সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি

প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০১৬

সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি

নিজস্ব প্রতবেদক:  

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, সিলেট ও জেলা পরিষদ নির্বাচন:
এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি, তবু দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে।

সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি নবীন অনেকের নামও আলোচিত হচ্ছে। তবে এদের সকলেই তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। কেন্দ্রকে সন্তুষ্ট করে দলীয় সমর্থন নিয়ে আসার জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনম শফিকুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী।

এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমেদ আল কবীর, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী। এসব নেতারা দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারগ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করবো।

দলের গ্রিণ সিগন্যাল পেলে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে জানান লুৎফুর রহমান।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনম শফিকুল হকও মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে বলেন, শুভাকাক্ষীরা আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন, নেত্রীর সাথে আলাপ করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে প্রার্থী হতে বলছেন। দলের মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবো।

গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন তাঁর প্রতি আছে জানিয়ে ইকবাল চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, দলের জন্য দীর্ঘ ত্যাগের কথা বিবেচনা করে দল তাকে মূল্যায়িত করবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, নেত্রীর নির্দেশ মেনে বিগত সংসদ নির্বাচনে আমি প্রার্থী হইনি, এখনও জেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রী নির্দেশ দিলে প্রার্থী হব।

এছাড়াও এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরীকে তাদের প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিত করে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান।
এছাড়াও মাঠে কাজ করছেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), সিলেট ও জেলা পরিষদ নির্বাচন:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিগত সিলেট সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সাফল্যের পাল্লাও ভারি ছিলো বিএনপির।

সিলেটে স্থানীয় সরকারের এ ৪টি স্তরে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন সিলেটের জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয় ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। যদিও দলগত ভাবে বিএনপির আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন দলটির স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা।

আসন্ন এ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এমএ হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জজ কোর্টের সাবেক পিপি এডভোকেট আব্দুল গফফার, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নাম শোনা যাচ্ছে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হিসেবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মতো কোনরকম ঢালাও প্রচারণায় নামেননি কেউ।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জজ কোর্টের সাবেক পিপি এডভোকেট আব্দুল গফফারের কাছে জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, দলে আমার কোন মূল্যায়ন না থাকায় আমি বর্তমানে দলের সংস্পর্শে নেই। পারিবারিক ও আত্মীয় স্বজনদের চাপ রয়েছে নির্বাচন করার, সে জন্য নির্বাচন করবো।

দল নির্বাচনে সমর্থন জানালে বড় বড় প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। ব্যক্তিগত ভাবে ভোটারদের বেশীর ভাগেই আমাকে চেনেন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি আমার রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, দলগত ভাবে বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জালিয়াতি ও প্রশাসনিক সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা অনেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনাসহ বিভিন্ন কারচুপির ঘটনা ঘটেছে, সে কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। এর বাইরে কেউ যদি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে জানান তিনি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, আমরা দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। দলগত ভাবে সিলেট জেলায় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপির ভোটারদের সংখ্যা বেশী রয়েছে। তবে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পেলে আমরা নির্বাচনে যেতে পারছি না।

আগামী ডিসেম্বরে দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । তবে সাধারণ ভোটার নয়, কেবল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য।

স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে ৫ জন নারী সদস্য।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল