৮ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
মানবতা অামাদের ধর্ম। কিন্তু যেই মানবতা রক্ষার্থে সমগ্র জাতির হুমকির মুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটি রক্ষা না করাটাই শ্রেয়। অামাদের জাতীয় এবং অান্তর্জাতিক অবস্থান থেকে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই। মিয়ানমারে সে দেশের ক্ষুদ্র এথনিক গ্রুপ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যা চলছে তা সাধারণত কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার একটি উপায়। রোহিঙ্গা এথনিক গ্রুপটির ওপর এ হত্যা, নির্যাতন ও রেপ চলছে কয়েক দশক ধরে। ফলে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বৈধ ও অবৈধ শরণার্থী হিসেবে আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ এমনিতেই দরিদ্র ও জনঘনত্বপূর্ণ দেশ। রোহিঙ্গারা এখানে শুধু আছে তা নয়, তাদের একটি অংশ বাংলাদেশের সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে । ব্যক্তিস্বার্থীয় কিছু মহল রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহি কাজে। এছাড়াও বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বহিঃদেশে গমন, ইয়াবা ব্যবসা সহ অারো বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে এরা নানাভাবে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ এক গভীর সমস্যায়। অন্যদিকে প্রায় ১৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবস্থান করছে, যাদের অবস্থা করুণ। একটি লিখা হতে দেখলাম বার্মার সেনাবাহিনীকে এক অলিখিত নির্দেশ দেয়া আছে যে, তারা যত খুশি রোহিঙ্গা মেয়েদের রেপ করতে পারবে। যেমনটি নির্দেশ ছিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মিদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য এথনিক গ্রুপ বদলে ফেলা । অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের ওখানে যত ভাবে পারা যায় সব পথে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে ।রোহিঙ্গারা আরকান রাজ্যেরই বাসিন্দা। তাই তাদের সমস্যা তাদের সেখানে বাস করতে দিয়েই সমাধান করতে হবে। অনেকে দেখছি সুচিকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেন, অনেকে অাবার সুচির নোবেল নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। অামি বলি নোবেল কি গাছে ধরে? সামরিকতন্ত্রের বিপক্ষে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য সুচি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। মিয়ানমারে গণতন্ত্র রিসেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন সুচি। তাই এই মুহুর্তে সুচিকে মিয়ানমারের গণতন্ত্র রক্ষায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে । সুচি রোহিঙ্গা সমস্যাসহ সব সমস্যা সম্পর্কে বলেছেন, বাস্তবে দীর্ঘস্থায়ী এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য সকলকে একটা কম্প্রোমাইজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। অাবার সুচি যে অনেক সমস্যায় এটি নিয়ে দ্বিমতের কোন কারণ নেই। কারণ সামরিক শাসনোত্তর দেশে এটাই স্বাভাবিক। অামাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিজ্ঞ শেখ হাসিনাই একসময় সুচিকে বলেছিলেন, তুমি ওভারনাইট সব কিছু পাবে না। সুচিও সেই পথ ধরেছেন। মিয়ানমার সংবিধানের ৫৯ (এফ) সাসপেন্ড করে সুচি সহজেই সে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেন নি । যদি তিনি এমনটি করতেন তাহলে মিয়ানমারে থাইল্যান্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে সময় লাগতো না। এতে সুচির আলো নিভে গেলে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার। তাই এখন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর দায়িত্ব সুচিকে তিরস্কার করা নয়, কীভাবে তিনি শক্তিশালী হয়ে মিয়ানমারে এমন গণতন্ত্র আনতে পারেন যাতে কেউ আর রাষ্ট্র দ্বারা নির্যাতিত হবে না, বহিষ্কৃত হবে না সে কাজ করতে পারেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান অামিও চাই তাই বলে অন্য দেশের সীমান্ত খোলা কেন? মিয়ানমারে মুসলিম ভাইদের অধিকার ফিরিয়ে অানা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী যাবে। বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে একটি স্পেশাল ফোর্স গঠন করা যেতে পারে, যা মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিভিন্ন মুসলিম দেশের মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতদের সাময়িক বহিষ্কার করা যেতে পারে। অন্য দেশের বর্ডার খুলে দেয়া এই সমস্যার পারফেক্ট সমাধান হতে পারে না। সাময়িক নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। অনেকে অাবার দেখলাম রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে গালিগালাজ করছেন। অামি বলি মাথায় কি কিছু নেই? বাংলাদেশ কি রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য কম করছে? কিছুদিন অাগে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব অাসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন যে, বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে তাদের প্রতি যেন অবশ্যই সহানুভূতিশীল অাচরণ করা হয়। বিজিবি মহাপরিচালকের মুখেও একই কথা। এখন যদি ১৪ লাখের জন্য বর্ডার খুলে দেয়া হয়, তাহলে প্রথমত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়ত কিছুদিন পরে অামাদের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠতে পারে। তাই সকলের প্রতি অামার অাবেদন দয়া করে সমস্যাটিকে এক চোখ দিয়ে দেখবেন না। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। জাতিসংঘের প্রতি অাবেদন অন্য দেশের বর্ডার খুলে নয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এবং পরিশেষে অামার রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদের অধিকার এবং মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে অানার জন্য মহান অাল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D