোধোদয় ঘটেনি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেলো, সচিবের স্ত্রী সেই কর্মচারীর কাছ থেকে নেয়া ঘুষের অর্থ ফেরত দেননি। বরং সেই কর্মচারী এখন আরো বড় বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। কারণ, সাবেক এই সচিব সম্প্রতি বিদেশে পোস্টিং পেয়েছেন। পরিবার নিয়ে শিগগিরই বিদেশ চলে যাবেন। ফলে ঘুষের অর্থ ফেরত পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
কর্মচারীটি আবাসন পরিদফতরের। উপসচিব পদে থাকাকা এখানে এক সময় পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন এই সচিব। ওই কর্মচারীর সরাসরি বস ছিলেন। আবাসন পরিদফতরে থাকাকালে উপসচিব (পরবর্তীতে সচিব) এবং উপসচিবের স্ত্রীর সঙ্গে এ কর্মচারীর সরাসরি অর্থের লেনদেনের সম্পর্ক ছিলো। নানান তদবিরের কাজ করিয়েছেন বসকে দিয়ে। বর্তমান সরকারের আমলে সেই উপসচিব পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। জনপ্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দফতরের সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনপ্রশাসনের সচিব থাকাকালে পূর্বের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় সচিবের বাসায় আসেন আবাসন পরিদফতরের সেই কর্মচারীটি। সচিবের স্ত্রী তাকে তদবির নিয়ে আসতে বলেন। প্রথম দফায় একটি ছোট তদবির নিয়ে যান। তদবিরটি ছিলো সচিবের মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি দফতরের একজন কর্মচারীর বদলি সংক্রান্ত। তদবিরটি ছোট ধরনের, তাই ঘুষের অংকও কম। যথাসময়ে তা সম্পন্ন হয়ে যায়। অর্থের লেনদেন অবশ্য আগেই হয়েছিলো।
সচিবের স্ত্রী আরো বড় তদবির নিয়ে আসতে পরামর্শ দেন। ফলে দ্বিতীয় দফায় প্রশাসনের এক কর্মকর্তার পদোন্নতির তদবির নিয়ে আসেন এই কর্মচারী। বাসায় গিয়ে সচিবের স্ত্রীর হাতে নগদ চার লাখ টাকা তুলে দেন। কাজ হয়ে যাবে আশ্বাস দেন সচিবের স্ত্রী। কিন্তু, কাজটি আর হয় না। সচিব অবশ্য চেষ্টাও করেছিলেন কাজটি করে দেওয়ার জন্য। পদোন্নতির প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে ওই কর্মকর্তার নাম ছিলো বলেও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ পদোন্নতি প্রত্যাশী ওই কর্মকর্তা। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তা আটকে যায়।
সচিবের স্ত্রী আশ্বাস দেন পরবর্তী দফায় এই কর্মকর্তার পদোন্নতি অবশ্যই হবে। কিন্তু, দ্বিতীয় দফায়ও একই পর্যায়ে গিয়ে তা আটকে যায়। এইভাবে দুই দফার উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ হওয়ার পর পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তা হতাশ হন। তার মতে, সচিব ততটা সিরিয়াস ছিলেন না। সিরিয়াস থাকলে চূড়ান্ত পর্যায়ও অতিক্রম করতে পারতেন। শুধুমাত্র সচিবের সিরিয়াসনেসের অভাবেই পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন। অন্য বড় কোনো ত্রুটি ছিলো না তার।
যাহোক, পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাটি তদবির সম্পন্ন হচ্ছে না দেখে টাকা ফেরত চাইলেন ওই কর্মচারীর কাছে। ফলে তিনি টাকা ফেরতের জন্য কর্মচারীর ওপর চাপ দিলেন। কর্মচারী সচিবের স্ত্রীর কাছে গেলেন। সচিবের স্ত্রী আশ্বাস দিলেন, টাকা দিয়ে দেবেন। কবে পাওয়া যাবে, এ প্রশ্নের জবাবে সচিবের স্ত্রী তাকে পরের সপ্তায় ফোন করতে বললেন। কিন্তু, পরের সপ্তায় ফোন করে আর তাকে পাওয়া গেলো না। সচিবের স্ত্রী ফোন ধরেন না। মহা টেনশনে পড়ে গেলেন এই কর্মচারী।

একদিকে পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তার টাকা ফেরতের তাগাদা, অন্যদিকে সচিবের স্ত্রী ফোনই ধরছেন না। অবশেষে বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে যোগাযোগ ছাড়াই সচিবের স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সাক্ষাত পাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, ভবনের গেটের দারোয়ান প্রথমে বলেন, ম্যাডাম আছে। তবে ইন্টারকমে অনুমতি নিতে হবে।

দারোয়ান ইন্টারকমে কথা বলার পর বললেন, ম্যাডাম তো বাসায় নেই। আপনি পরে আসুন। এভাবে আরো কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করলেন। বেপরোয়া হয়ে অবশেষে একদিন দারোয়ানকে ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। কলিং বেল টিপলেন। ভেতর থেকে নারী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করা হলো, কে? কর্মচারীটি গলার আওয়াজে বুঝতে পারলেন, সচিবের স্ত্রী। তাই বললেন, ম্যাডাম আমি—। তার পরিচয় পাওয়ার পর ভেতর থেকে কণ্ঠ পরিবর্তন করে বলা হলো, ম্যাডাম বাসায় নেই। পরে আসুন। কী-ইবা আর করা? সিনক্রিয়েট করতে গেলে নিজেই এখানে বিপদে পড়বেন। হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলেন।

জানা গেছে, এই কর্মচারীর টেনশন এখন আরো বেড়েছে। অর্থ ফেরত দিবেন কীভাবে? ধার করে এনে সেই কর্মকর্তাকে দুই দফায় মোট এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। বাকি তিন লাখ টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। ইতিমধ্যে অনেকদিন পার হয়ে গেছে। ওই কর্মকর্তার পক্ষ থেকেও চাপ বাড়ছে। কোথা থেকে এই টাকা ম্যানেজ করবেন, চোখে পথ দেখছেন না।

এদিকে সচিবের স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকছে না। কারণ, একেতো তিনি ছিলেন সচিবের স্ত্রী, এখন আবার একেবারে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই চলে যাচ্ছেন!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল