৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৬
আগস্ট ১৯, ২০১৬:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়
৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিচক্র শিশুপুত্র রাসেলসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবিুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাঙালি জাতির ইতিহাসের ঠিকানা ধানমণ্ডির বাড়িটিতে তখন ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর বুলেটবিদ্ধ দেহই লুটিয়ে পড়ে থাকেনি, স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধূদের রক্তাক্ত লাশের স্তুপ। বুলেটবিদ্ধ বাড়িটিতে নিহত গৃহবধূদের হাতের মেহেদীর রঙ তখনো মুছে যায়নি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাদাকে হত্যা করা হয়েছে, নাতি সুকান্তবাবুসহ। আরেকদিকে শেখ ফজলুল হক মণিকে অন্ত:সত্তা স্ত্রী আর্জু মণিসহ ব্রাসফায়ার করে হত্যা করা হয়।
একদল খুনি উন্মত্ত হিংস্রতায় পরিবার-পরিজনসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেছে। সেই কালোরাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ঢাকায় সেই রাতে কর্ণেল জামিল বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। আর কেউ বাঁচাতে যাননি তাকে। খুনিদের বিভৎস উল্লাস নৃত্যে শোক বিহ্বল গোটা জাতি ছিল স্তম্ভিত। একদল বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাকচক্রের সঙ্গে মিলিয়েছিলেন কালো হাত।
এদিকে সে রাতে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জামাতা ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়া, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ঢাকায় মহাপ্রলয় ঘটে গেছে। সেখবর তখনো রাষ্ট্রদূত সানাউল হক জানেননি। ভোররাত পর্যন্ত মুজিব কন্যাদের আন্তরিক আতিথেয়তা দিতে কার্পণ্য করেননি। তাদের অনুরোধ করেছিলেন, এবার যেন কয়েকটা দিন সবাই তাদের বাড়িতে থাকেন। কিন্তু যখন খবর পেলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবার-পরিজনসহ নিহত হয়েছেন, খুনি মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তখন চোখ পাল্টে ফেললেন সানাউল হক। পারলে রাস্তায় বের করে দিতে চান। কিন্তু জার্মানীতে তখন রাষ্ট্রদূত ছিলেন মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। টেলিফোন করলেন, ব্র্যাসেলসের সানাউল হকের কাছে অনুরোধ করলেন; বঙ্গবন্ধুর জীবীত কন্যাদের তার কাছে পাঠিয়ে দিতে। সানাউল হক এসব জামেলায় তাকে না জড়াতে বললেন। শেষ পর্যন্ত দূতাবাসের গাড়িতে জার্মান সীমান্তে পৌঁছে দিতে বললেন, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। বঙ্গবনধুর কন্যাদের সেই দু:সময়ে জার্মান এনে আশ্রয় দিয়ে চাকরি ও জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। জার্মান প্রবাসী জাসদ কর্মীরা তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পরবর্তীতে তার এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেছেন, সানাউল হক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘আমাকে কেন এসব জামেলায় জড়াচ্ছেন? আমি এসব জটিলতায় পড়তে চাই না।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ঢাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া এর আগে একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে পড়তে গিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গেই জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তান জয় ও পুতুল। আগস্টে ওয়াজেদ মিয়া কয়েকদিনের ছুটি পান।
এদিকে শেখ রেহানা ৩০ জুলাই বেড়াতে যান শেখ হাসিনার কাছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট ওয়াজেদ মিয়া সবাইকে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বেলজিয়াম বেড়াতে যান।
এ বিষয়ে বিভিন্ন বই ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার বেলজিয়াম বেড়াতে যান তখন সানাউল হক ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। তার বাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ওইদিন রাত তিনটা পর্যন্ত সানাউল হকের স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে আড্ডা চলে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার।
শেখ রেহানা তার এক স্মৃতিচারণে এ সম্পর্কে বলেন, রাত তিনটা পর্যন্ত সানাউল হকের মেয়ে ও অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন আর জোরে জোরে হাসছিলেন শেখ রেহানা। এসময় ওয়াজেদ মিয়া বারবার এসে আস্তে হাসার জন্য বলেন। রাত তিনটার দিকে এসে ওয়াজেদ মিয়া শেখ রেহানাকে বলেন, এত হাসাহাসি করা ভালো না। বেশি হাসলে সারাজীবন কাঁদতে হয়। সেদিন সানাউল হক তাদের কিছুদিন বেলজিয়ামে তার বাড়িতে থাকার জোর অনুরোধও করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যান এই রাষ্ট্রদূত।
জানা গেছে, সানাউল হককে খুব স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন।
হুমায়ুর রশীদ চৌধুরী তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর সবার আগে পৌঁছেছিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে। ওয়াশিংটন সময় বিকেল ৩টা। লন্ডনে তখন রাত ১২টা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর দেশের বাইরে যেসব বাংলাদেশি কূটনীতিক পান তাদের মধ্যে লন্ডন মিশনের কূটনীতিকরা অন্যতম। লন্ডন মিশনের খবর পেয়ে ফারুক চৌধুরী খুব ভোরে এই দুঃসংবাদটি জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে জানান। তার ধারণা ছিল- ড. ওয়াজেদ মিয়া তার পরিবার নিয়ে এ সময় জার্মানিতে অবস্থান করছেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী খবর পেয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সানাউল হককে ফোন করেন এবং ফারুক চৌধুরীর কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ তাকে জানান এবং শেখ হাসিনা ও অন্যদের জার্মানির সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী লিখেছেন, সানাউল হক তাতে রাজি হলেন না। তিনি আরও লিখেছেন, সানাউল হকের কথায় মনে হচ্ছিল- তিনি শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের পারলে তখনই বাড়ি থেকে বের করে দেন। সেই সানাউল হক পরবর্তীকালে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন।
চল্লিশের দশকের একজন খ্যাতিমান কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন সানাউল হক। ১৯২৪ সালের ২৩ মে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার চাউরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম আল মামুন সানাউল হক। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া অন্নদা স্কুল থেকে ম্যাট্টিক (১৯৩৯), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ (১৯৪১) এবং ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স (অর্থনীতি) ও ১৯৪৫ সালে এমএ পাস করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে আইনবিদ্যালয় বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালের ২৯ নভেম্বর সানাউল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এরপরই তিনি সরকারি চাকরি শুরু করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D