সিলেট ২রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৬
লোকবল সংকটে জর্জরিত সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ। শিক্ষকের অভাবে এক যুগেও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা যায়নি। মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে এই কোর্স চালু থাকলেও সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম শিক্ষক।
এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ে যথাক্রমে ন্যূনতম ৭ জন ও ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এই কলেজে পদই মঞ্জুর হয়েছে ৫ থেকে ৬টি। এর মধ্যে আবার কোনো কোনো বিষয়ে সর্বোচ্চ ৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
শুধু শিক্ষক নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও লোকবল সংকট রয়েছে এখানে। বিজ্ঞানের চারটি বিষয়ে কোনো প্রদর্শক (ডেমনস্ট্রেটর) নেই। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ দুটিও। এ ছাড়া একমাত্র ছাত্রীনিবাসে স্থায়ী কোনো কর্মচারী না থাকায় ছাত্রীদের টাকাতেই কর্মচারী রেখে প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে।
১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে বর্তমানে ৯ হাজার ৩৬১ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছেন। উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি (পাস) কোর্স ছাড়াও আটটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ইতিহাস, দর্শন ও ইসলামের ইতিহাস) স্নাতক (সম্মান) এবং ইতিহাস ছাড়া অপর সাতটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হচ্ছে।
দর্শন বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, কলেজটিতে সাতটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু থাকলেও তিনটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি ও অর্থনীতি) শিক্ষকের পদই মঞ্জুর হয়েছে ছয়জন করে এবং চারটি বিষয়ে (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, দর্শন ও ইসলামের ইতিহাস) পাঁচজন করে। তবে এসব মঞ্জুরি করা পদের বিপরীতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি শূন্য পদ। এর মধ্যে বাংলায় তিনটি, দর্শনে একটি ও ইসলামের ইতিহাসে তিনটি। এর বাইরে গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ বিজিত কুমার ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক বছর আগে মন্ত্রণালয় একটি নতুন নীতিমালা করেছে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ই সব কলেজের তথ্য নিয়ে স্ব-উদ্যোগে নতুন পদ সৃষ্টি করবে। তাই আবেদন করে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই। তিনি বলেন, শুরু থেকেই মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হলেও শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞান বিভাগে আজ পর্যন্ত এই কোর্স চালু করা যায়নি।
কলেজটিতে বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে বিএসসি (পাস) কোর্স চালু হয়। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ে চারজন করে শিক্ষকের পদ মঞ্জুর হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি। উচ্চমাধ্যমিকের দুই শিক্ষক দিয়েই বিএসসির শ্রেণি কার্যক্রম চলছে।
কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও ২০১১ সালে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। বিজ্ঞান বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। রসায়ন, পদার্থ ও উদ্ভিদবিদ্যায় দুজন করে এবং প্রাণিবিদ্যায় একজন শিক্ষক আছেন। তাঁদেরই নিয়মিত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি সেকশনের ক্লাস নিতে হয় এবং বিএসসির (পাস) তিন বর্ষে পাঠদান করাতে হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে তাঁরা দিশেহারা।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি পিরিয়ডে আমাকে কোনো না কোনো ক্লাস নিতে হয়। এর বাইরে প্রদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি থাকে সারাক্ষণ।’
কলেজের একমাত্র ছাত্রীনিবাসে আসনসংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলে ছাত্রীরা জানিয়েছেন। ছাত্রীনিবাসে আসনসংখ্যা ৩২০ জনের। কিন্তু বাস করছেন ৫০০ জন। গাদাগাদি করে থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া হোস্টেলটিতে স্থায়ী কোনো কর্মচারী নেই। ছাত্রীদের টাকায় ১৪ থেকে ১৫ জন অস্থায়ী কর্মচারী রেখে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি ছাত্রীদের টাকাতেই হোস্টেলের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। ছাত্রীনিবাসের আসন সংকটের কথা স্বীকার করে এর সুপার ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জামালুর রহমান বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আসন কম। তাই সমস্যা লেগেই থাকে। প্রতিবছর গড়ে ৩৫০ জন ছাত্রী আবাসনসুবিধা চেয়ে আবেদন করলেও এর মধ্যে আসন পাচ্ছেন মাত্র ১২০ থেকে ১২৫ জন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd