সাত খুনের মামলায় নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসি

প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭

সাত খুনের মামলায় নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দায়ে প্রধান আসামি নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন র‌্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা। দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জন আসামির মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আর বাকি ১২ জন পলাতক। আসামিদের মধ্যে ১৭ জনই র্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলাকে একটি হিসেবে গ্রহণ করে রায় দেন আদালত। সংক্ষিপ্ত রায়ে শুধুমাত্র আসামিদের সাজা ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলে জানান বিচারক।

সকাল দশটা ০৩ মিনিটে আদালতের এজলাসকক্ষে আসন নেন বিচারক। নয়টা ৫০ মিনিটে গ্রেফতারকৃত ২৩ আসামিকে আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ার লোহার খাঁচায় এনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে এবং নূর হোসেনসহ ৫ জনকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ থেকে আদালতে আনা হয়।

রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন র‍্যাবের সদস্য। আর মামলার শুরু থেকেই র‍্যাবের সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি পলাতক।

এ মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার আছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন র‌্যাবের সদস্য। তারা হলেন চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর। কারাবন্দী অন্য আসামিরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)।

এছাড়া র‌্যাব-১১-এর সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।

সোমবার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, এজন্য নারায়ণগঞ্জ আদালতসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান, পুলিশভ্যান ও প্রিজনভ্যান।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত বাকিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর ১১ মে আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

১১ মাস তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র‌্যাব-১১-এর সাবেক ২৫ জন কর্মকর্তা-সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। এরপর প্রায় সাত মাসে ৩৮ কর্মদিবস মামলার বিচারকাজ চলে। গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল