সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী যাবে কোথায়?

প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০১৬

সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী যাবে কোথায়?

HSC_pssএ বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষায় (এইচএসসি) উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান আসন সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখেরও কম। বাকি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিতে হলে ৩ লাখ ৭০ হাজার আসন বাড়াতে হবে। যা  রাতারাতি  সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে তিন লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বিদ্যমান আসনের জন্য জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকেই ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হবে। এতে প্রথমেই হোঁচট খেতে হবে অন্য গ্রেডে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা মাত্র ৫৪ হাজার। অপরদিকে এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৮ হাজার। এর সঙ্গে রয়েছে গত বছর চান্স না পাওয়া শিক্ষার্থীরাও। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লক্ষ্য রেখেই মূলত শিক্ষার্থীরা ভর্তির প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় একটি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে কয়েক ডজন। ফলে প্রায় দেখা যায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সূত্রে জানা গেছে, গতবছর প্রতিষ্ঠানটিতে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তিচ্ছুদের জন্য আসন ছিল ৬,৬০০টি। এর বিপরীতে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ২ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি অনুষদে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু ছিল ৪০-৪৫ জন।  উল্লেখ্য, এবার ঢাবিতে ২০০ আসন বাড়ানো হয়েছে।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানিয়েছেন, এবার ৬,৮০০টি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হবে।

তার মতে, শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবছরই এরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। তবে তিনি মনে করেন উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চান্স না পেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলা কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও মনে করেন শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে না পারলেও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না। মন্ত্রীর ভাষ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজে কয়েক লাখ আসন আছে। তাই শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তি হতে পারবে। নাহিদের দাবি, বিশ্বের কোথাও সব শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫৭ জনের জিপিএ ৪ থেকে বেশি কিন্তু ৫ এর কম। আর ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৪ জনের জিপিএ ৩.৫ থেকে বেশি কিন্তু ৪ থেকে কম। প্রকাশিত ফলাফলই আভাস দিচ্ছে এ বছর লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

সরকার ও শিক্ষাবিদরা উচ্চশিক্ষার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলোর বিশাল সংখ্যক আসনের কথা বললেও বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। সেখানে ব্যর্থ হলে তবেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে পা বাড়ায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রশ্নবিদ্ধ মান এবং মাত্রাতিরিক্ত টিউশন ফি’র কারণে শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী থাকে না। পাশাপাশি কলেজগুলোতে চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ে আসন সংখ্যা সীমিত। ফলে, সরকার যতই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমুলা বের করুক না কেন তা খুব একটা কাজে আসে না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের অধীনে থাকা ৬৮৫ টি  কলেজে  ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে  অনার্স প্রথম বর্ষের জন্য  আসন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৩টি। তবে এবছর কয়েকশ আসন বাড়তে পারে।

অন্যদিকে, দেশে  বর্তমানে  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫ টি। এর ৮-১০টি এখনও কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু  চলমান জঙ্গি ইস্যু, উচ্চ টিউশন ফি আর শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তো প্রতিবছরই অর্ধেকের বেশি আসন ফাঁকা থাকে। পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ৬০ হাজার আসন।

এসবের বাইরে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য মেডিকেল কলেজগুলোতে। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজেও আসন সংখ্যা সীমিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৩০টি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ২১২টি ও বেসরকারি ৬৯টি মেডিকেলে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২০৫টি। আর একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজে ও ৮টি ডেন্টাল ইউনিটে মোট আসন আছে ৫৩২টি। এছাড়া ২৫টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৫টি। অর্থাৎ এ বছর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রে ভর্তির আসন সংখ্যা ১১ হাজার ৩৩৪টি।

অর্থাৎ উত্তীর্ণ প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থীর বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান আসন সংখ্যা ৫ লাখ ৩০ হাজারেরও কম। তাই নিশ্চিত করে বলা যায়, এইচএসসিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ লাখ ৭০ হাজার জনের উচ্চ শিক্ষার বিষয়টি অনিশ্চিত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল